logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
বিএনপির এ কী হাল!
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০৯:২৭
image



ঢাকা: সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন নিয়ে পাঁচবার সাংবাদিকদের কাছে ক্ষুদে বার্তা আসে। প্রথম বার্তায় জানানো হয়, সংবাদ সম্মেলন হবে গুলশানের চেয়ারপারসনের কার‌্যালয়ে, যাতে কথা বলবেন মহাসচিব। এর কিছু সময় বাদে ভেন্যু পরিবর্তন করে নয়াপল্টনের কথা বলা হয়। পরে আবার গুলশানে করার কথা জানানো হয়। এখানেই শেষ নয়, এই সংবাদ সম্মেলনটি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নয়াপল্টনে করবেন বলে জানানো হয়।






শেষ পর‌্যন্ত সময় ও স্থান ঠিক করে বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করলেও ততক্ষণে সাংবাদিকদের ঘুম হারাম! রাত থেকে পাঠানো শুরু হওয়া ক্ষুদে বার্তা ক্ষণে ক্ষণে বদলানোর  ফলে বিপাকে পড়তে হয় তাদের।






বিএনপি বিটে কাজ করেন এমন সাংবাকিদকরা রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ ঘটনায়। তবে তা আমলে নেননি দলটির দপ্তরে থাকা নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ তাদের।






এমনটা যে প্রথম ঘটেছে তা নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এমনটা হয়েছে।






এমনকি জীবিত ব্যক্তির জন্য শোকবার্তা পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার।






এ নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একে-অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতেও দেখা গেছে। দায় এড়াতে মাঝে মাঝে গুলশান ও নয়াপল্টন কার‌্যালয়ের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। কিন্তু এই ‘বিশৃঙ্খলা’ থেকে যে দলটি বেরোতে পারেনি, সেটির প্রমাণ গত বিবৃতির ঘটনা।






একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিনসহ গুম হওয়া নেতাদের সন্ধানের দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়ে গণমাধ্যমে বার্তা পাঠায় বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলুর স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি পাঠানো হয় বেলা তিনটা ৫৮ মিনিটে। ওই সময় কার‌্যকারিতা হারালেও সারা দেশে চলছিল দেশব্যাপী ২০ দলের অবরোধ।






অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো এই বিবৃতি তখন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু বিকেল ৫টা ২৪ মিনিটে একই ব্যক্তি নতুন বিবৃতি দিয়ে জোটের চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠানের কথা বলেন।






গত রবিবার বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর হায়দার খানের মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে গণমাধ্যমে দলের চেয়ারপারসন ও মহাসচিবের পক্ষ থেকে শোকবার্তা পাঠানো হয়। অথচ আলমগীর হায়দার দিব্যি জীবিত।  এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হয়।






পরে বিকেল ৫টা ২৭ মিনিটে নতুন করে বিবৃতি দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে শোকবার্তা পাঠানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়।






দুই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি।






অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বিভিন্নভাবে পোস্ট দিতে দেখা গেছে। এ জন্য সবাই দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ওপর দায় চাপিয়েছেন।






বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সিনিয়র যুগ্ম  মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে একাধিকবার টেলিফোন করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।






তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একজন নেতা বলেন, “বিএনপির দপ্তরের হ-য-ব-ল-ল অবস্থা ও সতর্কতার অভাবে এমনটা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা বিব্রতকর।”






গত ১২ মার্চ  জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা কবি রফিক আজাদের মৃত্যুর খবর দিয়ে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। এ নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়। পরে অবশ্য তিনি ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সংশোধিত পোস্ট দেন।






বিএনপির এই হ-য-ব-র-ল অবস্থা যে কেবল বিবৃতির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তা নয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা-ই। দেশের অন্যতম বড় দলটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট নির্দিষ্টভাবে দেখভালের কেউ নেই। ফলে নিয়মিত তথ্য আপডেট হচ্ছে না সেখানে।






১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর গত তিন সপ্তাহে প্রায় ২০ জন নেতা নতুন দায়িত্ব পেলেও বুধবার পর‌্যন্ত বিএনপির ওয়েবসাইটে ওই নেতাদের আগের পদে দেখা গেছে। দল ছেড়ে গেছেন অথবা মারা গেছেন এমন নেতাদেরও দলের শীর্ষপদে দেখা যাচ্ছে এখনো।






বুধবার দুপুরের দিকে ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা গেছে- জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনো ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে আছেন। স্থায়ী কমিটিতে আছেন ড. আর এ গণি, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, যারা মারা গেছেন।






ওয়েবসাইট দেখভাল করে থাকেন গুলশান কার‌্যালয়ের এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আসলে নির্দিষ্ট করে কাউকে দায়িত্ব না দেয়ার কারণে নিয়মিত তথ্য আপডেট হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর তালিকা নতুন করে আপডেট করা হবে।”






(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/মোআ)