ঢাকা: দেড় বছরের বেশি সময় পার হলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ করতে পারেনি র্যাব। উদঘাটিত হয়নি মামলার প্রকৃত রহস্য। দু’দফা হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া র্যাবের তদন্ত কার্যক্রমেও নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। দীর্ঘ দিনেও এই নির্মম হত্যাকান্ডের কোনো কূল-কিনারা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে নিহতদের পরিবার। তবে র্যাব বলছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তদন্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার দেড় বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রকৃত খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। উদঘাটিত হয়নি মামলার প্রকৃত রহস্য। ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের হাত ঘুরে ডিবিতে এবং পরে র্যাবের হাতে তদন্তভার ন্যস্ত হওয়ার পরও কোনো অগ্রগতি হয়নি চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার। বরং মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালত জানতে চাইলে র্যাব জানায়, আধুনিক প্রযুক্তি এবং গুপ্তচর নিয়োগ করেও তারা হত্যাকাণ্ডের কোনো কুল কিনারা করতে পারেনি৷
এদিকে দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্তকাজ শেষ না হওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝেও চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে নিহতদের পরিবার। তাদের অভিযোগ, প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারের নামে পুলিশ, সিআইডি, ডিবি ও র্যাব গত দেড় বছরে কিছু নাটক উপস্থাপন করেছে।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা র্যাব এখন আমাদের সাথে তেমন যোগাযোগ করে না। তবে মাঝে মধ্যে ফোন করলে আমাদের বলে তদন্ত চলছে। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারে না র্যাব।
চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনির হত্যা মামলাটির দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টর আইনজীবী দিলরুবা সরমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, স্বাধীনতার পরে দণ্ডবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি বহুবার সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে উপেক্ষা করা হয়েছে। একটি হলো- স্বাক্ষীর নিরাপত্তাহীনতা এবং মামলার প্রতিবেদন কত দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফলে এ ধরনের মামলার আসামিরা দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াতে সাহস পায়। তাই মামলাগুলো শেষ করতে বছরের পর বছর সময় লাগে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল কিসমত হায়াৎ ঢাকাটাইমসকে জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে আমরা আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তদন্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি।
সাগর-রুনি গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজা বাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার পরের দিন শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রুনির ভাই নওশের রোমান। ওই সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাগর-রুনির হত্যকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। পরবর্তীতে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মহীউদ্দীন খান আলমগীর দায়িত্ব নিলে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দেন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। যার মধ্যে নিহতদের রাজা বাজারের ভাড়া বাড়ির দারোয়ান এনামূলও রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য সাতজন হলেন, তানভীর রহমান, বাড়ির অপর এক দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল, সন্দেহভাজন ডাকাত রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও সাঈদ।
(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/এএ/এএসএ/জেডএ.)