logo ১২ জুলাই ২০২৫
ঘোড়ার ঘাস কেটে সুখী ওরা!
এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
০৭ মে, ২০১৬ ২২:৩৬:৪০
image



ঢাকা: কোনো কাজে ব্যর্থ হলে অবধারিতভাবেই শুনতে হয় ‘ঘোড়ার ঘাস কাট’! ‘ঘোড়ার ঘাস কাটা’ প্রবচনটি অতি পরিচিত হলেও আমরা কজনই বা তা দেখেছি? অথবা কখনো কি দেখেছি ঘোড়ার ঘাস?






দেড় কোটি মানুষের এই রাজধানীতে জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার জন্য মানুষ কত কিছুই না বেছে নেয়! ঘোড়ার ঘাস কাটাকে পেশা হিসেবে নেয়ার ঘটনা চাক্ষুষ করলাম আজ শনিবার। এমনকি এই ঘোড়ার ঘাস কেটে ও বিক্রির আয় দিয়ে চলছে বেশ কয়েকটি পরিবারের ভরণপোষণ, সন্তানের লেখাপড়া। সুখেই চলছে তাদের সংসার।






ইট-পাথরের রাজধানীতে তাদের কাছ থেকে ঘাস কেনেন নিমতলীর গরুর ফার্ম, সদরঘাটের ঘোড়ার মালিকরা এবং যারা গরু, ছাগলসহ গৃহপালিত তৃণভোজী পশু পালন করে, তারা। এ ছাড়া রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঘোড়ার জন্য ঘাস সরবরাহ করা হয়।






শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হল এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম প্রেসক্লাবের দিকে। হলের বিপরীতে ফুটপাতে চোখে পড়ে কিছু মানুষের কর্মব্যস্ততা। কাছে গিয়ে দেখা গেল কেউ কাঁচি দিয়ে ঘাস কাটছে, কেউ সেগুলো বস্তাবন্দি করছে। কেউ বাঁধছেন আঁটি, আবার কেউ ভ্যানের উপরে ঘাসের বস্তা সাজাচ্ছেন।






কী এসব? জানাল, ঘোড়ার ঘাস কাটছেন। মজা করছে ধরে নিয়ে আর একটু কথা বাড়ালাম। না, সত্যিই তারা ঘোড়ার ঘাস কাটছেন। তবে এই ‘ঘোড়ার ঘাস কাটা’য় ব্যর্থতার গ্লানি নেই কোনো।






তাদের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে কথা হয় ঘোড়ার ঘাস ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তার বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানায়। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, ঘোড়ার মালিকরা ১-২ বস্তা করে ঘাস অর্ডার দেয়। অর্ডার অনুযায়ী তাদের ঘাস সরবরাহ করা হয়।






সাইদুর রহমান প্রতিদিন মান্ডা বালুর মাঠ এলাকা থেকে নিজেই ঘাস কেটে আনেন। প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ বস্তা ঘাস কাটতে পারেন তিনি। প্রতি বস্তা ঘাস ১০০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন তার গড়ে আয় হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। বাবা, মা, স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। প্রতি সপ্তাহে তিনি বাড়িতে টাকা পাঠান। ঘাস বিক্রির টাকায় মেয়ের পড়ার খরচ দিয়েও সুখেই কেটে যাচ্ছে তার সংসার।






পাশেই আর একজন ঘাস ব্যবসায়ী জসিম। তার বাড়িও শেরপুরের শ্রীবরদী থানায়। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানায়, প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঘাস সরবরাহ করেন তিনি। সেখানে অবশ্য কেজি হিসাবে ঘাস সরবরাহ করা হয়। প্রতি কেজি ঘাস ৪ টাকা।






জসিম টঙ্গীর এস্তেমা মাঠ, বসুন্ধরা, মান্ডা বালুর মাঠ, মাতুয়াইল কোনাপাড়া, গাবতলী থেকে ঘাস সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন তিনি ৮ থেকে ১০ বস্তা ঘাস কেটে বিক্রি করতে পারেন। তার আয় প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তার চারজনের সংসার এই আয় দিয়ে মোটামুটি সুখেই চলে যায়।






পাশের ভ্যানে ঘাসের বস্তা তুলতে ব্যস্ত নূর ইসলাম। তার বাড়িও একই থানায়। ঘাসের বস্তা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, সেকশন বাজারে একজন ঘোড়ার মালিকের তিন বস্তা ঘাসের অর্ডার আছে। সেখানেই ঘাস সরবরাহ করতে যাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গাভির ঘাসও সরবরাহ করেন বলে জানান।






নূর ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, শাহবাগ থানার ওসি একটি গাভি পালন করেন। তার জন্য একদিন পর পর এক বস্তা করে ঘাস সরবরাহ করে থাকেন। এই ঘাস বিক্রি করে তার গড়ে প্রতিদিন আয় হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, যা দিয়ে তার সংসার সুখেই চলে যায়।






ঘাস বিক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন। কথা হয় তার সঙ্গে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি দীর্ঘ দিন যাবত এই ঘাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি অবশ্য নিজে ঘাস কাটেন না। গাবতলী থেকে ২০ থেকে ২৫ বস্তা করে কিনে আনেন। গাবতলী থেকে প্রতি বস্তা ঘাস ৭০ টাকা করে কেনেন এবং তা ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তাতে তার ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ হয়।






এখানেই আরও ব্যবসা করেন বিল্লাল ও আসলাম। তারা মান্ডা এলাকা থেকে ঘাস সংগ্রহ করেন।






পাঁচ বছর ধরে ঘাসের ব্যবসা করছেন আসলাম। ছয়জন নিয়মিত ক্রেতার কাছে ঘাস সরবরাহ করেন। এ ছাড়া কেউ কেউ আছেন, যারা এখানে এসে কিনে নিয়ে যায়। স্ত্রী আর দুই ছেলে সবাই গ্রামে থাকে। আর তিনি একা থাকেন ঢাকাতে। ঘোড়ার ঘাস কেটে মন্দ চলছে না সংসার।






(ঢাকাটাইমস/৭মে/জিএম/মোআ)