ঢাকা: বদ্ধ রাজধানীবাসীর নাগরিক জীবনে এক টুকরো মরূদ্যান হিসেবে অভিধা পেয়েছিল হাতিরঝিল। কিন্তু সেটি আজ পুঁতিগন্ধময় হয়ে উঠছে একটি ভবনের কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটিকে বলেছেন হাতিরঝিলের ‘বিষফোঁড়া’।
হাতিরঝিল প্রকল্পের মাঝখানে পানিপ্রবাহ রোধ করে দাঁড়িয়ে থাকা বিষফোঁড়াটি হলো বিজিএমইএ ভবন।
এ ভবনের কারণে হোটেল সোনারগাঁও-সংলগ্ন ঝিলটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। নিষ্কাশন হতে না পেরে এর পানি কুচকুচে কালো, তীব্র র্দুগন্ধময়। একই কারণে কলাবাগান-কাঁঠালবাগান এলাকার অনেক জায়গায় পানি জমে যায় সামান্য বৃষ্টিতে।
পরিবেশের সংকট সৃষ্টিকারী বিজিএমইএ ভবন এখন নিজেও সংকটে। পানির ওপর দাঁড়ানো ভবনটির পাশের মাটি সরে যাওয়ায় সেটি উলম্ব অবস্থান থেকে কয়েক ইঞ্চি হেলে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই এ ভবনকে ঘিরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) কার্যালয় হিসেবে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পান্থপথ লিংক রোডে এ ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে নির্মাণের শুরু থেকেই একে ঘিরে উঠে নানা বিতর্ক। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া এ ভবনের জমির মালিকানা নিয়েও বিতর্ক জড়িয়ে আছে। এমনকি এই ভবন ভেঙে হাতিরঝিল প্রকল্পকে মূল নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়নের নির্দেশনা ছিল হাইকোর্টের। কিন্তু এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে বিজিএমইএ উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। হাজারো বিতর্ক আর মানুষের ক্ষোভ উপেক্ষা করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি।
সম্প্রতি রাজধানীর জলাবদ্ধতার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে এই ভবনকে ঘিরে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশেষজ্ঞরা জানান, মূলত বিজিএমইএ ভবনের কারণে সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে কাঁঠালবাগান। হাতিরঝিলকে ঘিরে রাজধানীর প্রধান তিনটি খালের যে সংযোগ ও পানি নিষ্কাশনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাও বাস্তবায়ন করা যায়নি এই ভবনের জন্য।
এ ব্যাপারে হাতিরঝিল প্রকল্পের টিম লিডার স্থপতি ইকবাল হাবিব ঢাকাটাইমসকে বলেন, “হাতিরঝিলকে ঘিরে কলাবাগান এলাকার পানি নিষ্কাশনের যে পরিকল্পনা করেছিলাম, তা আর হয়ে ওঠেনি। এ ভবনটি পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। এ কারণে হোটেল সোনারগাঁও-সংলগ্ন ঝিলটি বদ্ধ জলাধারে পরিণত হচ্ছে। তা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।
ইকবাল হাবিব বলেন, “জলাশয়ের মধ্যখানে ভরাট করে নির্মাণ করায় বিজিএমইএ ভবনের চারপাশের মাটি প্রতিনিয়ত সরে যাচ্ছে। ঝিল খননের সময় আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, ভবনটি উলম্ব অবস্থান থেকে কয়েক ইঞ্চি হেলে পড়েছে। কারিগরি ত্রুটির কারণেই এমনটি ঘটেছে।”
এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে এই নগর প্রকৌশলী বলেন, বিভিন্ন স্থানে যেভাবে ভূমিকম্প হচ্ছে, তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এখন মাটি আরও সরে গেছে। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও এ ভবনকে ঘিরে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।
ভবন হেলে পড়ার বিষয়ে জানতে বিজিএমইএর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। বর্তমানে বিজিএমইএর পরামর্শক লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে কোনো বলতে রাজি হননি।
(ঢাকাটাইমস/১০ নভেম্বর/এসবি/মোআ)