logo ২৪ এপ্রিল ২০২৫
বিএনপির পুনর্গঠনে দুই আতঙ্ক!
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
৩০ আগস্ট, ২০১৫ ১৩:২৪:৪৪
image

ঢাকা: গ্রেপ্তার ও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দেয়ার আতঙ্কে আছে বিএনপি। দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হওয়ায় এই আতঙ্কে যেন গতি পেয়েছে। শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হলেও এরমধ্যেই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই বিষয়টিতে নজর রাখছেন। একইসঙ্গে দলীয় কোন্দলের কারণে দল গোছানোর উদ্যোগ যেন ভেস্তে না যায় সে জন্যও নির্দেশনা দিচ্ছেন।


এছাড়াও সাংগঠনিক পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু অভিযোগ সামনে চলে এসেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে “পকেট কমিটি” ও “কমিটি-বাণিজ্য” করার চেষ্টা, পাল্টাপাল্টি কমিটি ও কেন্দ্রে অভিযোগের পাহাড়, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্বে না আনা।


এদিকে সব ইউনিটের কমিটি করতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময়সীমা নিয়েও অনেকের আপত্তি আছে। জেলা নেতারা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব। তারা কেন্দ্রে সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন। তবে প্রয়োজনে সময় বাড়ানো হতে পারে বলে বলছেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।


পুনর্গঠন কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রয়োজনে আমরা সময় বাড়াবো। সেক্ষেত্রে না পারার কারণ কেন্দ্রকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। সময় বেঁধে দেয়ার মূল উদ্দেশ হলো যাতে কাজটা শুরু হয় এবং গতি পায়।”


প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা গত ৯ আগস্ট  তৃনমূলে  চিঠি দেয় বিএনপি। কিন্তু সময়সীমা বেঁধে দেয়াসহ চিঠির বেশ কিছু নির্দেশনা নিয়ে তৃণমূলে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ।


জেলা নেতারা বলছেন, অনেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে কারাগারে। কোথাও নেতাদের নিয়ে বৈঠক করলে হানা দিচ্ছে পুলিশ। আবার এক গ্রুপ কাজ শুরু করলে অন্য গ্রুপের লোকজন তাতে বিভিন্নভাবে বাধার সৃষ্টি করছেন এমন অভিযোগও আছে। এছাড়াও অনেক নেতা হজে চলে গেছেন।


সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল নোমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুনামগঞ্জ বিএনপিতে তিনটি গ্রুপ। এতে যেমন কাজে ব্যঘাত ঘটছে একই সঙ্গে কোথাও পরামর্শ সভা ডাকলে পুলিশ হানা দিচ্ছে। এভাবে তো কাজ করা সম্ভব নয়।”


নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা যাবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আমরা কেন্দ্রকে জানাবো।”


এদিকে জেলার বর্তমান আহবায়ক নাসির উদ্দিন চৌধুরী আন্দোলনে ছিলেন না এবং এখন অনুগত লোকদের দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলার সাবেক সভাপতি ফজলুল হক আসপিয়া।  অন্যদিকে সাবেক হুইপ তাকে নানাভাবে বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে।


নাটোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজ শুরু করেছি। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে না। সভাপতিসহ কেন্দ্রকে জানাবেন।”


পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে কোন্দল নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ হয়রানি করছে। এতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।”


কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অন্য গ্রুপের নেতারা নিজেদের অনুগতদের দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।


তবে এ বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলেও তাসফীরুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।


নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করা যাবে না বলে মর্মে কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানালেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহবার হোসেন। অন্যদিকে পুলিশ কাজ শুরু করার পর থেকে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখাচ্ছে বলে জানান তিনি।


ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পুলিশ খুবই ডিস্টার্ব করছে। কোথাও সভার অনুমতি দিচ্ছে না। বসলে তুলে দিচ্ছে। এরমধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। মতপার্থক্য আছে তবে সেইভাবে কোন্দল নেই কুষ্টিয়ায়।” 


এদিকে কমিটি পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপিতে গ্রুপিং ও কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে বলে জানা গেছে।


জেলায় যেকোনো কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আহ্বায়ক ও প্রথম যুগ্ম আহ্বায়কের যৌথ স্বাক্ষর থাকার শর্ত দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। জেলার আহ্বায়ক খুররম খান চৌধুরী একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ করেছেন তারই সহকর্মী প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।


ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জেলার আহ্বায়ক পকেট কমিটি করছেন। তিনি সংস্কারবাদী লোক। যারা আন্দোলনে ছিল, মামলা খেয়েছে তাদের পদ দিচ্ছেন না।”


তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খুররম খান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা আমাকে সংস্কারবাদী বলছেন তারা সংস্কারবাদী। দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনায় আমি কাজ করছি। তবে যারা আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে নৌকা উপহার দিয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করছি।”


মোতাহার হোসেন তালুকদারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি একথা বলেন।


এদিকে দল পুনর্গঠন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন  জামালপুর জেলা বিএনপির নেতারা। জেলার সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুনের বিরুদ্ধে কমিটির সদস্য এনএম তাপস পাঠান পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি করার অভিযোগ করেছেন।


তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশি হয়রানি শুরু হয়নি তবে সাধারণ সম্পাদক নিজের লোক ছাড়া কারো সঙ্গে যোগাযোগ না করে ইচ্ছামত কাজ করছেন। আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি।”


তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ওয়ারেস আলী মামুন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের সময়কার এক মামলায় বৃহস্পতিবার আমাকে পৌর মেয়রের পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রিট করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তবে অন্যরা কাজ করছেন।”


তাপস পাঠানের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “উনি নিজেই নিষ্ক্রিয়। আন্দোলনে থাকেন না। তিনি কিভাবে বলবেন কে আন্দোলনে ছিল আর কে ছিল না। আর এখানে নিজের মতো কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। সবাই মিলে কাজ করছি।”


নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা অসম্ভব বলেও জানান জামালপুর জেলা বিএনপির এই নেতা।


(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/বিইউ/জেবি/এআর/ঘ.)