logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
গণশুনানিতে কর্ণফুলীর গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন
ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব আমলে নেয়নি বিইআরসি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১৪ আগস্ট, ২০১৬ ১৭:২০:০৭
image



ঢাকা:  কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।






রাজধানীর কাওরান বাজারের টিসিবি ভবনে বিইআরসি অডিটরিয়ামে গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তন নিয়ে গণশুনানিতে এই প্রস্তাব তোলা হলে তা আমলে না নেয়ার কথা জানায় কমিশন।






বিইআরসির আয়োজনে ৭ আগস্ট শুরু হওয়া এ গণশুনানিতে আজ রবিবার অংশ নেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।






সংস্থাটি শুনানিতে ভারিত গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ ০.২৩২৭ টাকা থেকে ০.৭৯০০ টাকা করার প্রস্তাব করে। আর ভোক্তা পর্যায়ে ভারিত গড়ে ৬ দশমিক ১০ টাকা থেকে ১১.৮৯ টাকা করার প্রস্তাব করে। বৃদ্ধির প্রস্তাবের এই হার ৯৪.৯২ শতাংশ।






কর্ণফুলীর এসব প্রস্তাব উত্থাপনের শুরুতেই কমিশন চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, “আপনারা ডিস্ট্রিবিউশন চার্জের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করতে পারেন। কারণ এটা সরাসরি আপনাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। কিন্তু ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করার এখতিয়ার আপনাদের নেই। আপনারা এটা করতে পারেন না।”






কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, “আজকের এই গণশুনানিতে কর্ণফলীর ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপিত হবে না। এই প্রস্তাব আমলেই নেয়া হলো না।”






এরপর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বাকি বক্তব্য শেষে তাদের জেরা করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা ড. এম সামসুল আলম।






তিনি কর্ণফুলীকে ১৮টি প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভোক্তাভেদে ৬৩ শতাংশ থেকে ১৪০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিক কি না, গত ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর এত অল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও এত বেশি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, এমন মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত ভোক্তাদের জন্য সহনীয় কি না।






সামসুল আলমের এসব প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব দিতে পারেনি কর্ণফুলী। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিটিসিএলের ‘আনোয়ারা ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন’ ও ‘মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন’ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২ শতাংশ হারে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান ও মিরসরাইয়ে অর্থনেতিক অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩১১ কোট টাকা নিজস্ব অর্থায়নের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এসব প্রস্তাব করা হয়েছে।






কর্ণফুলীর এই প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলছে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।






কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম মনোয়ার হোসেন আখন্দ জানান, গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ ঘনমিটার প্রতি ০.২৯৫৬ টাকা বিবেচনায় কর্ণফুলী গ্যাসের রাজস্ব চাহিদা ১ হাজার ৫৩৩.৭৭ মিলিয়ন টাকা। একই সময়ে মোট চলতি পরিচালন রাজস্ব নিরূপণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮০০.৮৪ মিলিয়ন টাকা। সুপারিশকৃত রাজস্ব চাহিদা থেকে মোট চলতি পরিচালন রাজস্ব ২৬৭.০৭ মিলিয়ন টাকা বেশি। এসব বিবেচনায় কর্ণফূলী গ্যাসের বিদ্যমান ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে মনে করে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।






এ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর্ণফুলী গ্যাসের রাজস্ব চাহিদা ঘনমিটারপ্রতি ০.৪৯৫৫ টাকা। এর বিপরীতে কর্ণফুলি গ্যাসের বিদ্যমান আয় ঘনমিটার প্রতি ০.৫৮১৮ টাকা। এর মধ্যে ঘনমিটারপ্রতি ০.২৪২৮ টাকা অর্জিত হবে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ থেকে। আর অবশিষ্ট ০.৩৩৯০ টাকা অর্জিত হবে অন্যান্য আয় থেকে।






২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব চাহিদা মেটাতে কর্ণফুলী গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ প্রয়োজন ঘনমিটারপ্রতি ০.১৫৬৫ টাকা। বিদ্যমান ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ ০.২৪২৮ টাকা। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর্ণফুলি গ্যাসের রাজস্ব চাহিদার তুলনায় ঘনমিটারপ্রতি ০.০৮৬৩ টাকা অতিরিক্ত আয় হবে। সুতরাং কর্ণফুলীর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।






কারিগরি কমিটির এই মূল্যায়নের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ক্যাবের ড. সামসুল আলম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জুনায়েদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা প্রমুখ।






আর শুনানিতে বিচারকের আসনে ছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান, কমিশনের সদস্য মাকসুদুল হক, রহমান মুরশেদ।






(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এমএম/মোআ)