ঢাকা: ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে চারদিকে শোরগোল শুরু হলেও এ ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়েছে বিএনপির তিনটি সহযোগী সংগঠন-যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলা দলকে।
সরকার পতনে আন্দোলন নিয়ে এই তিন সহযোগী সংগঠনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়নি এখনো। কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়নি কোনো দিকনির্দেশনাও।
এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে এই তিন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে বলে জানা গেছে।অনেক নেতাকে বলতো শোনা গেছে যে, দলের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয়তা হয়তো কমে গেছে।তবে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই এ জন্য দলের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা দায়ী করছেন।
ঈদ পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও কিছুটা ক্ষোভ থাকার কথা স্বীকার করে দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে সন্দেহতো রয়েছেই। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। সেখান থেকে জানা গেছে, ঈদের পর আন্দোলনের যে হুংকার ছাড়া হয়েছে তা আসলে ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
তবে এই বিষয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যুবদলকে ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে জানানোর কোন প্রয়োজনও নেই। তবে আমরা আন্দোলনের মাঝেই আছি, আমাদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের যখন সময় আসবে তখনই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে নামবো।
গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য বেগম জিয়া এই তিন সহযোগী সংগঠনের তৎপরতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এদেরকে ব্যর্থ হিসাবে চিহিৃত করে সংগঠন তিনটি সংস্কার করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। এর পর কয়েকমাস পার হলেও সংগঠন সংস্কারে হাত দেয়া হয়নি এখনো।এরই মধ্যে আবার আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। ফলে এ নিয়ে সংগঠনের নেতাদের মধ্যে এটা দ্বিধা কাজ করছে।আর এই দ্বিধা নিয়ে এবং এদেরকে চাঙ্গা না করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় খোদ দলের মধ্য থেকেই কাটানো যায়নি এখনো।
সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য বিএনপির অন্যতম এই তিন সংগঠনকে কোন দিক নির্দেশনাও না দেয়ায় রাজপথে আন্দোলনের জন্যও সেভাবে প্রস্তত করতে পারেনি এই তিনি সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, অফিসিয়ালি ছাত্রদলকে আন্দোলনের বিষয়ে অবগত করা হয়নি এটা ঠিক। তবে এর কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ ছাত্রদল সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তবে এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের পর সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে ছাত্রদলের দু’দফা বৈঠক হয়েছে। তাই এই কথা সম্পূর্ণ অসত্য। তারা আন্দোলনের জন্য ছাত্রদলকে দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন। ঈদের পর তাদের সঙ্গে আমরা আবারও বসবো এবং আন্দোলনের চূড়ান্তু প্রস্তুতি নেবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে আন্দোলনের অনেক বিষয় থাকে বলেই এই কথাগুলো আমরা প্রকাশ করছি না। ঈদের পর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই এই স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে।’
কেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোকে প্রস্ততি নেওয়ার জন্য কোন নিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি? এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আন্দোলনের অনেক কৌশল ও প্রক্রিয়া থাকে। তাই বলে আন্দোলন থেমে থাকে না। আন্দোলনের যখন সময় আসবে তখন তাদেরকে অবহিত করা হবে। তবে তারা আন্দোলনের জন্য তৈরি হয়ে আছে।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামী আগামী সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত থাকবে কি না এই নিয়ে বিএনপির মধ্যে চলছে ধুম্রজাল। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াত গোপনে সরকারের সাথে আতাঁত করছে। তাই জামায়াত সরকার বিরোধী আন্দোলনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তবে এই বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের প্রচার সহকারি ইবরাহীম মাহমুদ ঢাকাটাইমস টেয়েন্টিফোরকে বলেছেন, জামায়াত অবশ্যই সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির সাথে থাকবে। কিন্ত ঈদের পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে জামায়াত কি করবে।
(ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/কেএইচ/এআর/ ঘ.)