ঢাকা: রোলিহলাহলা, নেলসন, মাদিবা, টাটা, খুলু, ডালিভুঙ্গা। বৈচিত্র্যময় তার নাম, বৈচিত্র্যময় তার জীবন। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলা। পরাধীনতার শৃঙ্খল যার পায়ে দলিত হয়েছে অবলীলায়। কখনো তিনি থেকেছেন নিজ নিকেতনে, কখনো হয়েছেন পরবাসী। আবার কখনো গহীন দ্বীপে বন্দী জীবন-যাপন করেছেন। এমন যার জীবন, তিনিই তো সত্যিকারের মহানায়ক। তাকে নিয়েই রচিত হবে শতশত কাব্যগাথা। রুপালি পর্দার ছায়াছবি। এ আর অস্বাভাবিক কী!
হয়েছেও তাই। ছয় ডিসেম্বর যখন তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দেন, তখন তিনি ৯৫ বছরে। এ সময়টাতে তাঁকে নিয়ে অনেকে নির্মান করেছেন অনেক চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচ্চিত্র। ড্যানি গ্লোভার, সিডনি, মরগ্যান ফ্রিম্যানের মত কিংবদন্তি অভিনেতারা ম্যান্ডেলার চরিত্রে অভিনয় করেছন।
সর্বশেষ ম্যান্ডেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রিটেনের জনপ্রিয় টিভি-অভিনেতা ইদ্রিস এলবা। ম্যান্ডেলার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডমের’ ওপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ‘ম্যান্ডেলা : লং ওয়াক টু ফ্রিডম’। ইতিমধ্যে চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। কানাডায় টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এর প্রদর্শনী হয়। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ব্রিটিশ পরিচালক জাস্টিন চ্যাডউইক। এর চিত্রনাট্য রচনা করেছেন উইলিয়াম নিকোলসন। তিনি বিবিসির ডকুমেন্টারি ফিল্মের পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার পর চিত্রনাট্য লিখেছেন অস্কারজয়ী ছবি ‘ গ্লাডিয়েটর’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল ছবির। পরিচালক হিসেবে আছেন ‘দ্য আদার বলিন গার্ল’-খ্যাত পরিচালক জাস্টিন চ্যাডউইক।
উদ্বোধনী প্রদর্শনীতেই ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায় ছবিটি। এইচবিওর সমালোচকপ্রিয় সিরিজ ‘দ্য ওয়ার'’-এ মাদকসম্রাট এবং ব্যবসায়ী চরিত্রে অভিনয় করে সবার নজরে পড়েন ইদ্রিস এলবা। ‘আমেরিকান গ্যাংস্টার, ‘দ্য লুথার’, ‘থর’, ‘প্রমিথিউস’, ‘প্যাসিফিক রিম’, ‘দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড’সহ অন্যান্য ছবি তার জনপ্রিয়তার পাল্লাকে ভারি করেছে। আর ২০১১ সালে ‘লুথার’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সদ্য ৪২এ পা দেওয়া এই অভিনেতা জিতেছেন গোল্ডেন গ্লোবসহ অনেক নামি পুরস্কার।
ম্যান্ডেলা ছবিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। চরিত্রটিকে বাস্তব করে তুলতে পড়েছেন মূল বই এবং দেখেছেন এর আগে ম্যান্ডেলাকে নিয়ে নির্মিত ছবিগুলো। ম্যান্ডেলার স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেমস বন্ড সিরিজের ছবি 'স্কাইফল'-এর ব্রিটিশ অভিনেত্রী নাওমি হ্যারিস।
কী আছে এই ছবিতে?
তুলনামূলক গ্লামারবিহীন এ ছবি নিয়ে চারদিকে এত আলোচনার ঝড়, এমনকি স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই ছবির কলাকুশলীদের হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রথমত, ছবির গল্প এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এবং গল্পটি সেই ব্যক্তির আত্মজীবনী অবলম্বনে তৈরি। আর এই ছবিতে ম্যান্ডেলার জীবনের শুরুর দিককার গল্প, শিক্ষা, দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাজীবন, প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং এক নতুন নেতৃত্বের সূচনা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার গল্প খুব সুচারুরূপে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। আর অভিনেতাদের সুঅভিনয় ছবিটিকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। ছবিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি জনপ্রিয় গান। আইরিশ রক ব্যান্ডদল ইউটু ‘অর্ডিনারি লাভ’ শিরোনামে তাদের ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘নো লাইন অন দ্য হরাইজন’ অ্যালবামের ‘ব্রিদ’ গানটির একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করেছে ছবিটির জন্য।
রোটেন টমেটো ওয়েবসাইট তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় ৭১ শতাংশ সমালোচকই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন ছবিটি নিয়ে। জনপ্রিয় সাময়িকী ভ্যারাইটির স্কট ফাউন্ডার্সও ছবিটি সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে।
এছাড়া ম্যান্ডেলাকে নিয়ে বিবিসি নির্মান করেছে প্রামাণ্যচিত্র-‘প্রিজনারস অব কনসেন্স’। এতে ম্যান্ডেলার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জর্জ হ্যারিস।
ইতিহাসের এই মহানায়ককে নিয়ে নির্মিত ছবিগুলোর প্রোমো যেভাবে আলোড়িত করেছিল দর্শককে, তা এক অনন্য উদাহরণ। কারণ ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে অনেকেই তখন লিখেছিলেন, প্রোমো দেখেই শিহরিত তারা। আর চলচ্চিত্রগুলো মুক্তি পাওয়ার পর সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ ম্যান্ডেলাকে চিনেছে নুতন করে।
হয়তো প্রবাহমাণ কালের ধারায় এই মহামানবের জীবনী আরো হাজার-বার বন্দি হবে ফিল্মের পাতায়। তখন নতুন পৃথিবীর নতুন প্রজন্ম তাঁকে চিনতে থাকবে চিরসবুজ কৌতূহলে। এভাবে ধরিত্রীর অলিতেগলিতে, শোষকের কম্পিত হৃদয়ে বারবার ফিরে আসবে অমর-মাদিবা। নেলসন ম্যান্ডেলা।
(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/এএম/ এআর/১১.৪০ঘ.)