logo ২৩ এপ্রিল ২০২৫
এবারও উৎসবে শামিল হচ্ছে না ৩৪ লাখ শিশু শিক্ষার্থী!
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০৪:৫৪
image

ঢাকা: প্রাক প্রাথমিকের প্রায় ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বাইরে রেখে সরকার এবারও পয়লা জানুয়ারির পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করতে যাচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক কোমলমতি শিক্ষার্থীকে বাইরে রেখে দেশজুড়ে পালিত এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এতে শিশুদের মনের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।


পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই নারাজ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পালের বক্তব্য হচ্ছে-আমাদের মূল কাজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রাক-প্রাথমিকের বই নিয়ে এখন আমরা ভাবছিই না। 


আগামী ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়াকে কেন্দ্র করেই সব কর্মযজ্ঞ চলছে। কিন্তু প্রাক-প্রাথমিকের এক শতাংশ বইও দেশের কোনো জায়গায় পৌঁছায়নি।


জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের ছাপার কাজ এখনও শুরুই হয়নি।


জানা গেছে, এ বছর প্রাক-প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৩। বই ছাপানোর কথা রয়েছে ৬৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৪২টি।


এনটিসিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা এখন প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে ভাবছি না। তাদেরকে আমরা সাধারণত ১৫ জানুয়ারির পরে বই দিয়ে থাকি। সেটি তাদের ‘প্রাইম কনসার্ন’ নয়।


ফলে বরাবরের মতোই আগামী পয়লা জানুয়ারির উৎসবে অংশ নিতে পারছে না কোমলমতি শিশুরা। বোর্ডের এই আচরণে হতাশা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা।


প্রাক-প্রাথমিকের বই একসঙ্গে না ছাপানোর সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, এর ফলে আমাদের ছোট্ট শিশুদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বড় ভাই বোনদের হাতে নতুন বই দেখে তাদের চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না।


জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোস্তাক আহমেদ ভুঁইয়া ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা প্রাক-প্রাথমিকের বই পাঠাবো সবার পরে। কারণ তাদেরকে আমরা বই দিই ১৫ জানুয়ারির পর।


এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমাদের মূল কাজ হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রাক-প্রাথমিকের বই নিয়ে এখন আমরা ভাবছি না। 


এনসিটিবির এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, প্রাক প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যদি বই না পায় তাহলে তাদের মনের ‍ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেটা শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে। তাদের মানসিক বেড়ে উঠায়ও এটি প্রভাব ফেলতে পারে। 


জানতে চাইলে মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহতাব খানম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিশুদের বইয়ের বিষয়ে সরকারকে বেশি মনযোগ দেয়ার দরকার ছিল। কারণ পয়লা জানুয়ারি সারাদেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বই পাবে। তারা আনন্দ করবে। কিন্তু প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা কী দোষ করেছে। তারা কেন আনন্দ করতে পারবে না। তারা কেন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে পারবে না। এই শিশুরা বই না পেলে তাদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।


নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর সময় বাকি আছে এক মাসের কিছু বেশি। যদিও ইতোমধ্যে প্রাথমিকের ৩২ দশমিক ১৫ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। ইবতেদায়ির বই সরবরাহ হয়েছে ৯২ শতাংশ। দাখিল ও দাখিল ভোকেশনালের বই সরবরাহ হয়েছে ৯০ শতাংশ। মাধ্যমিকের বই সরবরাহ হয়েছে ৯২ শতাংশ। এসএসসি ভোকেশনালের বই সরবরাহ হয়েছে ৯৩ শতাংশ। ছাপাখানাগুলোতে দিনরাত চলছে বই মুদ্রণ ও বাঁধাই কাজ। এ কাজ নিয়মিত তদারক করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।


প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত চার কোটি ৪৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৭২৪ কপি বই ছাপা হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার ৭০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে।


(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/এমএম/জেবি)