logo ১৭ মে ২০২৫
পুলিশের নিরাপত্তা দেবে কে?
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
০৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:৩৩:২৩
image


ঢাকা: পনেরো দিনের ব্যবধানে তল্লাশি চৌকিতে দু-দুটি হামলা। প্রাণ হারালেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় পুলিশে হঠাৎ আতঙ্ক। নির্দেশ জারি হলো-তল্লাশি চৌকির সবাইকে পড়তে হবে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।

এর আগেও নানা সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা হয়েছে। প্রাণও হারিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে এবারের হামলা নজিরবিহীন। গত ২২ অক্টোবর রাজধানীর দারুস সালামে তল্লাশি চৌকিতে সহকারী উপপরিদর্শক ইব্রাহিম মোল্লা নিহতের ১৩ দিনের মাথায় আশুলিয়ায় একই ধাঁচে হামলায় মারা গেলেন কনস্টেবল মুকুল হোসেন। হামলার ধরণ, পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া আর পারিপার্শ্বিকতায় পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবেই তাদের ওপর আক্রমণ করছে একটি গোষ্ঠী।

ইব্রাহিম মোল্লাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় দায়ীকে চিহ্নিত করার দাবি করেছে পুলিশ। বগুড়ার আদমদীঘি ছাত্রশিবিরের সভাপতি এনামুল হক এই খুন করেছেন-ঘটনার পর হাতেনাতে আটক একজনের স্বীকারোক্তিতে এই ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার ফাঁসি আরও একজনের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় হয়েছে। এই বিচারকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে বিশেষ করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বেপরোয়া আক্রমণ শুরু করে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময়ও চালু থাকে এই আক্রমণ। তবে নির্বাচনের পর কয়েক মাস চুপচাপ ছিল জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। পুলিশের ধারণা, মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর ঠেকানোর চেষ্টায় আবারও সক্রিয় হয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। আর এই ধারাবাহিকতাতেই তল্লাশি চৌকিতে এমন আক্রমণ হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তল্লাশি চৌকিতেই যদি দুর্বৃত্তরা পুলিশের ওপর হামলা করে তাদেরকে খুন-জখম করতে পারে, তাহলে পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? অস্ত্র হাতে থাকলেও কেনো পুলিশ তা ব্যবহার করেনি? আবার পুলিশকে যদি নিজের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি চিন্তিত থাকতে হয়, তাহলে জনগণের নিরাপত্তা কীভাবে তারা নিশ্চিত করবে?

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দারুসসালাম থানার ঘটনায় পুলিশ কিন্তু বসে থাকেনি। তারা অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে’।

আরেক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সব সময় সচেষ্ট থাকে। দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনে এর আগেও জীবন দিয়েছে পুলিশ বাহিনী, ভবিষ্যতেও পিছপা হবে না’।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আশুলিয়ায় হামলাকারী ছিলেন ছয় জন। দুটি মোটরসাইকেলে করে এসেছিল তারা। থামতে সংকেত দেয়ার পর পুলিশের কাছে যায় তারা। সেখানে পুলিশও ছিল ছয় জন। হাতেই ছিল অস্ত্র। সন্ত্রাসীরা সংখ্যায় সমানে সমান থাকলেও পুলিশ কেনো কিছুই করতে পারলো না, জানতে চাইলে ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অস্ত্র তো দেয়া হয়েছে ব্যবহার করতেই। এখানে কেনো ব্যবহার করা হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, হামলার পর পর দুই পুলিশ সদস্য সহকর্মীদের রক্ষায় এগিয়ে আসার বদলে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। ঘটনাটি স্বীকার করেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোহসিন কাদিরও। পরে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

পুলিশের সহকারী কমিশনার পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, পুলিশের কাছে যে অস্ত্র দেওয়া হয় তা শুধু প্রর্দশনের জন্য নয়। আত্মরাক্ষার্থে পুলিশ গুলিও চালাতে পারবে। এক্ষেত্রে পুলিশকে পুরষ্কার দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। আশুলিয়ায় কেনো পুলিশ গুলি করলো না তা আমি বুঝতে পারছি না’।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতেই পুলিশের ওপর এভাবে হামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ কোনো গোষ্ঠী পুলিশকে টার্গেট করতে পারে।তবে তারা যেভাবে সাফল্যের সঙ্গে দুটি ঘটনা ঘটিয়েছে, তা নতুন। এভাবে গুপ্তহত্যা বা ‘টার্গেট কিলিং’ নিঃসন্দেহে দেশের জন্য উদ্বেগজনক। এ সব ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি’।

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে বলছে, আমার কাছে তা ঠিক মনে হয় না। আমার ধারণা লেখক প্রকাশকদের ওপর হামলা আর পুলিশের ওপর হামলা একই গোষ্ঠীর কাজ নয়। প্রতিটা ঘটনার জন্য আলাদা আলাদা গোষ্ঠী কাজ করে থাকতে পারে। তবে যারাই করুক না কেনো হাামলাকারীদের জালের সন্ধান করতে হবে। তা না হলে এসব ঘটনা চলতেই থাকবে’।

(ঢাকাটাইমস/৫নভেম্বর/এএ/ডব্লিউবি)