logo ১৬ মে ২০২৫
আমাদের গণতন্ত্র শাস্ত্র!
০৬ অক্টোবর, ২০১৩ ১২:৩৭:২৮
image


মনিরুল ইসলাম রানা:

 

 

যদি প্রশ্ন করা হয় গণতন্ত্র শাস্ত্র বলতে কী বুঝ? উত্তর সহজ ‘যে শাস্ত্র পাঠ করলে গণতন্ত্র শুদ্ধ রুপে লিখিতে বলিতে ও পড়িতে পারা যায় তাকে গণতন্ত্র শাস্ত্র বলে’। তবে বঙ্গদেশীয় গণতন্ত্র শাস্ত্রের ব্যাখ্যা একটু ভিন্ন হতে পারে।

 

আওয়ামীপন্থী নিখুঁত গণতান্ত্রিক শাস্ত্র, বিএনপিপন্থী বহুদলীয় গণতন্ত্র শাস্ত্র, বামপন্থীদের বোঝা দায় রাশিয়া না কি চায়না পন্থীশাস্ত্র এদেশে কেউই হয়তো এখনো ক্লিয়ার না। হালাল গণতন্ত্র শাস্ত্র তাদের জন্য যারা হারাম ও হালালকে পুঁজি করেছে বহু আগে। অন্য ভাবে চিন্তা করলে যেমন হাসিনাপন্থী গণতান্ত্রিক শাস্ত্র কিংবা খালেদাপন্থী গণতান্ত্রিক শাস্ত্র ।

 

আমাদের দেশে যে কেউ চাইলেই এই শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করতে পারবেনা, মোট কথা সহজে এই শাস্ত্রে মাহাজ্ঞাণী হতে পারবেন না। এমনকি সেই সুযোগ ও নেই। দল ও ব্যাক্তির প্রয়োজনে এবং ক্ষমতায় আশা ও আশার অভিলাষে এর সূত্র ও ব্যাখ্যা পরিবর্তন ও পরিমার্জনযোগ্য। হিসেব সহজ সরকারি দলের কাছে যা ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ বিরোধীদের কাছে তা ‘অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’।

 

একবার ভাবুন যে মানুষটি ওনাদের গণতন্ত্র মন্ত্র পাঠ করেন নাই, সে কোন পক্ষে যাবে। কোনটা তার কাছে সঠিক, ‘গণতন্ত্রের চর্চা’ না কি ‘অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’।

 

কথা হল,  গণতন্ত্রের চর্চা ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুটি মূলদলের রাজনৈতিক কূটকৌশল। কূটকৌশল হল ক্ষমতা আগলে রাখা আর ক্ষমতার আভিলাষ, মিছিল, মিটিং, শুরু হয় রাজপথ দখল করে নিজ দলকে জাতির সামনে জাহির করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। গাড়ি ভাঙা, যাত্রীসহ গণপরিবহনে আগুন দেওয়া ককটেল হাতবোমা যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন নেতাকর্মীরা। গণতন্ত্র রক্ষায়! দুই দলের এই রক্ষা কবজে কতজন প্রাণ হারালো তা কিন্তু ইস্যু না। ইস্যু হলো গণতন্ত্র রক্ষা!

 

মজার কথা হল এরশাদ পতনে পর থেকে আমরা কোন স্বৈরাচারির কাছে থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে এনে গণতন্ত্র রক্ষা করি নাই। তবুও গণতন্ত্র রক্ষায় প্রাণ ঝরছে। ৯৬, ২০০১, ০৬, ১৩ বাস ড্রাইভার, কুলি, শ্রমিক বাবার কোলে ঘুমান্ত শিশু সবাই গণতন্ত্র রক্ষার বলি হয়েছেন। প্রক্রিয়াটা চলমান, কথা হল তবে কবে গণতন্ত্র পূনর্প্রতিষ্ঠা পাবে? হালচিত্র সবার জানা ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে মা তার শিশু সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যেতে চায় না। বউটি তার প্রিয়তমর পথ চেয়ে থাকে। মা দুরুদ পড়েন, এই বুঝি কোনো দুঃসংবাদ! যদি আবার আল্লাহর মাল আল্লাহ ওনাদের উছিলায় নিয়ে যায়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় কথাটা ভাল বলেছিলেন ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে’।

 

এদেশের রাজনৈতিক পটপরিক্রমায় শাসক বারবার শোষণের আশায়, মত ও বোধ পরিবর্তন করে নির্বোধ আচারণ করেছেন। ৯০ এর দশকে কেউ বলছে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হবে। আসুন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একযোগে আন্দোলন করি। বাঙালি ঝাঁপ দিল, রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলো। আজ আবার সেই একই চিত্র তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আসুন গণতন্ত্র রক্ষায় রাজপথে আসুন, রক্তদিন আপনাদের রক্ত দিয়েই আমাদের গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। মাকসুদুল হক একবার গেয়েছিলেন ‘গণতন্ত্র নামের ক্ষমতাতন্ত্র’।

 

 

আমরা আবারো রক্তপাতের দিকে যাচ্ছি। জনমনে আশঙ্কা, বুদ্ধিজীবীরা নীরব দর্শক, কবিরা ব্যস্ত কবিতা উৎসবে। মিছিল মিটিং জ্বালায় পোড়াও শুরু হয়েছে। গতানুগতিক যারা মরেছে সবাই নিম্নবিত্ত। পাল্টাপাল্টি কথা চালাচালি হয়। প্রধানমন্ত্রী এক জেলায় বসে কিছু বলেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী অন্য জেলার মঞ্চে তার উত্তর দেন, কিন্তু আর কতো?  দেখতে চাই সরাসরি। কে কাকে পরাস্থ করতে পারেন। কে দেশের প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিশীল। আসুন আলোর মিছিলে আসুন। যত দেরি করবেন আরো কিছু তাজাপ্রাণ ঝড়ে যাবে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও কি দেশে এত শহীদবেদী মানায়?