logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
তারেককে খালাস দেয়া বিচারককে খুঁজে পাচ্ছে না দুদক
মোসাদ্দেক বশির
১৫ জুলাই, ২০১৬ ০৮:৫৭:২০
image




ঢাকা : অর্থপাচার মামলায় সহযোগী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাজা হলেও প্রধান অভিযুক্ত বিএনপির নেতা তারেক রহমানের খালাসের রায়কে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছে না সরকার। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে ‍দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি বিচারিক আদালতে রায় দেয়া বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কিন্তু আড়াই বছরেও বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান কার‌্যক্রম শেষ করতে পারেনি দুর্নীতিবিরোধী সরকারি সংস্থাটি।







মোতাহারের কর্মজীবনের শেষ রায় ছিল তারেক রহমানের মামলাটির। এই রায়ের পরপরই অবসরে যান তিনি। ‘অস্বাভাবিক’ রায়ের পেছনে অবৈধ লেনদেন থাকতে পারে বলে সে সময় অভিযোগ করেছিলেন সরকারি দলের নেতারা। আর দুদক মোতাহারের সম্পদের তথ্য জানতে চেয়ে নোটিশ করে। এরই মধ্যে গোপনে দেশ ছাড়েন মোতাহার।






পরে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন তিনি। আর এই তথ্য পেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে মোতাহারের বিষয়ে তথ্য দেয়ার অনুরোধ করে পাঠানো হয় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট বা এমএলএআর। তার অবস্থান জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয় আন্তর্জাতিক ‍পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলকেও। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও মালয়েশিয়া বা ইন্টারপোলের কাছ থেকে মোতাহারের বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি ‍দুদক। 






অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে জানান, তাদের মাধ্যমে দুদক ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবরে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে এই এমএলএআর পাঠায়। কিন্তু তার কোনো জবাব আসেনি এখনো। মালয়েশিয়ার কাছ থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দুদকের সচিব আবু আবু মো. মোস্তফা কামাল।






মোতাহারের বিপুল সম্পদ






মোতাহারের ‘অবৈধ সম্পদ’-এর তথ্য অনুসন্ধানে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদকে নিয়োগ দেয়া হয়। অনুসন্ধান শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দুদক।  এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও বিমানবন্দরে সতর্কসংকেত জারি করা হয়। তবে তার আগেই গোপনে বিদেশে চলে যান মোতাহার।






অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মোতাহার তার গ্রামের বাড়ি নাটোরে নামে-বেনামে প্রায় ৫০ বিঘা জমি কিনেছেন বলে তথ্য আছে দুদকের কাছে। অবসরের আগে আগে রাজধানীর ধানমন্ডিতে তিনি দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন বলেও জানতে পেরেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যেও বাড়ি আছে তার। ছেলেকে লন্ডনে পড়াশোনাও করাচ্ছেন মোতাহার।






দুদক মনে করছে, মোতাহারের সরকারি চাকরির বেতনের সঙ্গে এই পরিমাণ সম্পদ কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই তার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ করে সংস্থাটি। কিন্তু তারও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। আর মোতাহারের দেহরক্ষী ও গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদের পর আটকে যায় দুদকের অনুসন্ধান কাজ। মোতাহারের বিরুদ্ধে মামলা করা না করা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি আড়াই বছরেও।






জানতে চাইলে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তবে মোতাহার হোসেনের বক্তব্য না পাওয়ায় এ অনুসন্ধানের আর  অগ্রগতি সম্ভব নয়। 






তবে দুর্নীতিবিরোধী সরকারি সংস্থাটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে জানান, তারেক রহমানের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের রায়ের অপেক্ষায় আছেন তারা। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত দেখেই ব্যবস্থা নেবে দুদক।






মোতাহারের অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত নয় দুদক






বিচারক মোতাহারের লাপাত্তা হওয়ার পরপর তার মালয়েশিয়া যাওয়ার তথ্য আসে দুদকের কাছে। কিন্তু সেটি যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি এখনো। মালয়েশিয়ায় এমএলএআর পাঠানোর পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের দূতাবাসকেও একই অনুরোধ করে দুদক। কিন্তু তাদের মাধ্যমেও তথ্য পাওয়া যায়নি। এ কারণে মোতাহার আদৌ মালয়েশিয়ায় আছেন কি না, তা নিয়েই এখন সন্দিহান দুদক।  






এ কারণে মোতাহারের অবস্থান জানতে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।






দুদকের আপিলের রায় যেকোনো দিন






বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। এই আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।






রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর করা এই মামলায় তারেক-মামুনের বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৬ জুলাই। মামলায় বলা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশনস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পন্থায় ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের হিসাবে পাচার করা হয়, যার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তারেক খরচ করেন।






২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেককে বেকসুর খালাস ও মামুনকে অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক মোতাহার হোসেন। ৩৭ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক বলেন, ওই টাকা খরচ করার কথা তারেক রহমান অস্বীকার করেননি। ২০০৭ সালে দুদকে দাখিল করা তারেকের হিসাব বিবরণীতে তার উল্লেখ রয়েছে। তবে তিনি যে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন তা প্রমাণ হয়নি। তারেক ভয় দেখিয়ে মামুনের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেছেন- এ অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।






(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/ডব্লিউবি/মোআ)