ঈদুল আজহার দীর্ঘ লম্বা ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। দেশি-বিদেশি নানা বয়সের মানুষের আগমনে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত এখন উৎসব মুখর। ঈদের দিন থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার দিনভর এ সৈকতে ঢল নামছে মানুষের। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে নেচে-গেয়ে সৈকতে বিচরণ করেছেন হাজার হাজার পর্যটক। তারা লম্বা ছুটিতে তাদের পরিবার ও প্রিয়জন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে তিন-চার দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। ফলে আবাসিক হোটেল-মোটেল, খাবার ঘর ও শপিংমলসহ পর্যটনমুখী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে।
এদিকে আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পর্যটন স্পটগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর ফসিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান।
স্থানীয়রা জানায়, রাখাইন মার্কেট, ঝিনুকের দোকান, খাবারঘর, চটপটির দোকানসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বাস, টেম্পু, প্রাইভেটকার, মাইক্রোয় চড়ে দলে দলে পর্যটক আসছেন এ সৈকতে।
ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের বালিয়াড়িতে পাতা বেঞ্চ ও ছাতার নিচেসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নানা বয়সের মানুষ গল্প, গান আর আড্ডায় মেতে রয়েছেন। ঘুরতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে নতুন নতুন বন্ধুত্বের সুযোগে হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে নানা ঢংয়ের সেলফি তুলে সঙ্গে সঙ্গে পোস্ট করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। আবার কেউ কেউ সৈকতে ফুটবল ও হাডুডু খেলায়ও মেতে রয়েছে।
এছাড়া সৈকত লাঘোয়া নারিকেল বাগান, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লী, লাল কাকড়ার চর, সৈকতের জিরো পয়েন্ট ও ইলিশ পার্ক শিশু কিশোর-যুবক-যুবতীসহ নানা বয়সী পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখরিত।
এদিকে ঈদুল আজহার সরকারি লম্বা ছুটিতে হোটেল-মোটেলের সিট অগ্রিম বুকিং রয়েছে বলে ওখানকার একাধিক মালিকরা জানান।
গৃহিনী এলিজাবেদ তার সহ-পরিবারে খুলনা থেকে কুয়াকাটায় এসেছেন। তাদের সাথে সৈকতে ফুচকার দোকানে বসে কথা হয়। তিনি বলেন, এখানে আরো বেশ কয়েকবার এসেছি। এখানকার সবকিছুই ভালো। এখন কুয়ায়াকাটায় আসার জন্য যোগাযোগ আরো উন্নত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটে যাওয়ার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সুবিধার নয়। এগুলো জরুরিভিত্তিতে মেরামত করা প্রযোজন। এছাড়া সৈকত আরো পরিচ্ছন্ন থাকা উচিৎ বলে তিনি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিবিএ’র ছাত্রী মোনালিসা জানান, দীর্ঘ ছুটিতে প্রথমবারের মত কুয়াকটায় এসেছি। বললেন, প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যে আমি মোহিত।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সৈকতে রাতে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেকেই হাঁটতে গিয়ে পরে থাকা গাছোর গোরালী ও পুরানো কিছু ভগ্নাংশে পায়ে চোট পেয়েছেন। এ কারণে আমি আর রাতে রুম থেকে সৈকতে বের হইনি।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোড মালিক সমিতির পরিচালক হোসাইন আমির জানান, একের পর এক ভ্রমণ নৌ-তরীতে করে পর্যটকদের সমুদ্র ঘুরে দেখানো হচ্ছে।
কুয়াকাটা ইলিশ পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ জানান, পর্যটকদের আগমনে এখানকার হোটেল-মোটেলগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। ঈদের ছুটি উপলক্ষে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেল-মোটেলগুলোতে আগাম বুকিং রয়েছে।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম মাসুদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আশা করি, আগত পর্যটকরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে স্পটগুলো ঘুরতে পারবেন। এজন্য জেলা, থানা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর ফসিউর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ দর্শনীয় স্থানগুলোতে টহলরত রয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা সদস্যদের একটি দল মাঠে কাজ করছে। পর্যটকদের সতর্কভাবে সাগরে গোসল করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম সাদেকুর রহমান জানান, পর্যটকদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় এজন্য সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও মহিপুর থানা পুলিশ নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৫ সেপ্টেম্বর/উপজেলা প্রতিনিধি/এলএ)