আগামীকাল রবিবার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করা হচ্ছে। বছরে ২৪টি পণ্য ও সেবা খাতে ২৪টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, ১৮টি পণ্য ও সেবা খাতে ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে রৌপ্য এবং ৯টি পণ্য খাতে ৯টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ব্রোঞ্জ ট্রফির জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ ট্রফি প্রদান করবেন। শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা।
এবার ২০১১-২০১২ এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের জন্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করা হচ্ছে। ২০১১-২০১২ ট্রফি বছরে ২৪টি পণ্য ও সেবা খাতে ২৪টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, ১৮টি পণ্য ও সেবা খাতে ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে রৌপ্য এবং ৯টি পণ্য খাতে ৯টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ব্রোঞ্জ ট্রফির জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
পণ্য খাত-নির্বিশেষে একটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণ ট্রফির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ২০১২-২০১৩ ট্রফি বছরে ২৬টি পণ্য ও সেবা খাতের ২৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, ১৯টি পণ্য ও সেবা খাতে ১৯টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে রৌপ্য এবং ১৫টি পণ্য খাতে ১৫টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ব্রোঞ্জ ট্রফির জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
পণ্য খাত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ রপ্তানি অবদানের ভিত্তিতে একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ ট্রফি প্রদানের জন্য মনোনীত হয়েছে। বর্ণিত দুটি ট্রফি বছরে মোট ১১৩টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে এ জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ও সনদ প্রদান করা হবে।
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান-২০১৬-এ নির্বাচিত বাংলাদেশের কৃতী রপ্তানিকারকদের মধ্যে ২০১১-২০১২ এবং ২০১২-২০১৩ ট্রফি বছরের জন্য সর্বমোট ৫২টি স্বর্ণ, ৩৭টি রৌপ্য এবং ২৪টি ব্রোঞ্জ ট্রফি ও সনদ প্রদান করা হবে। রপ্তানি বাণিজ্যের এসব কৃতি প্রতিষ্ঠানের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ট্রফিসমূহ বিতরণ করবেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং রপ্তানির প্রকৃতি ও পরিমাণ ব্যাপকতর পর্যায়ে উন্নীতকরণ অপরিহার্য। সরকার এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা প্রদান করে আসছে। রপ্তানি সহায়ক সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে মাত্র। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকাই মূখ্য। বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যে নানা প্রতিকূলতা বিদ্যমান। এর সাথে সংযুক্ত হচ্ছে বাণিজ্য প্রতিযোগিদের বিবিধ চ্যালেঞ্জ এবং দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের বিবিধ জটিলতা। এসব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে রপ্তানি খাত দৃপ্ত কঠিন প্রত্যয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য রপ্তানি বাণিজ্য উন্নয়নে মূখ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথোপযুক্ত সম্মান থাকা সমীচীন। এ নৈতিক বোধ থেকে সরকার রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়নে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ও সনদ প্রদান করা হয়। এতে রপ্তানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও পারস্পরিক সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার আবহ সৃষ্টি করেছে। শুরুতে এটি রাষ্ট্রপতির রপ্তানি ট্রফি হিসেবে নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে এটির নাম পরিবর্তন করে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কৃতি রপ্তানিকারকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করে থাকেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বছর পণ্য ও সেবার ৩২টি খাতে রপ্তানি বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করে থাকে। রপ্তানি আয়, আয়গত প্রবৃদ্ধি, নতুন পণ্যের সংযোজন, নতুন বাজারে প্রবেশ, কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন অবস্থা মূল্যায়নপূর্বক রপ্তানি বাণিজ্যে অবদান বিবেচনায় নিয়ে এ পদক দেয়া হয়। এসব মানদণ্ডের সাথে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার আর্থিক লেনদেন, বাণিজ্যিক স্বচ্ছতা, দেশের আর্থিক বিধানাবলীর যথাযথ অনুসরণ অবস্থা ইত্যাদি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদানের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী অর্থবছরের রপ্তানি ট্রফি সংশ্লিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করা হয়ে থাকে।
নারী উদ্যোক্তা এবং ইপিজেডস্থ ‘সি’ ক্যাটাগরির রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ ৩২টি পণ্য ও সেবা খাতের বাংলাদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহকে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ও সনদ প্রাপক হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সরকার কর্তৃক বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, এফবিসিসিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ চেম্বারের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এবং কমিটির প্রয়োজনে অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত উপ-কমিটি কর্তৃক সার্বিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে গাণিতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রাপক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/এইচআর/জেবি)