logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
আনুষ্ঠানিক যাত্রা আজ
পায়রা বন্দর: বদলে দেবে দক্ষিণের অর্থনীতির চিত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:২৭:২৯
image



দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু আজ শনিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন। আনুষ্ঠানিক চালুর মধ্য দিয়ে  দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নের ভবিষ্যৎ কেন্দ্রস্থল হবে এ বন্দরটি। এতে বদলে যাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র। পায়রা বন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন হওয়ার খবরে দক্ষিণের  জনপদ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেছে। মানুষের মাঝে চাপা আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে।






বন্দরটি উদ্বোধনকালে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. সাইদুর রহমান কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরে উপস্থিত থাকবেন।






নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পায়রা বন্দরের বহিঃনোঙ্গর এবং রাবনাবাদ চ্যানেলের মুরিং বয়াতে জাহাজ মুরিং করে মালামাল খালাসের মাধ্যমে অপারেশন কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে চীন থেকে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি ফরচুন বার্ড’ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন পাথর নিয়ে বহিঃনোঙ্গরে অবস্থান করছে। এসব পাথর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে আরো দু’টি বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।






প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম উদ্বোধন করলে স্বল্প পরিসরে পায়রা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হবে। আর এ অপারেশনাল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পর ২০১৩ সালে সৃষ্ট এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।






প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।






উদ্বোধনের পর থেকে এ বন্দর ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তোলার জন্য তিনটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম লক্ষ্যমাত্রা- বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ ও লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা। দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রা- আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে পায়রাবন্দরে অন্তত একটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি বাল্ক টার্মিনাল প্রস্তুত করা এবং তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা- পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে (২০২৩ সাল) ধাপে ধাপে বন্দরের অন্যান্য আনুষঙ্গিক পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গড়ে তোলা।






এ অপারেশনাল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।






পূর্ণাঙ্গ বন্দর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম ১৯টি কম্পোনেন্টে ভাগ করা হয়েছে। যার ৬টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ১৩টির মধ্যে ৭টি জিটুজি ও ৬টি ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের (এফডিআই) মাধ্যমে করার চেষ্টা চলছে।






সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পোনেন্ট হলো মেইন চ্যানেল ড্রেজিং। ইতোমধ্যে বিশ্ববিখ্যাত একটি কোম্পানির সঙ্গে এফডিআই পদ্ধতিতে এ কাজ করার জন্য এমওইউ করা হয়েছে। পায়রাবন্দরের প্রণীত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আধুনিক বন্দর সুবিধা সম্বলিত পরিবেশবান্ধব বন্দর গড়ে উঠবে এবং শিল্পায়নসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে।






প্রায় ছয় হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে উঠছে সমগ্র পায়রা সমুদ্রবন্দর। এ বন্দরে তৈরি হচ্ছে- কন্টেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল। সেই সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধশিল্প, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তেল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ আরো অনেক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হলে গ্যাসের মাধ্যমে এখানেই সার কারখানা চালু করা সম্ভব হবে।






পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ইপিজেড, এসইজেড, জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত খাতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। নতুন শিল্প এলাকা গড়ে ওঠার ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ভোলা জেলার বাসিন্দারা।






পায়রা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. সাইদুর রহমান জানান, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের জন্য পায়রা বন্দর প্রস্তুত রয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বন্দরের উদ্বোধন করবেন। বন্দরটির কার্যক্রম চালু হলে দক্ষিণাঞ্চল মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলেও মনে করেন তিনি।






প্রস্তুতি সম্পন্ন, উৎসবের আমেজ






আমাদের কলাপাড়া প্রতিনিধি জানান, উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের পায়রা বন্দর এলাকায় নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্ততি। রং বেরংয়ের ফ্লাক ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানে হয়েছে নতুন সাজে। পণ্য খালাসের জন্য আন্ধারমানিক নদীতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১২টি লাইটার জাহাজ। দক্ষিণাঞ্চলের বহু প্রতীক্ষিত তৃতীয় সামুদ্রিক বন্দর পণ্য খালাসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে এ খবরে গোটা উপকূলজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।






পায়রা বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের কম্পাউন্ডের মধ্যে ইতিমধ্যে একটি প্রশাসনিক অফিস, কর্মকর্তাদের থাকার জন্য আবাসিক ভবন, নিরাপত্তা ভবন, ব্যারাক হাউস, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, অভ্যন্তরীণ সড়ক, শুল্কায়ন কার্যক্রম এবং বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।






জানা গেছে, দেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের ৫৩ হাজার টন পাথর নিয়ে বাংলাদেশের জল সীমানায় (হীরন পয়েন্টে) চীনা জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড অপেক্ষা করছে। রামনাবাদ চ্যানেলের বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাস করার জন্য এমভি পেয়ারা-৬, এমভি ফেকু মিয়া, এম ভি সৈনিক-৫, এম ভি নিউটেক-২, এমভি নিউটেক-৬, এম ভি মেরিন-৫, এম ভি মেরিন-৮, এম ভি টাইগার অব ইস্ট বেঙ্গল-৭, কেএসএল প্রাইড এবং কেএসএল গ্র্যাডিয়েটরসহ ১২টি লাইটার এবং ইন্টারন্যাশনাল সারভাইভাল জাহাজ জেটি সংলগ্ন নদীতে অপেক্ষা করছে। এ জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ যাবতীয় ব্যাপক প্রস্ততি নিয়েছেন।






পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মুহাম্মদ রেজাউল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু হলে বন্দরটি সচল হবে। ফলে এলাকার জীবনযাত্রায়ও এর প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতিও গতিশীল হবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।






(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/জেবি)