logo ০৮ মে ২০২৫
রইল বাকি দুই
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৮:৩২:১০
image



মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে শনিবার। এই নিয়ে জামায়াতের ছয়জন নেতা ফাঁসিতে ঝুললেন।  






এখন আপিল মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও নায়েবে আমির আবদুস সুবহানের মামলা। দুজনের মধ্যে প্রথম শুনানি শুরু হবে আজহারের।






গত বছরের ২৮ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন আজহার।






প্রসিকিউশনের আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আজহারের বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে রায়ে প্রমাণিত হয়েছে পাঁচটি অভিযোগ।






এর মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং দুটিতে ২৫ ও ৫ বছর করে আরও ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়েছে রায়ে।






জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহার একাত্তরে ছিলেন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি। সে সময় তার নেতৃত্বেই বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা চালিয়ে এক হাজার ৪০০-র বেশি মানুষকে হত্যা, বহু নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল বলে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়।






জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সোবহান ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন গত বছরের ১৮ মার্চ। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মাওলানা সুবহানকে তিনটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেন।






চলতি বছরেই এ দুই নেতার আপিল শুনানি শুরু হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।






এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জামায়াতের আর দুই নেতার মামলা আপিলে আছে। আমরা আশা করছি এ বছরের মধ্যেই শুনানি শেষ হবে। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে বিচারপতিদের ওপর। শুনানির জন্য তাদের নাম যখন কজলিস্টে উঠবে তখনই কেবল আমরা তা জানতে পারবো।’






একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনেকের রায় কার্যকর হয়েছে, এতে জাতি কিছুটা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। তবে সবার বিচার যেদিন শেষ হবে সেদিন জাতি পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত হবে।’






জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করুন। এ বিষয়ে আদালতের রায়ও রয়েছে। কিন্তু সরকার সময় ক্ষেপণ করছে।’ বাকি যেসব যুদ্ধাপরাধী রয়েছে, তাদের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানান তিনি।






জামায়াতের দুই নেতা ছাড়াও আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী হবিগঞ্জের সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার এবং আবদুল জব্বার।






মানবতাবিরোধী এসব অপরাধীর মধ্যে আবদুল জব্বার ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। আর জব্বার ছাড়া অন্যরা কারাবন্দী রয়েছেন। পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা আবদুল জব্বার পলাতক থাকলেও প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করেছে।






মীর কাসেম আলীসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে সাতটি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্যে জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা রয়েছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে কাসেমসহ পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। একজনকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড। এ ছাড়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এরই মধ্যে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এর রিভিউয়ের আবেদনও করা হয়েছে।






আপিল বিভাগ থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে।






শুনানি চলাকালে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাঁদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে যায়।






সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আরো ৬টি মামলার আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন মোবারক হোসেন, সৈয়দ কায়সার, এটিএম আজহার, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার, ফোরকান মল্লিক, মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু।






বর্তমানে একীভূত ট্রাইব্যুনালে ১৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মামলার শুনানি চলছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ১০টি মামলা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজারের আলাউদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আকমল আলী, মো. মতিন মিয়া, কক্সবাজারের মহসীন হায়দার চৌধুরী, সালামত উল্লা খান, নেত্রকোনার আবদুল খালেক তালুকদার, আলবদর কমান্ডার শামসুল হক, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী, রাজাকার কমান্ডার ইউনুস মৌলভী, রাজাকার আবদুল মতিন, রাজাকার আজিজ (হাবলু), মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, আবু ছালেহ মো. আজিজ মিয়া ঘোড়া মারা আজিজ, ময়মনসিংহের আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজ্জুল্লাহ।






দ্বিতীয় ধাপে গত বছরের ৩১ মার্চ আরো ৭টি মামলা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের লিয়াকত আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে হোসেন, গোপালগঞ্জের এনায়েত মোল্লা, পটুয়াখালীর আয়নাল খাঁ, পটুয়াখালীর মো. আশ্রাব আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী।






(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/এমএম/মোআ)