logo ২৩ এপ্রিল ২০২৫
বর্ধিত ভাড়া দিয়েও হয়রানি কমেনি অটোরিকশায়
তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:২৬:০৭
image

ঢাকা: গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে চলতি মাসের প্রথম দিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের আশপাশের এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার বর্ধিত ভাড়া কার্যকর  হয়।  কিন্তু মিটারে ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে যাত্রী-হয়রানি কমেনি।যাত্রীদের অভিযোগ-এমনকি গন্তব্য পছন্দ না হলে চালকরা বর্ধিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়াও দাবি করছেন।


বুধবার সকাল আটটায় রাজধানীর মালিবাগে অটোরিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, “জেএসসি পরীক্ষার পরীক্ষক নির্বাচিত হয়েছি।  এখন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যেতে হবে।  আমরা মানুষ তিনজন;  রিকশায় যেতে পারব না।  অন্যদিকে সিএনজি যেতে রাজি হচ্ছে না।  এখন পর্যন্ত চারটি সিএনজির সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই মিটারে স্বল্প দূরত্বে যেতে  নারাজ। মনে হচ্ছে এখন চালকদের পছন্দের দূরত্বেই আমাদের যেতে হবে।”


ওই শিক্ষক বলেন, “গণমাধ্যমে তো নিয়মিত বিআরটিএর অভিযানের কথা শুনি।  কিন্তু  অবস্থা দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।”


শুধু নুরুজ্জামান নন,  রাজধানীতে চলাচলকারী  বেশির ভাগ যাত্রীরই এমন অভিযোগ।


চালক ও মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে  গত ১০ সেপ্টেম্বর বিআরটিএর এক সুপারিশের ভিত্তিতে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ায় সরকার। তবে শর্ত ছিল


ভাড়ায়চালিত সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীর চাহিদামতো রাজধানীর মধ্যে যেকোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন চালকরা।


কিন্তু বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ চালক আগের মতোই এ নিয়ম মানছেন না বলে যাত্রীদের অভিযোগ। ফলে বর্ধিত ভাড়া দিয়েও যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি।  একদিকে যাত্রীদের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সময়মতো অটোরিকশাও মিলছে না।


এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীরও।  তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার আমি প্রেসক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম এ বিষয়ে স্মরকলিপি দিতে।  প্রায় দশটি সিএনজির সঙ্গে কথা বলেও তাদের মিটারের যেতে রাজি করাতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত বাসে করে যেতে হয়েছে আমাকে।”


ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,  “আমরা যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে চালকদের উদ্বুদ্ধ করছি।  কিছু চালক গন্তব্য পছন্দ না হলে যেতে চান না, এটা ঠিক।  বিষয়টির শিকার আমি নিজেও হয়েছি।  আজ আমি উত্তর বাড্ডা থেকে বিআরটিএর  এলেনবাড়ী কার্যালয়ে আসার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে চারটি অটোরিকশাকে সংকেত দিয়েছি, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। পঞ্চমবারের সময় একজন চালক  রাজি হন।”


তবে হানিফ খোকন  এ জন্য  কিছু চালক ও মালিককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “চালকরা মালিকদের দৈনিক ৯০০ টাকা জমা দেওয়ার কথা  থাকলেও অনেক মালিক বিষয়টি মানছে না।  তারা ডাবল শিফটে ১৫০০ টাকা জমা নিচ্ছেন।  এ বিষয়ে আমরা ৯২৭টি গাড়ির নম্বরসহ তালিকা বিআরটিএ কার্যালয়ে জমা দিয়েছি।  তার মধ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) ৩৯টি গাড়িকে ডেকেছে বিআরটিএ।  ওই সব গাড়ির ড্রাইভার ৯০ জন।  কিন্তু আজ বিআরটিএ কার্যালয়ে ১২ জন চালকসহ গাড়ির মালিকরা উপস্থিত হয়েছিলেন।  তারা প্রথমে দাবি করেন, সরকার নির্ধারিত জমা নেন তারা।  কিন্তু বিআরটিএর জেরার একপর্যায়ে তারা বেশি জমা নেয়ার কথা স্বীকার করেন।”


ঢাকা সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এইচ ইকবাল মিরাজ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “কিছু মালিক এখনো অতিরিক্ত জমা নিচ্ছে, এ তালিকা আমি পেয়েছি।  আমি গিয়ে বলেছি এদের বিরুদ্ধে বিআরটিএ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।  সরকার বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিলে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি করা হবে না।”


স্বল্প দূরত্বে চালকদের না যাওয়ার কারণ হিসেবে ইকবাল মিরাজ বলেন, এটা হলো তাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। কারণ এখন যেখানে মিটারে গেলে ৫০ টাকা উঠবে, আগে সেই দূরত্বে কন্ট্রাক্টে তারা একশত টাকার বেশি ভাড়া পেত।  এ সমস্যার সমাধান হতে আরো সময় লাগবে।” চালকদের সচেতন করতে বিআরটিএ ও গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।


এদিকে, মালিক ও চালকদের অভিযোগ, যাত্রীরা রাস্তায় যানজট দেখলে নেমে পড়েন। এতে করে চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।  আবার অনেক সময় দেখা যায়, বেশি দূরত্বের পথ হলে তারা মিটারে না গিয়ে চুক্তিভিত্তিক যেতে চায়।


জানতে চাইলে বিআরটিএর সচিব শওকত আলী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “মালিক-শ্রমিকসহ সবার সঙ্গে বসে আমরা ভাড়া নির্ধারণ করেছি। এখন তারা যদি আইন না মানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে এবং তা চলবে।”


সচিব আরো বলেন,  “আমার তো মনে হয় কম দূরত্বে গেলে চালকেরই লাভ হবে।” যাত্রীদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা বিআরটিএকে জানালে ব্যবস্থা নিতে সহজ হবে বলে জানান তিনি।


গত ১০ সেপ্টেম্বর বিআরটিএর এক সুপারিশের ভিত্তিতে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানো হয়। এতে অটোরিকশা মিটারে চলতে প্রথম দুই কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ টাকা।  আর মালিকের জমার পরিমাণ ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৯০০ টাকা।  সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন এ ভাড়া  ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।


(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/টিএ/মোআ)