বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
ঢাকা: গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে টানাটানিতে বর্ষার পানিতে ডুবতে বসছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হাসপাতাল!দুই পক্ষের কাছে সমস্যার সমাধানে বারবার ধরণা দিয়েও কোনো সমাধান মিলছে না দাবি হাসপাতালটির কর্তাব্যক্তিদের।
আগারগাঁও হয়ে মিরপুরে যাওয়ার মূল সড়ক অর্থাৎ বিসিএস কম্পিউটার সিটির পাশ থেকে একটু ভেতরে গেলেই দেখা যাবে রাস্তায় জমে আছে নোংরা পানি। রাস্তার ওপরেই ময়লার স্তুপ। পাশেই রিকশার ভাসমান গ্যারেজ। এসব পার হয়েই ঢুকতে হবে ৫০ শয্যার প্রবীণ হাসপাতালটিতে। তবে ভেতরের পরিবেশ বেশ ভালো।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসূম শুরুর হলেই হাসপাতালটির সামনের সড়কটি বর্ষার পানি আর ময়লার দখলে চলে যায়।
এবারের পরিস্থিতি বেশি খারাপ।ফলে আগের মতো প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসার নিতে সাধারণ মানুষ আসছেন না।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (বাইগাম) কর্তৃক পরিচালিত হয় আগারগাঁওয়ে অবস্থিত হাসপাতালটি।
সংঘের মহাসচিব ড. এ এস এম আতীকুর রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে বারবার গণপূর্ত ও সিটি করপোরেশনের কাছে আমরা সড়কটি সংস্কারের আবেদন করেছি। সবাই দেখছি দেখছি করছে কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই।”
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, রাস্তাটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের।তাই তাদের কাছে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত কিছু করার নেই। কিন্ত বারবার বলার পরও গণপূর্ত অধিদপ্তর হস্তান্তর করছে না।
সদ্য বদলি হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণব কুমার ঘোষ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রবীণ হাসপাতালের সামনের সড়কসহ আগারগাঁও এলাকায় দশটি রাস্তা গণপূর্ত অধিদপ্তরের। বারবার এগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য বললেও তারা না দেয়ার কারণে সিটি করপোরেশন কাজ করতে পারছে না। হস্তান্তর হলে যতদ্রুত সম্ভব সমাধান হতে পারে।”
অন্যদিকে প্রবীণ হাসপাতালের সামনের সড়কসহ ওই এলাকার বাকি সড়কগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের জটিলতার কারণে জলাবদ্ধতার সমাধান হয়নি বলে দাবি করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক (প্রকৌশলী) আবদুল মোমেন চৌধুরী বুধবার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত পরশু সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বিষয়টির সমাধানের জন্য এসেছিলেন।আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে সড়কগুলো হস্তান্তর করা হবে। তখন সিটি করপোরেশন সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবে।”
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের ১০ এপ্রিল মরহুম অধ্যক্ষ ডা. একেএম আবদুল ওয়াহেদ এ দেশের সর্বস্তরের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করার লক্ষ্যে ঢাকার ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে স্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ নামের সংগঠনটি। এ দেশে এটিই প্রথম ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল শুধুই প্রবীণদের কল্যাণে সুদূর প্রসারী কাজ করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ কর্তৃক ঢাকার আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরে একটি প্রবীণ নিবাস, একটি প্রবীণ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন(আইজিএম) পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়াও এ সংগঠনটি ৫৯টি শাখার মাধ্যমে দেশের ছয়টি বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা ধরনের সেবা দিয়ে আসছে।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ফটকে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় কয়েকটি আস্ত ইট দিয়ে রাখা হয়েছে। তার ওপর দিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের হাসপাতালে ঢুকতে হচ্ছে।
একটু সামনে এগিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা সরকারি কর্ম কমিশনের যেতে চাইলে তার উপায় নেই। কারণ সড়কটির দক্ষিণ পাশ পুরোটা পানির নীচে। বেশকিছুদিন ধরে পানি জমে থাকায় মশার উপক্রম বেড়েছে। ময়লা আবর্জনার কারণে চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এসব কারণে এই পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।
তবে উত্তর দিকের চিত্রও প্রায় একইরকম। সড়কের বেশির ভাগ অংশে পানি জমে আছে। এরমধ্যে বাধ্য হয়ে দুই দিকের গাড়ি এক পাশ দিয়ে চলাচল করছে।
বিষয়টি নিয়ে রোড ডিভাইডারের ওপর রিকশা মেরামত করছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা আক্ষেপ করে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, এই রাস্তার মা-বাবা নেই। কত সাংবাদিক ছবি তুললো, লিখলো কিন্তু পানি কমে না। কেউ আসেনা। লিখে কোনো লাভ নাই।
হিতৈষী সংঘের মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে আরো বলেন, “আমরা যতটুকু জানি সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্তর। এখানের পানি নিষ্কাষণের জন্য যে সুয়্যারেজ লাইন সেটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পাশ দিয়ে গেছে। কিন্তু ওই লাইনের ওপর বস্তিঘর বানানোর জন্য পানি জমে।”
হাসপাতালটির সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আবদুর রহমান সরকারও ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সিটিকর্পোরেশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরকে সামনের সড়কটির দূর্ভোগ লাঘবে কয়েকবার চিঠি দেয়ার কথা স্বীকার করেন।তিনি এই সমস্যা সমাধানে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান।
(ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/বিইউ/এআর/ ঘ.)