logo ১৪ মে ২০২৫
অনলাইন মিডিয়ার জন্য আইনগত নীতিমালা বিষয়ে সেমিনার
ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
১০ মার্চ, ২০১৪ ২১:৩৮:৫৪
image


চট্টগ্রাম: প্রযুক্তি জীবনকে প্রসারিত করার অনেক সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা তথ্য ও প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করতে পারছিনা। এ জন্য অনলাইন মিডিয়াকে আইনের আওতায় দরকার। তরুণরা ও দেশের শিক্ষিত সমাজ যদি এই তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপারে সচেতন না হয় তবে জাতির ভবিষ্যত হবে অন্ধকার।

বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়ার জন্য আইনগত নীতিমালা গ্রহণে ‘বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক: বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত তাৎপর্য শীর্ষক’ সেমিনারে চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. অনুপম সেন এসব কথা বলেন।

আইন বিভাগের সভাপতি নূর মোহাম্মদুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। সোমবার দুপুর ১ টায় চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ড. অনুপম সেন আরও বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তির অনেক ভালো দিক যেমন আছে, ঠিক তার অনেক খারাপ দিকও রয়েছে। এ খারাপ দিকগুলো অপসারণ ও অনলাইন মিডিয়াগুলোর জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। অনলাইন মিডিয়াগুলোকে যে কোনো সংবাদকে বিবেচনা করার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। সত্য তথ্য ও বক্তব্য দিয়ে অনলাইন মিডিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা এখন চিঠি ও টেলিগ্রাফের উপর নির্ভর না করে ইমেইল ও ফেসবুক ব্যবহার করছি। এখন অনলাইনে সাহিত্যচর্চা, পড়ালেখা ও সব ধরণের লেখালেখি করা যায়। অনলাইন মিডিয়াগুলোকে আইনের নিয়ম-কানুন মেনে ভালো ও সত্য খবর দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিল্লোল ঘোষের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আহমদ রাজিব। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপচার্য ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী, অতিথি আলোচক বাংলানিউজ২৪ এর এডিটর ইন-চীফ আলমগীর হোসেন, আলোচক হিসেবে সচিব পার্বত্য চট্টগ্রাম এর মাহাবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপিকা মেহের নিগার, মাহমুদ মেনন খানসহ প্রমুখ। সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের তৈরি অবিনাশী শীর্ষক দেয়ালিকা উদ্বোধন করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সমস্ত বিশ্বকে যে গ্লোবাল ভিলেজ বলা হচ্ছে তা অবাধ তথ্য প্রবাহের জন্য। আর এই অবাধ তথ্যপ্রবাহের কাজটি সহজ করছে তা অনলাইন গণমাধ্যম।

সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন গণমাধ্যম কিছু নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সাঈদীর রায় ঘোষণার পর তাকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে বলে কিছু অনলাইন গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করল। মক্কা শরিফের গিলাফ নিয়ে ১০ জন খতিব মানববন্ধন করছে বলে জঘন্য মিথ্যাচার করা হল। সহিংসতার মূল সূত্রপাত হয়েছে কিন্তু এসব প্রচারণা থেকেই।

ইফতেখার উদ্দিন বলেন, তবে আশার কথা হচ্ছে, অনলাইন থেকে মিথ্যা তথ্য প্রচার হলেও তরুণরা আবার অনলাইনেই সেসব মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যকে তুলে ধরেছেন। সুতরাং অনলাইন মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা দরকার। এক্ষেত্রে নীতিমালা করে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

অনলাইন গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার তাগিদে একমত পোষণ করে সেই আইন মেনে চলা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর ইন চীফ আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। সংবাদপত্রের জন্য তো নীতিমালা আছে। কিন্তু সেই নীতিমালা কি প্রিন্ট মিডিয়াগুলো মানছে? সুতরাং বলছি, শুধু আইন কিংবা নীতিমালা তৈরি করলে হবেনা। বিবেকবোধে তাড়িত হতে হবে। আইন তৈরির পর যদি কেউ সেই আইন না মানেন, তাহলে ? যারা অনলাইন সাংবাদিকতা করেন তারা যদি বিবেক দিয়ে নিজেদের পরিচালিত করেন তাহলে কোন সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, যে আইন দিয়ে দেশ চলছে তা বৃটিশদের আইন। আমরা যখন প্রযুক্তির জন্য আইন তৈরি করছি, তখন প্রযুক্তি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার আইন তৈরি করে, অনেকে সেই আইন মানে না। সুতরাং দ্রুত বিকাশমান অনলাইনের জন্য নীতিমালা তৈরি করতে হলে বড় পরিসরে বিতর্ক প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা কি চান, তরুণরা কি চান সেগুলো জানতে হবে।

আলমগীর হোসেন বলেন, অনেকে বলছেন ব্যাঙের ছাতার মত অনলাইন পত্রিকা গজিয়ে উঠছে। কিন্তু আমাদের তো এটাও ভাবতে হবে কি পরিমাণ সংবাদপত্র আছে ? পত্রিকা ছাপানোর জন্য কি পরিমাণ গাছ কাটতে হচ্ছে ? কত গাছ আমরা ধ্বংস করছি ?

তিনি বলেন, সিটিজেন জার্নালিজম একটা বিষয় যেটা খুব পপুলার হচ্ছে। অনেক নামিদামি বাংলাদেশী পত্রিকায় সিটিজেন জার্নালিস্টদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি বাংলাদেশে এ জায়গাগুলো ফিক্সড করতে।

তিনি বলেন, অনলাইন সাংবাদিকতার বিপদও অনেক। আমাদের দ্রুত তথ্য দিতে হয়। দ্রুত পরিবেশন করতে গিয়ে তথ্য ভুল থাকার ঝুঁকি থাকে। প্রিন্ট মিডিয়ার এত ঝুঁকি নেই। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজের ৪০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের দীর্ঘ বর্ণনাও দেন অনলাইন গণমাধ্যমের পথিকৃৎ আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের লোভ, লালসার উর্দ্ধে থাকতে হবে। বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। সংবাদ পরিবেশনের পর অনেক ধরনের চাপ আসে। কিন্তু নৈতিকতার জায়গায় অটল থাকলে সেই চাপ অগ্রাহ্য করা যায়।

পার্বত্য ভূমি কমিশন, খাগড়াছড়ি এর সচিব মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, অনলাইন সাংবাদিকতার দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। অনলাইন গণমাধ্যম সমাজে দ্রুত পরিবর্তন আনছে। অবস্থা এমন হয়েছে, অনলাইনের কারণে কোন মূর্খ এখন আর মূর্খ থাকতে চাইলেও পারছেনা। মূর্খতা হচ্ছে সমস্ত দুর্নীতি ও দুর্ভোগের মূল কারণ। এখন অনলাইন গণমাধ্যম দ্রুত আমাদের সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে কাজ করছে।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি এগিয়েছে, ফলে দেশ এগিয়েছে। আমিও মনে করি, প্রযুক্তিকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা উচিৎ। তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংশোধন হয়েছে। তবে এরপরও আরও আরও অনলাইন গণমাধ্যম চাই। অনলাইন শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত বিশ্বকে আলোকিত করছে। আমরাও প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত হতে চাই।