logo ০৪ জুলাই ২০২৫
ব্রিটিশ তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের দুঃসহ স্মৃতি
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
১৪ আগস্ট, ২০১৬ ২১:০৩:৩০
image



পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তাবাসসান খানমের(ছদ্মনাম) বয়স তখন ১৫ বছর। ব্রিটেনে ভালোভাবেই জীবন চলছিল তার। এক গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে ছুটে যায় নিজের জন্মভূমি পাকিস্তানে। সেখানে গিয়ে মুখোমুখি হন জীবনের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতার। ২০০৮ সালের পূর্বের এই দুঃসহ স্মৃতি আজো তাকে তাড়া করে বেড়ায়। সম্প্রতি তার সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয় পত্রিকায়।






সেখান থেকে জানা যায়, বন্দুকের নলেরমুখে নিজের চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তাকে বিয়ে বসেতে হয়েছিল। এর পর টানা তিন বছর তাকে আটকে রাখা হয় এবং চলে ধর্ষণ-নির্যাতন। এই তিন বছরের নিজের জীবনের লোমহর্ষক বর্ণনাই উঠে এসেছে তার ঐ সাক্ষাৎকারে।






যুক্তরাজ্যের ডনকাস্টারে খালার সঙ্গে থাকতেন তাবাসসান। নিজের জন্মভূমিতে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে তিন ভাইয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের উদ্দেশে বিমানে চড়ে বসেন। তার বাবা তখন মাকে খুন করার অপরাধে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।






পাকিস্তানে আসার পর বেশ কিছুদিন ভালোই চলছিল। একপর্যায়ে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে তার চেয়ে ছয় বছরের বড় চাচাতো ভাইকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে তিন বছর তাকে গৃহবন্দি করে রাখেন। যুক্তরাজ্যের পাড়ি জমানোর আশায়ই চাচাতো ভাই তাকে বিয়ে করে।






এক পর্যায়ে তাবাসসান মুক্ত হয়ে পাকিস্তানের আদালতে দ্বারস্থ হন। অনেক কাঠখড় পোহানোর পর আদালত তাদের ডিভোর্সের আবেদন মঞ্জুর করেন। দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে সক্ষম হন তাবাসসান। 






যুক্তরাজ্যে ফিরে সে জোরপূর্বক বিয়ে ঠেকানোর উপায় বাতলে দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন।এখন সেই নিয়েই কাজ করছেন তাবাসসান। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে।






তাবাসসান খানের বয়স ২৬ এখন। সানডে এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাবাসসান খান বলেন, ‘আমি চিন্তা করেছিলাম গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে পাকিস্তান যাব। এ কারণেই আমি খুবই উত্তেজিত ছিলাম। পাকিস্তানে যাবার পর দু’মাস পার হয়ে গেল। আমার স্কুল শুরু হয়ে যাবে তাই যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে চাইলাম। আমি আমার চাচাকে ফিরে যাবার কথা জানালাম। তিনি আরও কিছুদিন থেকে যেতে বললেন। এভাবে চার মাস পার হয়ে গেল। একদিন তিনি আমার রুমে পিস্তল নিয়ে হাজির হলেন। ভয় দেখিয়ে বললেন, উনার ছেলেকে বিয়ে করতে হবে।’   






তাবাসসান আরও বলনে, ‘আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। তিনি বললেন, আমি যদি বিয়েতে রাজি না হই তাহলে আমার ভাইদের মেরে ফেলবেন। আমি আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম। আমার সামনে তখন আর কোনো পথ খোলা ছিল না। বিয়ের রাতেই আমার চাচাতো ভাই আমাকে ধর্ষণ করলো। টানা তিন বছর প্রতি রাতেই ধর্ষণের শিকার হলাম। নিজেকে তখন ‘যৌনকর্মী’ মনে হতো। একটি কক্ষে বন্দি ছিলাম। নিজের মধ্যে গ্লানি চলে আসলো।’      






তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম সংস্কৃতিতে মেয়েরা যা করে আমাকে তাই করতে বলা হলো। পাকিস্তানের অনগ্রসর গ্রামের মানুষেরা মনে করে, তারা যা খুশি তাই আমাদের সঙ্গে করতে পারে। আমাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। আমরা হচ্ছি ভিসা পাওয়ার মাধ্যম।’






তাবসসান খান ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল, ব্রিটিশ নারীদের বিদেশে জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।






বর্তমানে ব্রিটিশ সরকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরগুলোতে ‘ফোর্স ম্যারেজ ইউনিট’ প্রতিষ্ঠা করেছে।






গত বছর এক হাজার ২২০টি জোরপূর্বক বিয়ের বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে তারা।






পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর পাকিস্তানে ৪৪ ভাগ বিয়েই হয়েছে জোরপূর্বক এবং এ নিয়ে মামলা হয়েছে। এসব মামলা মোকেবেলা করছে ‘ফোর্স ম্যারেক ইউনিট’। সূত্র: ডেইলি মেইল। 






(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এসআই/ এআর/ ঘ.)