logo ২৩ এপ্রিল ২০২৫
নারায়ণগঞ্জে ঘুরে-ফিরেই আসছে গডফাদার প্রসঙ্গটি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ১২:২৪:৫৪
image


নারায়ণগঞ্জ: নূর হোসেন নিজ উদ্যোগেই র‌্যাবকে দিয়ে সাত খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন? নাকি তাকে দিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী কেউ এই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে? আর সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে বাঁচাতেই কি নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিতে পুলিশের এতো অনীহা? আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা মনে করলে এখনও নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেয়া সম্ভব। আর সেক্ষেত্রে পুলিশকে একটি সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে আদালতে। কেবল সাত খুনই নয়, নারায়ণগঞ্জে ওই সময়ে আরও বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে।

বলাবলি হচ্ছে, নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক রহস্যেরই জট খুলবে। তাছাড়া কার সহযোগিতায় নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেল এবং পালিয়ে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে এক প্রভাবশালীর ফোনালাপ নিয়ে রহস্যেরও কোনো কিনারা হয়নি। আর এসব প্রশ্নই এখন ঘুর পাক খাচ্ছে সর্বত্র।

সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ র‌্যাবের শীর্ষ তিন কর্মকর্তা আইনের আওতায় আসলে সেই গডফাদারকে কেন আইনের আওতায় আনা হবে না-এ প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহড়জুড়ে? মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, সাত খুন ও যুবলীগ নেতা ইসমাইল হত্যাকাণ্ড নিয়ে ৫৪ ধারায় নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এখনও রয়েছে।

অনেকে বলছেন, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ইউনিয়নের যুবলীগ কর্মী ইসমাইল হোসেন হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তীতে সাত খুনসহ নারায়ণগঞ্জে আরও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে সেই গডফাদারের ভূমিকা থাকতে পারে। নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব কিছু বের হয়ে আসবে।

ইসমাইলের ভাই আব্দুল মান্নান এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৪ সালের সাত ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের পাইনাদীর আশিক নার্সারির সামনে থেকে ইসমাইল হোসেনকে অপহরণ করে অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তি। পরে ৯ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেন অপহৃতের ভাই আব্দুল মান্নান। ওই মামলার অভিযোগেও নূর হোসেনকে দায়ী করা হয়েছে। সেখানেও নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১ এর সাবেক সিও তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রানাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। নূর হোসেন র‌্যাবকে দিয়ে ইসমাইল হত্যকাণ্ড ঘটানোসহ আরও অনেক অপকর্ম করিয়ে চলছে। ওই মামলায় এক প্রভাবশালীর ইঙ্গিতে এসব করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, র‌্যাবের সাবেক এই কর্মকর্তারা সরকারি আইন অমান্য করে নূর হোসেনসহ এলাকার প্রভাবশালীদের সহায়তায় অপহরণ-গুম আর খুন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। মান্নান বলেন, এই মামলায়ও নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিলে বেরিয়ে আসতো সাত খুনের রহস্যও। যদিও পুলিশ বলছে, রিমান্ডে নেয়ার এখন আর কোনো সুযোগ নেই।

সাত খুনের মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ইসমাইল হত্যা মামলায় নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কোনো বাধা নেই। আজ ১৬ নভেম্বর এ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করবো। এ মামলা তদন্ত করার জন্য আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশের সদিচ্ছা থাকলে তারা এ মামলায় নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারতো। 



তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুক্রবার ও শনিবার নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকে। এ সূযোগটি নিয়ে নূর হোসেনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডের আবেদন করতে পারতো।

বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, পুলিশ ওইদিন এ আবেদন করলেই সাত খুনের মামলাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করতে পারতো। সেক্ষেত্রে পুলিশ সম্পূরক বা নতুন চার্জশিট দিলেই চলতো। পুলিশ এটি করেনি কারন তার পেছনে একজন বেশ প্রভাবশালী গডফাদার ও তার চক্র রয়েছে। সে-ই নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। আজকে তারাই নিজেরা বাঁচার জন্য নূর হোসেনকে যাতে রিমান্ডে না নেয়া হয় সে চেষ্টা করছে। যাতে গডফাদারের নাম না আসে। আমরা মনে করি পেছন থেকে একটা শক্তি কলকাঠি নাড়ার কারণে নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছেনা। তাকে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কে সহায়তা করেছে মোবাইল ফোনের সে কথোপকথনের রেকর্ড তো মানুষ ভুলে যায়নি। এমনও তো শুনছি কোন এক গডফাদার ভারতে গিয়ে নূর হোসেনের সাথে দেখা করেছে। তার ভিডিও রেকর্ড-ও নাকি আছে। আমরা দাবি করি এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সবার যেন বিচার হয়। আর যারা জড়িত না তাদের যেন অযথা জড়িত করে হয়রানী না করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারন আব্দুর রহমান বলেন, যেখানে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ তিন র‌্যাব কর্মকর্তা আইনের আওতায় আসলো সেখানে কোনো গডফাদার যদি এর পেছনে থেকে থাকে সে কেন আইনের আওতায় আসবে না। নূর হোসেন কেন অপহরণের ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে গিয়ে একজন সংসদ সদস্যের সাথে দেখা করলো। রাইফেলস ক্লাব কার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়? এই সংসদ জনৈক গৌরাঙ্গ বাবুর মাধ্যমে নূর হোসেনকে কলকাতায় পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। নূর হোসেন কার নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটালো, কিভাবে টাকা বিতরণ করলো এসব জানতে তো নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের বিকল্প নেই।  

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার পুন:তদন্ত ও প্রধান আসামি নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে সাত খুনে নিহতের আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ও নজরুল সমর্থকরা।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ধনুহাজী রোড এলাকায় এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিল। পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এসময় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, কোনো গডফাদার বা প্রভাবশালী ব্যক্তি নূর হোসেনের পেছনে নিশ্চয়ই আছে। নূর হোসেন-ই তা ভালো বলতে পারবে। কার নির্দেশে সে এ হত্যাকাণ্ড ঘটালো কে টাকা দিলো এসব নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে। নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ না করলে এ মামলার বিচার সুষ্ঠ হবে না।

তবে সাত খুনের ঘটনায় নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ নেই বলে আবারও দাবি করেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা তদন্তাধীন নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর /প্রতিনিধি/এআর/জেবি)