logo ২৩ এপ্রিল ২০২৫
মুজিবের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে বাংলাদেশ: ডনের রিপোর্ট
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ১৯:০৬:২২
image

ঢাকা: পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ডনের এক প্রতিবেদনে আজ মঙ্গলবার অভিযোগ করা হয়েছে যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।


একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে পাকিস্তানের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে সোমবার তলব করে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর।


এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার ‘মুজিবের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডন পত্রিকা।


১৯৭৪ সালে নয়াদিল্লিতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে না এই মর্মে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একমত হয়ে চুক্তিটি সই করেছিল।


এ ব্যাপারে পত্রিকাটি সে দেশের দুজন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও একজন আইনমন্ত্রীর বক্তব্যও তুলে ধরে।


তবে ওই চুক্তি সংসদে পাস না হওয়ায় তা কোনো আইনি ভিত্তি পায়নি বলে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। জাতীয় সংসদে চুক্তিটি পাস না হওয়ার বিষয়টিও  সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে একাত্তরে লাখ লাখ বাঙালি নিধনের ঘটনাবলীও।


জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই চুক্তি সই হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের সংসদে তা পাস হয়নি। তাই যে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি, সেটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই।”


এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই চুক্তির আওতায় ছিল ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে পাকিস্তান। চুক্তিটির কোথাও নেই বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা যাবে না। তাই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়ে পাকিস্তানের মন্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।


”সাকা-মুজাহিদ ইস্যুতে পাকিস্তান সরকারের তৎপরতার সমালোচনা করেছেন সে দেশের মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীরও। গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি পাকিস্তান সরকারের এই আচরণকে দ্বৈতনীতি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “সরকার এই আচরণের মাধ্যমে শুধু এটাই প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক চর, তারা কাজ করছিল পাকিস্তানের স্বার্থে।”


পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত ডন পত্রিকায় ‘মুজিবের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনটি শুরু হয়েছে এভাবে- “১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিভক্তির সময় যারা ‘যুদ্ধাপরাধ’ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না বলে বাংলাদেশের জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়ায় পাকিস্তানের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে বাংলাদেশ।”


এরপর সোমবার পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরে তলবের বিষয়টি তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক নেতার (মানবতাবিরোধী অপরাধী) ফাঁসির ঘটনায় পাকিস্তানির পররাষ্ট্র দপ্তর ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল করা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের চুক্তির চেতনায় বিবৃতিটি দিয়েছিল।


১৯৭৪ সালে করা ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ওই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেন। তিনি সম্মত হন যে, এই অঞ্চলের শান্তি ধরে রাখতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচার এগিয়ে নেয়া হবে না।


প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এরপর শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, তিনি চান জনগণ সব তিক্ততা ভুলে নতুন করে শুরু করুক, যাতে বলা যায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষমা করতে জানে।


এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, “বাংলাদেশের নাগরিক পৃথিবীর কোনো দেশে সমস্যায় পড়লে সরকার সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে। ঠিক তেমনি তাদের (পাকিস্তান) এজেন্টদের শাস্তি দিলে তো তারা প্রতিবাদ করবেই। দেশের সবাই জানে, এ দেশে পাকিস্তানের এজেন্ট হলো বিএনপি ও জামায়াত।”


ডনের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সালমান বশির, শামসাদ আহমেদ এবং সাবেক আইনমন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আহমের বিলাল সফির মতে, ও্ই ত্রিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে এই চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হতে পারে।


(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/জেএস/মোআ/ এআর/ ঘ.)