ঢাকা : গুলশানের আর্টিজান রেস্টুরেন্ট এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের অদূরে পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা এবং জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, দেশের পরিস্থিতি এখন সংকটজনক এবং এই অবস্থায় সব দলকেই একসঙ্গে কাজ করা উচিত। তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নন আওয়ামী লীগের নেতারা।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, জামায়াত ছাড়লেই কেবল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা বা সংলাপ হতে পারে। তবে ঢাকাটাইমসকে একাধিক নেতা বলেছেন, জামায়াত ছাড়লেও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে-এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা মনে করেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা বা সংলাপে সুফল মেলার আশা বাতুলতা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন এবং সরকার পতন আন্দোলনে ব্যর্থতার পর চাপে পড়া বিএনপি আবার আলোচনায় আসতেই এই সংলাপের ডাক দিয়েছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
তাদের আহ্বানে সাড়া দিলে বিএনপির রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া ছাড়া আর কোনো ফায়দা হবে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
গুলশানের অভিজাত রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পরদিন ২ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে একই আহ্বান জানান বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। এর পরই সরকারি দলের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের আহ্বান জানায় বিএনপি। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপির এই জাতীয় ঐক্যের ডাককে বলেছেন তামাশা। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী দল জামায়াতকে জোটে রেখে বিএনপির ঐক্যের আহ্বান রাজনীতিতে গুরুত্ব পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোফায়েল বলেন, যে দল (জামায়াত) সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত, যাদের মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই দলের সঙ্গে নিয়েই যদি থাকতে চায় বিএনপি, তবে তারা তাই থাকুক।
এর আগে অর্থমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঐক্যের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে সেদিনও তিনি বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার কথা বলেন। মুহিত বলেন,খালেদা জিয়া এতোদিন পরে ঐক্যের কথা বলে ভালো কাজ করেছেন। তবে ঐক্যের জন্য অবশ্যই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে।
সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রসঙ্গ যতবারই এসেছে ততবারই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য। আওয়ামী লীগ সব সময় এই ঐক্য ছাড়ার শর্ত দিয়েছে আর বিএনপি এতে নারাজ। এই এক প্রসঙ্গে এবারও আলোচনা-সংলাপ বা ‘জাতীয় ঐক্য’ নিয়ে কোনও ধরনের সম্ভাবনার সুযোগ থাকছে না বলে মনে করেও আওয়ামী লীগের নেতারা।
জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলাকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু সরকার তাদের এই সুযোগ দেবে সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিয়েই সরকার জঙ্গি দমন করতে পারবে। বিএনপির এ ক্ষেত্রে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ মনে করছে, গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ বা সমর্থন থাকতে পারে। বিশেষ করে গুলশান হামলার ঘটনায় দেড়শ কোটি টাকা লেনদেন এবং তারেক রহমানকে জড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বদলে বরং জঙ্গি তৎপরতায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্তে আগ্রহী আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা অতীতে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস মোকাবেলা করেছি। এবারও আমরা দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়েই মোকাবেলা করবো। কিন্তু তার জন্য বিএনপির সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন নেই। আমরা বরং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সব শক্তিকে এক করতে চাই, তাদের নিয়ে বসতে চাই। জনগণের মধ্যে জঙ্গিবিরোধী ঐক্য ও সচেতনতা গড়তে চাই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করা। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সচেতন করতে জনগণকে নিয়ে কাজ করা। প্রধানমন্ত্রী তো বলছেন চাইলে যে কোন দলই সরকারকে সহায়তা করতে পারবে। বিএনপি যদি মনে করে দেশের জন্য কিছু করবে তাহলে তারা সরকারকে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু আসলে তারা তা করবে না, বৈঠক বৈঠক বলে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়, নিজেদের প্রচার করতে চায়। আমরা বিএনপিকে যে সুযোগ দিতে যাব কেন?
(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/ডব্লিউবি)