logo ০১ মে ২০২৫
বিআইডাব্লিউটিসির ভবন নির্মাণ নিয়ে নয়ছয়
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ,ঢাকাটাইমস
২১ জুলাই, ২০১৪ ১৪:০৮:১৭
image


ঢাকা: প্রধান কার্যালয়ের জন্য পুরনো ভবনটি ভেঙে নতুন বহুতল ভবন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডাব্লিউটিসি)। তাই আপাতত প্রধান কার্যালয়টি মতিঝিল থেকে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। রাজধানীর বাংলামোটরে নিজস্ব জমিতে অস্থায়ীভাবে সেমিপাকা ঘর তৈরি করে প্রধান কার্যালয় সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে বিআইডাব্লিউটিসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে সেমিপাকা ঘর তৈরি করতে ব্যয় হবে চার কোটি টাকারও বেশি। অথচ পরে এসব স্থাপনা খুব বেশি কাজে আসবে না।

অভিযোগ উঠেছে, সেমিপাকা ঘর তৈরিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া কাজে অনিয়ম করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানের বিপরীতে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনি¤œ দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে এক ব্যক্তি দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছেন। বিআইডাব্লিউটিসির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশে এই কাজ হয়েছে।

বিআইডাব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, অস্থায়ী প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ৬ মার্চ দরপত্র জমা পড়ে। সাত থেকে আটটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ওই দিনই সব দরদাতার উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হয়। দরপত্রে সর্বোচ্চ দর দেওয়া হয়েছিল চার কোটি ৬০ লাখ টাকা। সর্বনি¤œ দরদাতা হয় প্রান্তিক ট্রেডার্স। তাদের দর ছিল চার কোটি দুই লাখ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরই কাজটি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রান্তিক ট্রেডার্স কার্যাদেশ পায়নি। পেয়েছে দ্বিতীয় সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান খালেক এন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠানটি দর দিয়েছিল চার কোটি ১০ লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, স্বজনপ্রীতি ও মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই অনিয়ম করা হয়েছে।

সূত্র এই সময়কে জানায়, খালেক এন্টারপ্রাইজের মালিক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহীন। তিনি বিআইডাব্লিউটিসিতে দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি সরবরাহ করে আসছেন। তার সঙ্গে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের শ্যালক নান্নুর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময় নান্নুর মাধ্যমে শাহীন বিআইডাব্লিউটিসির বেশ কিছু ঠিকাদারি কাজ করেছেন। নতুন করে সেমিপাকা ঘর নির্মাণের কাজটি পাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। এর সঙ্গে বিআইডাব্লিউটিসির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীর যোগসূত্র রয়েছে। মূলত তার মাধ্যমেই কাজটি খালেক এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়েছে। কথা বলার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফোন করার পাশাপাশি প্রসঙ্গ জানিয়ে মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি মোহাম্মদ আলী।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডাব্লিউটিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নান্নু মিয়া বিআইডাব্লিউটিসির ঠিকাদারিসহ সব বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। বরং একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা তার সঙ্গে মিলেমিশে ঘুষ-বাণিজ্য করেন।’ এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বিআইডাব্লিউটিসির সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের সঙ্গে নান্নুর ভালো সম্পর্ক ছিল। তাকে হাত করে বিভিন্নভাবে কাজ বাগিয়ে নেন তিনি। বাংলামোটরে অস্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের কাজটিও তার মাধ্যমে খালেক এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়।’

নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র খোলার ৪৫ দিনের মধ্যে কার্যাদেশ দিতে হয়। কিন্তু ওই কাজটির কার্যাদেশ চার মাস পর দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। শুরু থেকেই প্রান্তিক ট্রেডার্সকে কাজটি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে সিমিলার সার্টিফিকেট (একই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা সনদ) না থাকায় প্রান্তিক ট্রেডার্সকে বাদ দেওয়া হয়। অথচ যেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয় তাদেরও একই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা নেই।

জানতে চাইলে প্রান্তিক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী খালেদ বিন আজিজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ এবং গণপূর্ত বিভাগে আমাদের ঠিকাদারির ১ নম্বর লাইসেন্স আছে। গণপূর্তের বড় বড় ভবন নির্মাণের অভিজ্ঞতা প্রান্তিক ট্রেডার্সের আছে। নিয়ম অনুযায়ী বিআইডাব্লিউটিসির কাজটিও আমাদেরই পাওয়ার কথা ছিল। কারণ সর্বনি¤œ দরদাতা ছিলাম আমরাই। কিন্তু কোনো ধরনের কারণ না দেখিয়েই অন্যায়ভাবে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, কার্যাদেশ দেওয়ার আগেও বিআইডাব্লিউটিসি থেকে তাদের জানানো হয়েছিল যে, কার্যাদেশ দেওয়ার ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু হঠাৎ করেই জানতে পারেন কাজটি তারা পাচ্ছেন না।

(ঢাকাটাইমস/ ২১ জুলাই /এইচএফ/ এআর/ ঘ.)