সুখের নাগাল পাওয়া কি বড়ই কঠিন?
ফিচার ডেস্ক
১১ মার্চ, ২০১৬ ১১:৫৮:১৯

ঢাকা: সুখ নিয়ে কম গবেষণা হচ্ছে না পৃথিবীতে। সুখ সম্পর্কে বিখ্যাত মানুষদের ধারনাও ভিন্ন ভিন্ন।সুখ নিয় আব্রাহাম লিংকনের একটি ঐতিহাসিক উক্তি রয়েছে-মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, সে ততটাই হতে পারে। সুখের কোনো পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশ অভিসারী করে তুলতে পারি। সুখ নিয়ে জুভেনালেরও একটা কথা প্রায়ই এখানে সেখানে উচ্চারিত হতে দেখা যায়- একজন সুখী মানুষ সাদা কাকের মতোই দুর্লভ। এর পরও আমরা সবাই ছুটছি সুখ নামের সেই সোনার হরিনের জন্য। তবে চারপাশটা যখন আনন্দে ভরে উঠবে, পৃথিবীটা যখন বাসউপযোগী হবে- ঠিক সেই পরিবেশটাকে আমরা সুখি পরিবেশ বলতে পারি নির্দিধায়।
সম্প্রতি সুখ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয় এবং এর ফলাফল সম্প্রতি 'সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷ জানা যাচ্ছে, হ্যাপিনেস বা সুখী-সুখীভাবের সঙ্গে অত্যন্ত গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে কার্ডিওভাসক্যুলার ব্যাধি হ্রাসের সম্ভাবনা৷ বিবাহ এবং পরিবার সর্ম্পকিত চিকিৎসক জেন গ্রিয়ার-এর মতে অতৃপ্তি বা অ-সুখ জন্ম দেয় নানা রকমের ব্যাধির৷ তিনি বলেন, 'মানুষের পজিটিভিটি তার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে তাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে৷'
যোগী ক্যামেরন অ্যালবর্জিয়ান বিশ্বাস করেন স্বাস্থ্য ভালো রাখার বাইরেও হ্যাপিনেসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মানুষের জীবনে৷ কারণ, সুখী মানুষেরা তাঁদের কাছাকাছি মানুষদেরও সুখী থাকতে সাহায্য করেন৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের প্রভাবে আরও নতুন-নতুন সুখী মানুষেরও জন্ম হয়৷ আর এই কারণেই পৃথিবীটা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে৷
হিউম্যান বিহেভিয়ার এক্সপার্ট প্যাট্রিক ওয়ানিস জানিয়েছেন, 'বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পরিবর্তিত হয়৷ আমাদের চাহিদার বদল ঘটে, জীবন সম্পর্কে ধারণাও যায় বদলে৷'
মানসিক স্বাস্থ্যের উপদেষ্টা এস্থার অ্যাডলার মনে করেন, 'শিশুরা তখনই সুখী হয়ে ওঠে, যখন তাদের চাহিদা মেটানো হয়৷ এই চাহিদার মধ্যে অবশ্যই একই সঙ্গে রয়েছে শিশুর শারীরিক চাহিদা এবং মানসিক চাহিদা৷' তাই সুখী মানুষ হিসেবে কোনও শিশুর বেড়ে ওঠার পিছনে বাবা-মায়ের সুখী পরিবেশ নির্মাণ করার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে৷ শিশু মনোবিদ ডন ম্যাকম্যানিস বলেন, 'আমাদের মস্তিষ্ক হল একটা সোশ্যাল অর্গানের মতো৷ তাই বাবা-মায়ের সুখীভাব সঞ্চারিত হয় শিশুদের মধ্যেও৷' ম্যাকম্যানিসের মতে, 'শিশুরা সুখে থাকে নিজের পরিবারের মধ্যে থাকতে পারলেই যেখানে উষ্ণতা এবং ভালোবাসা রয়েছে তার জন্য৷'
সব বাচ্চাই বড় হয় একটা সময়৷ কৈশোরে সুখ নির্ভর করে তার সাফল্য এবং ব্যর্থতার ওপর৷ এবং অন্যান্য সমবয়সীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর৷ ম্যাকম্যানিসের মতে, 'কোনও বাচ্চাই সব সময় সুখী থাকতে পারে না৷ বাবা-মায়েদের উচিত কিশোরদের আবেগ সংযত করা শেখানো৷ কীভাবে ক্রোধ এবং চাপ নিয়ন্ত্রণ করবে সে সেটা ছোটবেলা থেকেই শেখানো উচিত৷
প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে সুখের সংজ্ঞা বদলে যায়৷ তখন মানুষ বুঝতে শেখে 'এই' জিনিসটা তাকে সুখ দিতে পারে, 'ওই' জিনিসটা দিতে পারে না৷ মনোবিদ সামান্থা মাধোসিং মনে করেন, 'এই কারণেই প্রতিটি মানুষের মধ্যেই একটা সময় মিডলাইফ ক্রাইসিস দেখা দেয়৷ তাঁরা সুখের সন্ধানে ব্যর্থ হয়ে জীবনের ভিন্নতর অর্থ খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা করে৷'
সাইকোথেরাপিস্ট জেনিফার হাওয়ার্ড বলেন, 'জীবনে সব পেয়ে যাওয়া মানে সুখ নয়, বরং পাওয়ার একটা নেশা৷ কারণ সুখ কখনওই তাত্ক্ষণিক কিছু পাওয়া নয়৷'
সুখ পাওয়ার কতগুলো তাই সহজ নিয়ম রয়েছে৷ এক, নিঃশব্দে কয়েক মুহূর্ত জীবনে যা পেয়েছেন তার জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিন৷ দুই, যা আপনার নিয়ন্ত্রণে নয়, তার জন্য কোনও দুশ্চিন্তাই করা নয়৷ তিন, অচেনা মানুষের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে থাকুন নিরন্তর৷ চার, ভালো কাজের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করুন৷ পাঁচ, জীবনের ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করুন৷
(ঢাকাটাইমস/১১ মার্চ/এসআই/এআর/ ঘ.)