ঢাকা: মানুষের কত রকম নেশাই না থাকে।ব্রিটেনের ৪০ বছর বয়সী তাহির নাজির এরকমই একজন। তার কাজই ছিল নানা উপায়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হানা দেয়া এবং ছাত্রীদের হোস্টেলে অনুপ্রবেশ করে দুর্বল মুহূর্তগুলো কাজে লাগিয়ে মেয়েদের সঙ্গ আদায় করা। প্রয়োজনে জোরপূর্বক নারী সঙ্গ পাওয়ার চেষ্টাও করতো সে।সম্প্রতি এরকম একটি ঘটনায় তাহির নাজিরের ১২ বছরের জেল হয়েছে।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাহির নাজির নিজেকের একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে জাহির করতো। বেশ পরিপাটী হয়ে সে স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত এবং সেখানকার নারী শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে লুকিয়ে হানা দিত। তার মূল টার্গেট ছিল, হোস্টেলের মাতাল ছাত্রীরা।
সম্প্রতি ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্ট তাকে ছাত্রী হোস্টেলে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ধর্ষণ চেষ্টা, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ১২ বছরের জেল দেয়।
আদালতে তাহির তার এই পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সব কথাই খুলে বলেন। তিনি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্কটল্যান্ডের ইনভার্নস এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়সহ আবিরদিন, ডান্ডি, এডিনবার্গ, গ্লাসগো, ম্যানচেস্টার, অক্সফোর্ড, ব্রিস্টল এবং কার্ডিফের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের হোস্টেলে ঢুকে উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কাহিনি খুলে বলেন।
নাজির নিজেকে একটি হসপিটালিটি এবং এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দাবি করে।
বিচারক মার্টিন স্টিগার বলেন, ছাত্রীনিবাসের প্রবেশপথসহ প্রয়োজনীয় সব ছবি তুলে হোস্টেল সম্পর্কে একটা ধারণা নিত।পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নকল আইডি কার্ড ঝুলিয়ে হোস্টেলে প্রবেশ করত।
মামলার আইনজীবী বলেন, যুক্তরাজ্যজুড়ে ভ্রমণের সময় তাহির নাজির ভায়াগ্রা এবং কোকেইন গ্রহণ করত। এসব গ্রহণের পর তাহির তার নিজের গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ত। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কার্ডিফের একটি হোস্টেলে প্রচণ্ড মাতাল অবস্থায় এক নারী শিক্ষার্থীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।পরে ওই শিক্ষার্থীদের রুমমেটরা তাহিরকে জোর করে বের করে দেয়।
তাছাড়া, গত নভেম্বরে ম্যানচেস্টারের নিউ লরেন্স হাউসে ছাত্রীদের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে নাজির। যা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে।ওই সময় সে একটি মেয়ের কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে। ততক্ষণে ওই কক্ষে থাকা এক নারী শিক্ষার্থী নাজির রুমে প্রবেশের আগেই দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর নাজির অন্য একটি কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেখানে একজন নারী ঘুমিয়ে ছিল। নাজির ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন তার সঙ্গে ওই নারীর ধস্তাধস্তিও হয়।
এই ঘটনার ঠিক পাঁচ দিন পর ম্যানচেস্টারের কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী থানায় অভিযোগ করেন। ঐ অভিযোগের ভিত্তিতে নাজিরকে পুলিশ আটক করে। যৌন নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে নাজিরের ডিএনএ’র মিল খুঁজে পায় পুলিশ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ম্যানচেস্টার আদালত তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়।