logo ২৪ এপ্রিল ২০২৫
নতুন রূপে সাজবে ঢাকা
ঢাকাটাইমস
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ২০:২৩:২৭
image

মহিউদ্দিন মাহী: ‘বছরের পর বছরের পর বছর। থাকুন নিশ্চিন্তে। শেকড় থেকে শিখরে- কেএসআরএম।’ এই লেখা সম্বলিত বিলবোর্ডটি শোভা পাচ্ছে রাজধানীর শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের পাশে।


শুধু এটিই নয়, এরকম আরও ছয়টি বিলবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতালটির কোল ঘেঁষে। এতে হাসপাতালে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারায় রোগী ভোগান্তি বাড়ছে বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।


শাহবাগ মোড়ে এরকম অন্তত ১০টি বিল বোর্ড ঝুলছে। শুধু শাহবাগ নয়, রাজধানীর ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ, স্থাপনা এবং রাস্তার মোড়সহ অলি-গলিতে অসংখ্য বিল বোর্ড ঝুলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এর ৯৫ ভাগই অবৈধ। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় চলছে বিল বোর্ডের রমরমা বাণিজ্য।


তবে আশার কথা হচ্ছে- নির্বাচিত দুই সিটি মেয়র এ ব্যাপারে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকার নির্বাচিত দুই মেয়রই এ ব্যাপারে সিরিয়াস। তারা বলছেন এভাবে আর চলতে পারে না।বিশিষ্টজনদের পরামর্শে ঢাকাকে নতুন করে সাজানো হবে।এভাবে যত্রতত্র বিলবোর্ড আর ঝুলতে দেয়া হবে না।


সব সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। নতুন করে বিল বোর্ড নীতিমালা করা হবে। তার আলোকে ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে নতুন করে বিল বোর্ডের অনুমোদন দেয়া হবে।এবার এর অনুমোদন দিবেন স্থপতি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি।




রাজধানীর সৌন্দর্য রক্ষায় এবং যান ও জন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিল বোর্ড স্থাপন নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে।


গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর বিজয় সরণী এলাকায় অবৈধ বিল বোর্ড উচ্ছেদ অভিযানের সময় একথা জানান ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা।


নির্বাহী মেজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই সময় ওই এলাকার রাস্তার পাশে থেকে অপসারণ করে বেশ কয়েকটি অবৈধ বিল বোর্ড। আর বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে বাড়ির দেয়াল ও ছাদ থেকে অবৈধ বিল বোর্ড সরিয়ে না নেওয়া না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক।


সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড অপসারণ করা হবে। আর বৈধ বিলবোর্ডগুলোকে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলতে হবে।


এর আগে গত ঈদুল ফিতরের আগে বিলবোর্ড অপসারণের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সময় চাওয়ায় গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাঁদের সময় দেওয়া হয়।


রিপন কুমার সাহা আরও বলেন, এখন থেকে নিয়মিত অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড অপসারণে অভিযান চালানো হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড অনুমোদন পাবে, তাদেরও একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলতে হবে। তিনি জানান, এ জন্য বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।তারা কাজ করছেন।


এই কমিটিতে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ইকবাল হাবীব ছাড়াও বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এ কমিটি কোন রাস্তায় কতগুলো বিলবোর্ড থাকবে, কীভাবে থাকবে—এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করে দেবেন।




জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবীব ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিল বোর্ড একটি শিল্প। এটাকে মরতে দেয়া যাবে না। তবে এটিকে একটি নীতিমালার আওতায় আনতে হবে। কেউ যেন ইচ্ছা মত কিছু না করতে পারে। বিল বোর্ডে শুধু পণ্যের ব্রান্ডিং হলে চলবে না। সেখানে দেশের ব্রান্ডিং করতে হবে। বিল বোর্ডে কি থাকবে। কতটুকু থাকবে। এর সাইজ কি হবে। কত মিটার পরপর বিল বোর্ড বসবে। কোথায় কোথায় বিল বোর্ড বসবে। প্রত্যেকটি বিষয় সুনির্দিষ্ট থাকবে।


তিনি বলেন, বিল বোর্ডকে শিল্পিত শিল্প হিসেবে তৈরি করতে হবে। বিল বোর্ড অনুমোদন কমিটিতে শুধু সরকারি আমলা থাকবে না। এখানে শিল্পীরা থাকবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবে। তারা অনুমোদন করবে বিল বোর্ড কোথায় এবং কীভাবে বসবে।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় স্থাপনা, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসহ বিশেষ জায়গায় বিল বোর্ড থাকবে না। এগুলো নতুন নীতিমালার যুক্ত হবে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে ছোট-বড় ১০ হাজারের বেশি বিলবোর্ড রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন রয়েছে মাত্র হাজার খানেকের। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, রাজধানীতে বিলবোর্ড আছে তিন হাজার। এর মধ্যে এক হাজারের অনুমোদন আছে। বাকিগুলো অবৈধ। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যে কোন  ধরনের সরকারি/বেসরকারি জায়গায় বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ড অথবা সাইনবোর্ড স্থাপন করার জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হয়।


এরপর স্থাপিত বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ডের বিপরীতে প্রতি বছর করপোরেশনকে নির্ধারিত হারে ফি দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু শতকরা ৮০-৯৫ ভাগ বিলবোর্ডই অবৈধ হওয়ায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। লাভবান হচ্ছে শক্তিশালী একটি চক্র। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডেপুটি চিফ রেভিনিউ অফিসার ইউসূফ আলী সরদার বলেন, বিলবোর্ড নিয়ে নতুন নীতিমালায় ঢাকা দক্ষিণও যুক্ত হবে। আমরা আরও শক্ত অবস্থানে রয়েছি। ইতোমধ্যে অবৈধ বিল বোর্ড উচ্ছেদও প্রায় শেষের পথে। আশা করছি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। 


(ঢাকাটাইমস/৪আগস্ট/এমএম/এআর/ ঘ.)