ধর্ষিতার আর্তনাদ, আমি কি ন্যায়বিচার পাবো না!
নেত্রকোনা প্রতিনিধি, ঢাকটাইমস
০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২১:৩৮:১০

নেত্রকোনা: নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা দরিদ্র মাছ বিক্রেতার সহজ সরল অষ্টাদশী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় সমাজ ও রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে আছে। মোটা অংকের বেতনের চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
এ ঘটনার পর তার পরিবার ন্যায় বিচার পাবার আশায় গত এক মাস যাবৎ সমাজপতি ও আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি না হওয়ায় কিংবা থানায় মামলা না নেয়ায় পরিবারটির মাঝে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
জানা যায়, নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সুখারী ইউনিয়নের হাতিয়া তারাচাপুর গ্রামের হতদরিদ্র মাছ বিক্রেতার অষ্টাদশী কন্যার ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে একই গ্রামের চন্দু মিয়ার দুশ্চরিত্র ছেলে মো. পলাশ মিয়ার (২৫)। সে পরিবারটির আর্থিক অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে মোটা অংকের টাকার চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরূণীকে গাজীপুর চৌরাস্তা নিয়ে যায়।
সেখানে একটি গার্মেন্টসে তাকে চাকরি দেয়। এরপর পলাশ তার বাসায় গিয়ে তাকে প্রায়শই প্রেম নিবেদন করতো। মেয়েটি তার প্রেমের প্রস্তাব বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। এরপর সুচতুর পলাশ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সেটিও প্রত্যাখ্যান করে ওই তরুণী।
পরে গত ৭ নভেম্বর রাতে পলাশ ওই মেয়ের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে বলে রুমে প্রবেশ করে। কথা বলার এক পর্যায়ে তাকে জোর করে ধর্ষণ করে ওই ছেলে। এর পরদিনই সেই তরুণী বাড়িতে চলে এসে বিষয়টি তার বাবা মাকে বলে। বাবা-মা বিষয়টি ছেলের পরিবার, গ্রামবাসী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশে ছেলের বাবা তার ছেলের দোষ স্বীকার করে তিন দিনের মধ্যে মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। নির্ধারিত সময় চলে যাওয়ার পর ছেলের বাবা মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে টালবাহানা শুরু করেন। এক সপ্তাহ পর পুত্রবধূ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে মেয়েটি ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয়।
খবর পেয়ে আটপাড়া থানা পুলিশ রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তুহিন এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের বিয়ে করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে মেয়েটিকে তার জিম্মায় রেখে দেন। এরপর ছেলের পরিবার স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রাম্য মাতব্বরদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেয়েটিকে বউ করতে অস্বীকার করে।
অভিযোগ রয়েছে, অসহায় মেয়ের পরিবার এ ব্যাপারে আটপাড়া থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
এদিকে ছেলের পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান তুহিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ছেলের পরিবারের অনীহার কারণে তাদের বিয়ে করানো সম্ভব হয়নি।
তবে আটপাড়া থানার ওসি ফারুক আহমেদ বলেন, ঘটনা শুনেছি। থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দাখিল করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বর্তমানে অসহায় পরিবারটি ন্যায়বিচার পাবার আশায় আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
অবশেষে কোনো বিচার না পেয়ে তারা শনিবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান।
এ সময় ধর্ষিতা ওই তরুণী আর্তনাদ করে বলেন, আমি কী এই সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে ন্যায় বিচার পাবো না?
(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস/জেবি)