ঢাকা: সারা দেশে ফুঁসে উঠছেন শিক্ষকরা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই আন্দোলনের অগ্রভাগে রয়েছেন। তারা দাবি আদায়ে ‘অল আউট’ আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন।
বিশেষ করে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে শিক্ষক আন্দোলন চরম আকার ধারণ করেছে। বিচ্ছিন্নভাবে চলছে ধর্মঘট। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক। সরকার যদি আমাদের আশ্বস্ত না করে তাহলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আর মন্ত্রিসভার যে কমিটি পর্যালোচনার দায়িত্ব পেয়েছে তারা যদি আমাদের সঙ্গে বসে তাহলে আন্দোলনের ফরম পরিবর্তন করা হবে। অন্যথায় আন্দোলন চলবে।’
তবে শিক্ষকদের এ আন্দোলনে ‘রাজনৈতিক রং’ লাগার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহর এক বক্তব্যে বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এক অনুষ্ঠানে হান্নান শাহ বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তার সঙ্গে বিএনপির সমর্থন রয়েছে। কারণ শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য। তাদের দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হউক।’
হান্নান শাহর এই বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সরকার সমর্থক অনেক শিক্ষক বলছেন, আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা একটি যৌক্তিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছি। কিন্তু এটাকে একটি মহল রাজনৈতিক রং দেয়ার চেষ্টা করছে। যেটা ইতিবাচক কিছু নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সরকার সমর্থক এক পদস্থ নেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা কিন্তু সরকারেরই লোক। শিক্ষকদের দাবির বিষয়টিতে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা মনে করছি আমাদের এ দাবির প্রতি প্রধানমন্ত্রীও সহানুভূতিশীল। কিন্তু এটাকে যদি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা কিন্তু মোটেও কাম্য নয়।’
অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামোতে বেতনবৈষম্য দূর না হওয়ার প্রতিবাদে বুধবারও দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় লাগাতার ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যেরও কড়া সমালোচনা করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
অন্যদিকে বেতনকাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামছে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। প্রাথমিক কর্মসূচি হিসাবে বৃহস্পতিবার দেশের সবগুলো সরকারি কলেজ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবে তারা।
সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, বর্তমানে কলেজের অধ্যাপকরা চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। সিলেকশন গ্রেডের জন্য এত দিন কিছুসংখ্যক অধ্যাপক গ্রেড-৩ পেয়েছেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় এখন এটা বন্ধ হয়ে গেল। ফলে শিক্ষকরা আরও বৈষম্যের শিকার হবেন।
শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলার মধ্যেই সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেন, দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছেন। তাদের কর্মবিরতির কোনো যুক্তি নেই। তারা জানেনই না যে নতুন বেতনকাঠামোতে তাদের জন্য কী আছে, কী নেই।
এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পরই শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আন্দোলনের গতিও তীব্র হয়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্য শুধু অনভিপ্রেতই নয়, অসংলগ্নও বটে। অর্থমন্ত্রী অতীতে অন্যদের ক্ষেত্রেও বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এসবের মাধ্যমে তিনি জাতির কাছে নিজেকে ইতিমধ্যে হাস্যকর করে তুলেছেন। বস্তুতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক ও শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে তার জ্ঞানের অভাবের কারণেই তিনি এরূপ দায়িত্বহীন মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের পদোন্নতিকে ঘিরে তিনি যখন দুর্নীতির কথা বলেন, অন্যদিকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারিকে তিনি কিছুই মনে করেন না এবং বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি অত্যন্ত হালকাভাবে দেখেন, তখন তার মুখে অন্তত জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকদের বিষয়ে এরূপ অবাঞ্ছিত বক্তব্য নিতান্তই অশোভন।
ঘোষিত বেতনকাঠামো সম্পর্কে তিনি বলেন, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চার দফা দাবির কোনোটিই গ্রহণ করা হয়নি, এমনকি দাবি পূরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। অনতিবিলম্বে শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত শিক্ষকরা কর্মবিরতির পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হুমকি দিয়েছেন, দাবি না মানলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা বর্জন করবেন তারা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা বুধবার কর্মবিরতি পালন করেন। বৃহস্পতিবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও বুধবার কর্মবিরতি পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি চলছে।
(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/এমএম/ এআর)