logo ০৪ জুলাই ২০২৫
বিদেশি মালটায় রঙিন বরেন্দ্রভূমি
রিমন রহমান, রাজশাহী
১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০৮:২৪:২২
image



চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ঝিলিম ইউনিয়নের জামতলা গ্রামের মতিউর রহমান ২০১৩ সালে দুই বিঘা জমিতে মালটা চাষ শুরু করেন। পরীক্ষামূলক এই চাষে তাকে সহায়তা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। দ্বিতীয় শস্য বহুমুখিকরণ প্রকল্পের আওতায় তারা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত মালটার জাত দিয়েছিলেন মতিউরকে। প্রথম বছরেই সফল হন তিনি।






মতিউর লাভের মুখ দেখায় বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন মালটা চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। কমলা গাছ রোপনেও বাড়ছে আগ্রহ। একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, পেয়ারা বা অন্য ফলের তুলনায় মালটা চাষে খরচ কম। আবার জায়গাও লাগে কম। তাই তারা এই ফলের আবাদ বাড়াচ্ছেন।






একই প্রসঙ্গে হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদরা জানান, আমদানি করা ভারতীয় মালটার চেয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে উৎপাদিত মালটা সুস্বাদু। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় এতে লাভও বেশি। তাই বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষীরা দিনে দিনে মালটা চাষে ঝুঁকছেন।






চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার ও জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালে জেলায় দুই বিঘা জমিতে মালটা চাষ শুরু হয়। ২০১৪ সালে পাঁচ বিঘা, ২০১৫ সালে ১২ বিঘা জমিতে এর চাষ শুরু হয়। চলতি মৌসুমে তা বিস্তৃত হয়ে ৯৬ বিঘা জমি পর্যন্ত পৌঁছেছে।






মালটা চাষ শুরুর কারণ জানতে চাইলে প্রথম কৃষক মতিউর রহমান বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদের পরামর্শে মালটা চাষ শুরু করেন। শুরুর পর থেকে হর্টিকালচারের কৃষিবিদরা পরামর্শ ও সবসময় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছেন। পরের বছর থেকে দুই বিঘার বাগানে ফল ধরতে শুরু করে। ২০১৪-১৫ সালে মালটা বিক্রি করে তিনি ৫ লাখ টাকা আয় করেছেন।






তিনি আরও জানান, তার সফলতা দেখে জেলার অনেক চাষী বাণিজ্যিকভাবে মালটা চাষ শুরু করেছেন। তিনি আরো ১২ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে মালটার চারা রোপণ করেছেন।






‘মালটার স্বাদ নিয়ে প্রথমে ভয় ছিলো। কিন্তু পাকার পর দেখা গেছে এখানকার মালটা সুস্বাদু। তাছাড়া পাকার পরও অনেক দিন রেখে খাওয়া যায়। নষ্ট হয় না, স্বাদও ঠিক থাকে।’- বলছিলেন মতিউর।






নাচোল উপজেলার বাচ্চু মিয়া ৫০ বিঘা জমিতে কয়েক হাজার মালটা চারা রোপণ করেছেন। মালটার বিশাল এই বাগান বিষয়ে তিনি বলেন, অন্য ফলের চেয়ে মালটা চাষ লাভজনক। এত খরচও কম। চারা রোপণের দেড়-দুই বছরের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। তাই কৃষিবিদদের পরামর্শে চলতি মৌসুমে ৫০ বিঘা জমিতে মালটার চাষাবাদ শুরু করেছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে তার মালটা গাছগুলো বেশ ভালোভাবেই বেড়ে উঠছে। আগামী বছর থেকে ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।






চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, মালটা ও কমলার সম্প্রসারণে তারা কাজ করছেন। মালটা চাষ এভাবে সম্প্রসারিত হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। ফলে দেশের অর্থ সাশ্রয় হবে।






এদিকে মালটা চাষে কৃষকদের সফলতার খবর পেয়েছেন কৃষি সম্প্রাসরণর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। তাই চলতি বছর তিনি এই অঞ্চলে এসে মালটা বাগান পরিদর্শন করেছেন। কৃষকদের আগ্রহ দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।






 






মালটা চাষাবাদের উপায়






মালটা চাষের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম।






তিনি বলেন, মালটা চাষের জন্য জমি ভাল করে চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। তারপর দুই-আড়াই ফুট দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতার গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটি এক তৃতীয়াংশ একদিকে, নিচের বাকি মাটি অন্যদিকে রাখতে হবে। উপরের মাটির সঙ্গে ১০-১৫ কেজি পঁচা গোবর সার  বা কম্পোষ্ট, ১৫০ গ্রাম এমওপি, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫ গ্রাম বোরিক এসিড ও এক কেজি চুন মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গর্তের নিচ দিয়ে উপরের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে রেখে ১০ দিন পরে চারা রোপন করতে হবে। এভাবে করলে চারা ভালো থাকবে, মারা যাওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকবে না।






কমলায় আলোকিত আঙ্গিনা






বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেকেই বাড়ির আঙিনায় রোপণ করা হচ্ছে কমলার চারা। কেউ কেউ এরইমধ্যে ফল পেতে শুরু করেছেন।






রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় বাণিজিকভাবে মালটা চাষ এখনো শুরু হয়নি। তবে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪০০ বাড়িতে মিষ্টি কমলার গাছ আছে।






তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের সুইডেন প্রবাসী হাসানুজ্জামান মুন এক যুগ আগে শখের বসে যশোর থেকে একটি কমলা গাছ কিনে এনে বাড়ির উঠানে লাগিয়েছিলেন। গত দুই বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরছে গাছটিতে। শুধু রঙে নয়, খেতেও মিষ্টি তার গাছের কমলা। গাছটিতে কমলা দেখে স্থানীয় কৃষিবিদরা ধারণা করছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের পোড়ামাটিতে কমলা চাষের উজ¦ল সম্ভাবনা আছে। কিছুদিনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করার পরিকল্পনার কথা জানালেন হাসানুজ্জামান মুন।






তানোরে গত কয়েক বছরে এভাবে প্রায় ৮০টি পরিবার দুই থেকে তিনটি করে কমলার গাছ রোপণ করেছেন। এদের অনেকের গাছে ফলও ধরতে শুরু করেছে।






এ বিষয়ে উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমশের আলী জানিয়েছেন, কমলা গাছের উচ্চতা ও কমলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে এখানে থাই কমলা হবে। পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলই কমলা চাষের জন্য সম্ভাবনাময়।






(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/এমএইচ)