বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে যখন বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছে, তখন এই এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে যেসব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, সেসব স্থাপনার অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এসব স্থাপনাকে সংক্ষেপে কেপিআই বলা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি গেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, কেপিআই অন্তর্ভূক্ত হলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হয়। যেন কেউ অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় ঢুকতে না পারে বা কোনো হামলা করতে না পারে সে জন্য সব ধরনের সতর্কতামূল ব্যবস্থা নেয়া হয় এসব স্থাপনায়। পুলিশ, বিজিবি এমনকি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও যেন নিরাপত্তা পাওয়া যায়, সে ব্যবস্থাও করা থাকে এসব স্থাপনায়।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকার কেপিআই নীতিমালা প্রণয়ন করে। চলতি বছরের প্রথমদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করলে নীতিমালা প্রণয়নের ১৫ বছর পর কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালার প্রয়োগ শুরু হয়।সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর কানসাটসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়ায় বিদ্যুৎ খাতের স্থাপনা, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সরবরাহ কেন্দ্র এবং সঞ্চালন লাইনগুলো নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রামপালের পাশাপাশি কক্সবাজারে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র্র এবং পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকেও কেপিআই অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলা হয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে।
বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে। এরই মধ্যে মাটি ভরাট হয়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি কাজ শুরু হয়ে গেছে।
তবে বামপন্থি বিভিন্ন সংগঠন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর দাবি করে এটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনিও দাবি করেছেন এই কেন্দ্রটি সুন্দরবন ধ্বংস করে দেবে। ভারতের স্বার্থে সরকার এই বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলেও অভিযোগ খালেদা জিয়ার।
তবে সরকার বলে আসছে, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিরোধিতাকারীদের সবগুলো যুক্তির জবাবও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনের আগেই রামপালকে কেপিআইভুক্ত করতে চিঠি দেয়া হয়।
জানতে চাইলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আমাদের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি নিজেও ওই মন্ত্রণালয়ের দায়ি্ত্বে আছেন। আমরা আশা করবো দ্রুত এই অনুমোদন পেয়ে যাবো।’
কেপিআই স্থাপনায় কী কী নিরাপত্তা থাকে
কেপিআই এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে সাধারণ এলাকা থেকে আলাদা রাখা হয়। সব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ ও পাহারার ব্যবস্থা রাখা হয়। কেপিআই স্থাপনায় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের গতিবিধি নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিশেষ শ্রেণির কেপিআইয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশেষভাবে নিয়োজিত (পিজিআর) নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশের ইউনিট ন্যূনতম দুই বছরের জন্য নিয়োজিত রাখতে হবে। বিশেষ শ্রেণির কেপিআইয়ের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত সব সংস্থার সদস্যদের নিয়োগের আগে রেডবুকের বিধি অনুসারে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), ডিজিএফআই ও এসবির নিরাপত্তা প্রতিপাদন (ভেরিফিকেশন) এবং বিশেষ শ্রেণির কেপিআইতে নিয়োজিতদের অন্তত ছয় মাস পরপর নিরাপত্তা ভেটিং করাতে হবে। নিরাপত্তা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার অনুমোদিত স্কুল বা প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/এইচআর/ডব্লিউবি