ঢাকা: বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ১৯ দিন হল। কিন্তু এখনও নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। তার ব্যবহৃত গাড়িটিও পুলিশ সদরদপ্তরের পরিবহন পুলে ফিরিয়ে নেয়ার আদেশ (স্মারক নং-ইএন্ডটি/এমডি (এমটি)/০৬-২০১২/৪২৬৩/১-৪) হয়েছে। তবে এখনও ওই গাড়িটি আছে তার কব্জায়। পুলিশে চাউর আছে ছাত্রজীবনে শিবির নেতা ছিলেন তিনি। এখনও জামায়াতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ-সম্পর্ক আছে তার। এতকিছুর পরও পুলিশে আর্মড ফোর্সেস ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত ডিআইজি হাসান-উল হায়দারের দাপট দেখে সবার আক্কেলগুড়ুম।
পুলিশের একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, বিগত চারদলীয় জোট আমলে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকা কালে হাসান-উল হায়দারের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন পুলিশের অনেকে। পরে তাকে শাস্তিমূলকভাবে মাদারীপুর থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও এক সপ্তাহের মধ্যে ওই আদেশ বাতিল করান তিনি। প্রচার আছে, প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দার, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল হাসান-উল হায়দারের। তাদের মাধ্যমেই তিনি প্রত্যাহারের আদেশটি বাতিল করেছিলেন।
আর্মড পুলিশের একটি সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, ছাত্রজীবনে শিবির করতেন পুলিশ কর্মকর্তা হাসান-উল হায়দার। ছাত্রশিবিরের কৃষি কলেজ তেজগাঁও শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া উত্তরাতে কর্মরত থাকাকালে জামায়াতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ-সম্পর্ক ছিল তার। উত্তরা থানা জামায়াতের আমির মো. আশরাফ হোসেনের দক্ষিণখানের বাড়িতে প্রায়ই সরকারি গাড়ি ও চালক তৈয়ব আলীকে নিয়ে গোপন বৈঠকে যোগ দিতে তিনি। মাঝে মধ্যে গাড়ি দূরে রেখে ওই বাসায় যেতেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া জামায়াতের বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজের মালিকানা রয়েছে এ পরিচয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদেরও মালিক হয়েছে হাসান-উল হায়দার। এসব নিয়ে পুলিশের ভেতরে ভেতরে আলোচনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার আগে এপিবিএন সদরদপ্তরে স্টিল স্টাকচারের দোতলা ভবনের বরাদ্দ পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাশ করিয়ে এনে নিজের ইচ্ছেমত ভবন নির্মাণ করেন। পরে তিনি ভবনটির দোতলায় প্রায় তিন থেকে চার হাজার বর্গফুট আয়তনের জায়গায় তার অফিস, বেডরুম, ব্যক্তিগত ব্যামাগার, মিনি কনফারেন্স রুম ও পিএ রুম তৈরি করেছেন।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি হাসানুল হায়দার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘অফিসে যাচ্ছি। তাতে কী? দাপ্তরিক কোনো কাজ তো করছি না। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে তার জবাব লেখার জন্য তো জায়গার দরকার আছে। আমি তো তিন রাস্তার মোড়ে বসে লিখতে পারব না।’ গাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার আদেশ হওয়ার পরও কেন গাড়ি ব্যবহার করছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে এত আগ্রহ কেন? আমি তো অফিসে আসছি তাই না।’
জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা জানতে চাইলে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন হাসান-উল হায়দার। বলেন, ‘কলেজ জীবনে পড়াশোনা করেছি ফেনী সরকারি কলেজে। পরে ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। তেজগাঁওয়ে তো কোনো দিন ছিলাম না। তাহলে সেখানে শিবির নেতা হবো কী করে?’
এদিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশকে তোয়াক্কা করছেন না হাসান-উল হায়দার। নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন। এমনকি সরকারি গাড়িটিও ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে। গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৭২৩১। অথচ গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে গাড়িটি ক্লোজ (প্রত্যাহার) করা হয়। আদেশ অনুযায়ী গাড়িটি এখন পুলিশের পরিবহন পুলে থাকার কথা ছিল।
তবে এব্যাপারে জানতে চাইলে বিব্রতবোধ করেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (পরিবহন) গোলাম কিবরিয়া। প্রথমে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘হাসান-উল হায়দারের গাড়িটি ক্লোজ করা হয়েছে। গাড়িটি এখন পুলিশের পরিবহন পুলে আছে।’
কিন্তু হাসান-উল হায়দার তো বললেন গাড়িটি তার কাছেই আছে-এমন মন্তব্যের জবাবে গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘তাতে কী হয়েছে? সাধারণ মানুষের কাছে তো নয়, পুলিশের কাছেই তো আছে। আর তিনি সেটি ব্যবহার করলেও তা অনুমতি নিয়েই করছেন।’
সূত্র জানায়, এবছরের ৩ জানুয়ারি হাসান উল হায়দার এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান। অভিযোগ আছে, পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকেই তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে নিজের মতো করে কাজ করছেন। এপিবিএনে তার ইউনিট প্রধানকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন চিঠি ইস্যু করছেন। এছাড়া এপিবিএন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তাকে এপিবিএন সদর দপ্তরে পদায়ন করা হলেও তিনি নিজের পদবির পাশে অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও ইন্টেলিজেন্স) লিখে আসছেন। অথচ তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
পুলিশের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, গত ২৫ জুলাই অতিরিক্ত ডিআইজি হাসান উল হায়দারের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে অভিযোগ করা হয় এপিবিএন সদর দপ্তর থেকে। এতে সুনির্দিষ্ট ১৮টি লিখিত অভিযোগ আনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে হাসান উল হায়দারকে ২৯ আগস্ট থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এতে বলা হয়, গুরুতর অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর ১১(১) বিধি মোতাবেক তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
(ঢাকাটাইমস/ ১৮সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ ঘ.)