টিএসসির সদর গেট হয়ে ভেতরে ঢুকতেই মানুষের আনাগোনা। বিশেষ অনুষ্ঠান বা সভা না হলে সাধারণত ভরদুপুরে এতটা কৌতূহল উদ্দীপনা চোখে পড়ে না। অডিটোরিয়াম গেটে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। 'খাচার ভেতর অচিন পাখি..' গানের মিষ্টি সুর ভেসে আসছে। মিষ্টির পরিপূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করতে কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। সোজা রওনা হলাম অডিটোরিয়ামের দিকে। কিন্তু না এক, স্বেচ্ছাসেবী জানালেন আজকের গানের আসর এক নক্ষত্রের স্থান বদল হতে না দেয়ার, আজকের এই সুরের আসর সারাক্ষণ গীত জমে থাকা এক পাখিকে মুক্ত করার, যিনি দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারকে পরাজিত করে আবারো সুরের মালা গাঁধতে চাইছেন, আবারো গাইতে চাচ্ছেন ‘এই নীল মণিহার.. আগে যদি জানতাম..।’ শান্ত চোখে মানিব্যাগ বের করে দ্রুত হাত বাড়িয়ে বললাম, হাতের কব্জি বরাবর সিলটা দেবেন যেন সহজে মুছে না যায়।
লম্বা কাহিনী হয়ে গেল। তবে পাঠকের নিশ্চয়ই বুঝতে বেগ পেতে হয়নি। আপনারা আগেই জেনেছেন আশির দশকের জনপ্রিয় শিল্পী, আমাদের গীত বিতান লাকি আখন্দের কথা। গুণী এ শিল্পীর চিকিৎসার সাহায্যার্থে মঙ্গলবার সকাল থেকে টিএসসিতে শুরু হয়েছে লাকি আখান্দের জন্যে কনসার্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি এ কনসার্টের আয়োজন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও তরুণ প্রজন্মের ৩০টি ব্যান্ড এ কনসার্টে লাকির জন্যে গান গাইবে।
কনসার্টে আসা স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অপু মোস্তফা বলেন, ‘আব্বু আম্মু দুজনেই ওনার প্রচণ্ড ভক্ত। স্কুলে যাওয়া ফেরা দুই সময়েই লাকী আখান্দের গান চলত। তখন তেমন বুঝতাম না। এখন সময় হলেই স্যারের 'হৃদয় আমার' গানটা শুনি। তবে গানের জগতকে স্যারের দেয়ার ঝুলিটা এখনো বিশাল, সেই ঝুলি আমরা ভাঙতে দেব না। তাই হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দেব না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড দল সোসাইটি দুই দিনব্যাপী এ কনসার্টের আয়োজন করেছে। কনসার্ট চলবে ১৬ ও ১৭ই আগস্ট প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আয়োজকরা জানান, সংগীত শিল্পী লাকি এখন ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কনসার্টের মাধ্যমে তার চিকিৎসা তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে উপভোগ করা যাবে দুই দিনের এ কনসার্ট।
দুই দিনের কনসার্টের অংশ নেয়া ব্যান্ডগুলো হলো- ‘তাহসান দ্য ব্যান্ড’, আর্বোভাইরাস, অ্যাভয়েড রাফা, ওল্ড স্কুল, অ্যাশেজ, সহজিয়া, চাতক, ওয়ারসাইট, দুর্গ, অর্জন, হ্যাশ, নিউ সোনার বাংলা সার্কাস, চাতক, আনস্পেসিফাইড, এক্সেনেমি, আপেক্ষিক, অর্ব অব উইন্টার, অ্যাক্রিড, অজ্ঞাতনামা, মানব, অসৃক, ঢাকা ১২০৭, রোদ, ইকুয়েশন, স্ক্রিচ, ফ্রিড, নীল নকশা, স্কিলড ও রেডিয়েশন।
১৯৬৫ সালে পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে বাবা একে আব্দুল হক ও মা নুরজাহান বেগমের ঘর আলোকিত করে এ উজ্জ্বল নক্ষত্রের আবির্ভাব। বিখ্যাত এ সুরকার মাত্র ১৪ বছর বয়সেই HMV পাকিস্তানে সুরকার হিসেবে রেকর্ড গড়েন। দু'বছর গড়াতেই স্বাধীন বাংলা বেতারে তালিকাভুক্ত হন সংগীত জগতের নীল মণিহার লাকি আখান্দ। দুই ভাই জলি আখান্দ ও হ্যাপি আখান্দ জনপ্রিয় সঙ্গিত শিল্পী হওয়ায় পারিবারিকভাবেই গানের আবহাওয়ায় বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। গুণী এই সঙ্গীত শিল্পী শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের বিভিন্ন গুণীদের নিজে যেমন সান্নিধ্য পেয়েছেন তেমনি তার গুণচ্ছটায় বিকশিত হয়েছে বর্তমান সময়ের অনেক সঙ্গীত প্রতিভা।
(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/দোহা/জেবি)