logo ০১ জুলাই ২০২৫
পড়ন্ত যৌবনে দুই সঙ্গিনীকে পেয়েও মিলনে অনাগ্রহী গন্ডার
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
৩০ জানুয়ারি, ২০১৪ ১০:৪৬:৫১
image

ঢাকা: ছয় বছর বয়স থেকে দিন কেটেছে একাকী। কৈশোর এল-গেল নিজের নিয়মে। টগবগে জোয়ান হয়েও ঘুরল না ভাগ্যের চাকা। ‘বিয়ে’ ঠিক হয়েও ভেস্তে গেল কয়েকবার। অবশেষে পড়ন্ত যৌবনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দুই সাথীর কাছে নিয়ে যাওয়া হল তাকে। জ্ঞানচক্ষু খোলার পর এই হয়তো প্রথম স্বজাতির কোনও নারীকে দেখল সে। তাও আবার একসঙ্গে দুই নারীকে। তিন জনে মিলে তিন মাস গেল। কিন্তু তার মন ভাল হল কই!


না এটি কোনো মানবজীবনের কাহিনী নয়, একশৃঙ্গ গন্ডার ‘শিবা’-র এমন বিষণ্ণ দশা দেখে চিন্তিত ভারতের সেন্ট্রাল জু অথরিটির কর্তারা। বাবা হওয়ার কোনও ইচ্ছেই যেন তার নেই। অথচ সেই জন্যই তো বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে মুম্বাই থেকে দিল্লিতে আনা! তবে কি নতুন ঠিকানায় আড় ভাঙছে না? নাকি আশৈশব নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে মিলনের ইচ্ছেটাই হারিয়ে গেল? চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, যে শারীরিক ভাবে সে সম্পূর্ণ সক্ষম!


ফলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত। ‘একটা কিছু’ না হলে তো মুশকিল। এমনিতেই সারা পৃথিবীতে একশৃঙ্গ গন্ডার, বিশেষত মেয়ে গন্ডারের সংখ্যা কমে আসছে। এনিয়ে স্বয়ং ইউনেস্কো পর্যন্ত শঙ্কিত। প্রকৃতির মুখ চেয়েও তাই শিবার বংশরক্ষা হওয়াটা জরুরি। তা ছাড়া, ‘বিয়ে’ হলে আর কবে হবে?


১৯৮৫ সালে আসমের কাজিরাঙ্গা জঙ্গল থেকে ছয় বছর বয়সে মুম্বাইয়ের বাইকুলা চিড়িয়াখানায় এসেছিল একশঙ্গ গন্ডার শিবা। আজ তার বয়স ৩৫। গন্ডারের গড় আয়ুই তো মোটামুটি ৪৫ বছর। অতএব হাতে বেশি সময় নেই।


মুম্বাই চিড়িয়াখানা সূত্র জানা যায়, এর আগে বেশ কয়েকবার চেষ্টা হয়েছে শিবাকে বাবা বানানোর। পাটনা, দিল্লি, রাঁচির চিড়িয়াখানায় তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে। এ ছাড়া আসাম, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ এমনকী বার্লিনের চিড়িয়াখানার সঙ্গেও কথা বলেছিল ‘মুম্বাই সিভিক এজেন্সি’। প্রত্যেক বারই কখনও রাজনৈতিক কারণে, কখনও বা লাল ফিতের ফাঁসে সেই সফর আটকে গিয়েছে। রাঁচিতে যাওয়া তো প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় বাদ সাধে শিবসেনা। মুম্বাই চিড়িয়াখানার গর্ব একটি মাত্র গন্ডারকে নিয়ে যাওয়া চলবে না। ফলে পিছিয়ে যান কর্তৃপক্ষ। এরপর ঠিক হল, পাটনা চিড়িয়াখানা থেকে এক ‘গন্ডারনী’কে আনা হবে। তা-ও ভেস্তে গেল। সেন্ট্রাল জু অথরিটি-র পরিদর্শকেরা মত দিলেন, মুম্বাইয়ের এতটুকু বাসায় দু’জনের স্থান সঙ্কুলান অসম্ভব।


এ যাত্রায় অবশ্য কেউ বাধা দেয়নি। ভাঙা-গড়া-টানাপোড়েনের দীর্ঘ পর্ব শেষে অবশেষে হয় এসপার নয় ওসপার। চার দিনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মুম্বাই থেকে শিবাকে দিল্লি নিয়ে আসা হয়েছে। কিছুটা জোর করেই, কারণ পরিচিত এলাকা থেকে কিছুতেই নড়তে চাইছিল না সে। তাতে দিল্লিরও সুবিধে হয়েছে। এত দিন এখানে কোনও পুরুষ গন্ডার ছিল না। থাকত দুই প্রমীলা-গণ্ডার ‘মহেশ্বরী’ এবং ‘অঙ্গুজা’। এবং এদেরও যৌবন অস্তাচলের পথে। তাদের সঙ্গেই পাশাপাশি খাঁচায় রাখা হয়েছে শিবাকে। দিন ও রাতের মধ্যে অনেকটা সময়ই দুই সঙ্গিনীর সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তাকে।


সমস্যাটা সেখানেই। তিন মাস কেটে গেলেও মিলনক্রীড়ায় এখনও পর্যন্ত অনাগ্রহী শিবা। দুই নারী পাশে থাকলেও তার আকাঙ্ক্ষা জাগছে না। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, বিষন্ন চিত্তে শিবা বসে থাকছে একাকী। মুম্বাইয়ে প্রায় তিন দশক কাটিয়ে আসার পর নতুন জায়গায় মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা হতে পারে, সে কথা কর্তৃপক্ষও মানছেন। পুরনো ঠিকানায় সে যা খেত, এখানেও হুবহু তা-ই দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সমস্যা বাড়িয়েছে শিবার শিঙের উপর তৈরি হওয়া একটি ঘা। ওষুধ চললেও সংক্রমণের আশঙ্কা কাটেনি। সঙ্গিনীরা অবশ্য পরিচর্যার ত্রুটি রাখেনি। কিছুদিন আগেই দেখা গিয়েছে, পরম মমতায় শিবার ঘা’টিকে লম্বা জিভ দিয়ে চাটছে ‘মহেশ্বরী’!


দিল্লি চিড়িয়াখানার চিকিৎসক পনির সেলভাম বলেন, “মিলনের প্রক্রিয়াটি নির্ভর করছে অনেকগুলো বিষয়ের উপর। প্রথমত, ক্ষতটা দ্রুত সারা দরকার। দ্বিতীয়ত, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে গন্ডারটিকে মানিয়ে নিতে হবে। তৃতীয়ত, মাদী গন্ডারদের মধ্যেও চাহিদা তৈরি হতে হবে।”


বণ্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, এখনও হাল ছাড়ার সময় আসেনি। তাদের যুক্তি, মোটামুটি ছয়মাস একসঙ্গে থাকার পর তবেই গন্ডারদের মধ্যে মিলনের চাহিদা তৈরি হয়। সেটাই গন্ডারের ধর্ম। এছাড়া, এরা হাতির মতো দলবদ্ধ ভাবে থাকে না। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর অনেক সময়েই বাবা-গন্ডার পরিবার ফেলে চলে যায়। এমনকী একাধিক সন্তানও অপছন্দ গন্ডার দম্পতির।


দিল্লি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বহু আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছেন, কখন মেওয়া ফলে।


(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/জেএস)