logo ২৩ এপ্রিল ২০২৫
২২ অক্টোবরের আগের শিক্ষক নিয়োগ বৈধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:২৫:৫৯
image

ঢাকা: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে অনেকের মধ্যে। গত চার নভেম্বর জারি করা এই বিধিমালা কবে থেকে কার্যকর হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। সার্কুলারেই বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২২ অক্টোবরের আগে যারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ২২ অক্টোবরের পরে কেউ করতে পারবে না।


গত ৪ নভেম্বর বিধিমালাটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। তবে এসআরও-তে তারিখ দেওয়া হয়েছে ২২ অক্টোবর।


এতে বলা হয়েছে, ২২ অক্টোবরের পর পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এই নিয়ম ২২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।


বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি ২২ অক্টোবরের পর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করে তা অবৈধ হবে। ২২ অক্টোবরের আগে যদি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে তারা আগের নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ দেবে। তাদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।


নতুন বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ আর এককভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না। নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। পাশাপাশি নতুন সার্কুলার জারি হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


বিধিমালা অনুযায়ী, সারা দেশের বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে মেধা তালিকা করে দেবে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে এই মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।


নতুন এ নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এস আরও জারি করেছে।


শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন থেকে নতুন নিয়মে নিয়োগ কার্যক্রম চলবে। ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারাও নিয়োগের সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আরেকটি মেধা তালিকা করে দেবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নতুন ও পুরোনো যেকোনো তালিকা থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দিতে পারবে। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে তিন বছর। আর যারা ইতোমধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন এমপিওভুক্তির (বেতন ভাতার সরকারি অংশ পাওয়া) ক্ষেত্রে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তারা আগের নিয়মেই এমপিওভুক্ত হবেন। শীঘ্রই সার্কুলার জারি করে বিষয়গুলো পরিষ্কার করে হবে বলে জানান তিনি।


নতুন এই পদ্ধতির ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতা হারাবে। বর্তমান পদ্ধতিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে নিবন্ধন পরীক্ষা হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটিই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।


পরিচালনা কমিটি তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিলে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করেন। পরে পরিচালনা কমিটির অধীনে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ কমিটি গঠন করে আবেদনকারী প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করা হয়।


নতুন নিয়মে এনটিআরসিএ প্রতি বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই জেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পদ ও বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করবে। এই তালিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথমে একটি বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা হবে। এরপর ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাক্রমের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।


কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক উভয় ক্ষেত্রে পৃথকভাবে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে তিনি মেধা তালিকায় স্থান পাবেন না। মেধা তালিকার বাইরে আরও ২০ ভাগ প্রার্থীকে অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মৃত্যু হলে, চাকরি ছাড়লে বা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হলে এই তালিকা থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে।


নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাছাই পরীক্ষার ফল পরীক্ষা গ্রহণের ২০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। অনিবার্য কারণে এই সময় আরও ১০ দিন বাড়ানো যাবে। ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার ফল ৪৫ দিন ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের পর ৩০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। ফল প্রকাশের অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে এনটিআরসিএ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তথ্য ভান্ডারে নিবন্ধন করবে এবং তিন বছর মেয়াদি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।


বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত প্রায় ৩০ হাজার বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে।


এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান আশীষ কুমার সরকার বলেন, শূন্য পদের চেয়ে ১০ শতাংশ কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাতালিকা করা হবে। চাহিদার ভিত্তিতে ওই তালিকা থেকে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। পরিচালনা কমিটি শুধু নিয়োগ দেওয়ার কাজটি করবে।


(ঢাকাটাইমস/১৭নভেম্বর/এমএম/এআর)