ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যার কারণ উৎঘাটনে দুই সপ্তাহের সময় দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল দেড় মাসেরও বেশি সময় আগে। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। রাজপথে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার।
গত ১৬ জুলাই তথ্য সচিব মরতুজা আহমদকে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের। দুই সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হলেও এরই মধ্যে নির্ধারিত সময় পার হয়ে আরও এক মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। যার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ সেই সচিব এম এ হান্নান এখন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। বাড়তি সময়ও নেয়া হয়নি। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ঢাকাটাইম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এরই মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রধান তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ এ নিয়ে আমার মন্ত্রণালয়ে দেখা করে গেছেন। তদন্তের প্রয়োজনে যেসব তথ্য-প্রমাণাদির প্রয়োজন হবে তার একটি খসড়া সংশ্লিষ্টদের দিয়ে গেছেন অনানুষ্ঠানিকভাবে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণাদি চেয়ে চিঠি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে তা এখনো হয়ে দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মরতুজা আহমেদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যার ঘটনায় আদালতে একটি মামলা চলছে। আমাদের মামলার বিষয়টিও ভেবে দেখতে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই তদন্তে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন।
৭ জুলাইয়ের ওই ঘটনার পর গত ১৬ জুলাই তথ্য সচিব মরতুজা আহমদকে দায়িত্ব দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয় কমিটিকে। কমিটির প্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করেন বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। কিন্তু কী কারণে তদন্ত আজও শেষ হয়নি তা জানা যায়নি।
গত ৭ জুলাই রাজধানীর তোপখানা রোডের কর্ণফুলী হোটেল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। তিনি কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হয়।
আইয়ুব খানের সঙ্গে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানকে টাকা দিয়েছিলেন তিনি। পরে বারবার আবেদন করার পরও তিনি দক্ষিণ জেলা ইউনিট ঘোষণা করেননি।
সচিবের বাসায় গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে তিনি গলাধাক্কা দিয়ে অপমান করে তাকে বের করে দেন। অপমানে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এম এ হান্নান।
মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার খবরটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই আরও অভিযোগ করে বলেন যে, সচিব এম এ হান্নান এক সময় মতিউর রহমান নিজামীর একান্ত সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেজন্য তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার সাহস দেখিয়েছেন।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জুলাই এম এ হান্নানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যুগ্মসচিব শেখ মিজানুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে মরতুজাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। তারা রীতিমতো আট ভাগে বিভক্ত। মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যার সঙ্গে ওই বিরোধের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না তা জানার চেষ্টা করছি।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আমি এরই মধ্যে পাঁচ দফা চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সফর করেছি। বিবাদমান গ্রুপের লোকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে আমার কাছে পুরো বিষয়টি বেশ জটিল মনে হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমাকে আরও কয়েক দফা যেতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যায় মুক্তিযুদ্ধ সচিব এম এ হান্নানের কোনো ভূমিকা রয়েছে কি না এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। এখনো বলার মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। মামলাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তদন্তে একটু সময় লাগবে।
(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/এইচআর/জেবি/এআর)