logo ০১ জুন ২০২৫
গোপনে ৫০০ কোটি কল রেকর্ড হয় প্রতিদিন!
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
০৭ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:৪৮:৫৭
image

ঢাকা: সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ফোনকল ও ব্যবহারকারীর অবস্থান রেকর্ড করে। এ সংখ্যা প্রায় ৫০০ কোটির মতো। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ফোনকলও রয়েছে।


প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কয়েক কোটি ফোনকল রেকর্ড করে এনএসএ। এর মধ্যে যারা ভ্রমণ ও বিভিন্ন পেশাগত কাজে বিদেশ ভ্রমণ করে থাকে তাদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাপী মোবাইলের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এ গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে থাকে সংস্থাটি। ব্যাপক আকারে ফোনে আড়িপাতা ও গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টির বিরোধিতা করেছেন অনেকেই। এর মধ্যে সাধারণ বিক্ষোভকারী থেকে সমাজের উঁচু স্তরের নাগরিকরাও রয়েছেন।


 তবে এ নজরদারির বিষয়টি বিদেশীদের জন্য অধিক আকারে করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য তেমন কঠোরভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস লাইব্রেরি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের সদস্য এলিজাভেদ গোয়েথিন এ মন্তব্য করেন। আমেরিকান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নের আইনজীবী ক্যাথরিন ক্র্যাম্প মনে করেন, শুধু সন্দেহজনক ব্যক্তিদের মধ্যেই এ কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। কেননা এর ব্যাপক বিস্তারের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকরা অনেক সময়ই বিব্রতকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। পাশাপাশি এ বিষয়টি অনেক নিরপরাধ ব্যক্তির জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনে। ডিএনএর জেনারেল কাউন্সিল রবার্ট লিট জানান, এনএসএ যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের কোনো ফোনকলে আড়িপাতে না। কিন্তু এনএসএর পরিচালক কেইথ আলেকজান্ডার জানান, ২০১০ ও ২০১১ সালে একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ কাজ করেছে তারা। মূলত নিজেদের সক্ষমতাকে যাচাই করার জন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল।


তবে এসব তথ্যকে কখনোই নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা-সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ের সঙ্গে এক করা হয়নি বলে জানান তিনি। তবে আলেকজান্ডার সম্পূর্ণভাবে তার বক্তব্য প্রকাশ করেননি বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর রন ওয়েপেন। ডেমোক্র্যাট দলের এ সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য। একই সঙ্গে তিনি এনএসআইর গুপ্তচরবৃত্তি কার্যক্রমের একজন কঠোর সমালোচকও।


তিনি দাবি করেন, আলেকজান্ডার এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিধি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানাননি। আলেকজান্ডার ও এনএসএর অন্য কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এ বিষয়কে অত্যন্ত যতœসহকারে দেখা হয়। কোনো ফোনকল যদি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরের নম্বরের হয়, তবে এটি খুব কম সময়ের জন্যই সংরক্ষণ করেন তারা। ফোনে আড়িপাতার বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এনএসএ। বিক্ষোভকারীদের মতে, এতে গ্রাহকদের একান্ত ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় জনসম্মুখে চলে আসছে। এতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লংঘিত হচ্ছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাই ক্রমেই এ কার্যক্রমের বিরোধী হয়ে উঠছে। এনএসএর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্যই এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। এর মাধ্যমে খুব সহজেই অপরাধীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়। এতে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ঘটার আগেই তা নির্মূল করা সম্ভব। পাশাপাশি এ কার্যক্রমের ফলে নিজেদের সক্ষমতার মাত্রাও অনেক বেড়ে গেছে বলে দাবি করে তারা।


তবে এ কার্যক্রমের আওতায় নাগরিকদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলো যত্ন সহকারে এড়িয়ে যাওয়া হয় বলে দাবি করে সংস্থাটি। ওয়াশিংটন পোস্টের এ প্রতিবেদনে আরও কিছু আশ্চর্যজনক বিষয় উঠে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, এনএসএ যে বিপুল পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করে, তার থেকে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মোবাইলকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে পারে তারা। এরপর এসব তথ্য প্রয়োজনীয় আকারে সমন্বয় করে থাকে তারা, যা পরবর্তীতে একটি ম্যাপ আকারে প্রকাশ করা হয়। এ জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটার প্রোগ্রাম কো-ট্রাভেলার ব্যবহার করে থাকে তারা। এর মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে সন্দেহজনক নয় এমন কোটি কোটি ফোনকলের ওপর নজরদারির পাশাপাশি তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে পারে নিরাপত্তা সংস্থাটি।


সাবেক এনএসএ কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন সর্বপ্রথম সংস্থাটির অবাধ গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টি সবার নজরে আনেন। সংস্থাটির ফোনে আড়িপাতার বিষয়টি নিয়ে তখন বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এনএসএ বিভিন্নভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কর্মকর্তাই এ বিষয়ে সংস্থাটির সম্পৃক্ততার কথা জানান। এর ধারাবাহিকতায় অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সের (ডিএনএ) মুখপাত্র শন টার্নার সাম্প্রতিক এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।


(ঢাকাটাইমস/৭ডিসেম্বর/এমএম)