logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
ভয়াবহ নদী ভাঙনের শঙ্কা
তাানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
০৩ আগস্ট, ২০১৪ ১১:০৭:৪২
image


ঢাকা: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সবুজগ্রামে জন্ম মহসিন খানের। কিন্তু থাকতে পারেননি এলাকায়। পাড়ি জমিয়েছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। কারণ প্রমত্তা মেঘনার ভাঙন। নদী ভাঙতে ভাঙতে চলে এসেছে বাড়ির একেবারে কাছে। কখন কী হয় সে আশঙ্কায় প্রাণ নিয়ে সরে গেছেন কোনোমতে।

এই ঢাকাটাইমসকে মহসিন খান বলেন, ‘বাপ-দাদার বাড়ি ছাই কার যাইতে মনে কয়। কি করুম মেঘনার ভঙনের জন্য তো আর থাকতাইম হারি নঁ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এদের আবার বেশিরভাগই পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে শহর অভিমুখে ছুটছে।

সত্তর ও আশির দশক থেকে এদেশে নদী ভাঙনের তীব্রতা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ক্ষয়ক্ষতি। প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে আট হাজার সাতশ হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়। যার বেশিরভাগ কৃষি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধেক লোকেরই টাকার অভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয় না। তারা হয় গৃহহীন, ছিন্নমূল। এরা সাধারণত বাঁধ, রাস্তা, পরিত্যক্ত রেলসড়ক, খাসচর, খাসজমিতে অবস্থান নেয়। অনেকেই আবার কাজের খোঁজে আসে শহরে। নদী ভাঙনের কারণে  বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক ও পারিবারিক সংকট, বাড়ছে বেকারত্ব।

উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ভূমিহীনদের ৫০ শতাংশই নদী ভাঙনের শিকার। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নদী ভাঙনের কারণে এক ব্যক্তির জীবনে গড়ে ২২ বার ঠিকানা বদল করতে হয়।

সাধারণত বর্ষার পানি নেমে গেলে শুরু হয় নদী ভাঙন। কিন্তু এবার বগুড়া, জামালপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরে বর্ষা আসার আগেই শুরু হয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন। বর্ষা আসার আগেই নদীর রুদ্ররূপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে তীরের মানুষ।

নদী ভাঙন নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস সেন্টার-সিইজিআইএসএস। স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে সমীক্ষা জরিপে বলা হয়েছে, বর্ষায় ও বর্ষার পর দেশের প্রধান চারটি নদীতে তিন হাজার ছয়শ হেক্টর জমি, ৪৮৫ হেক্টর বসতভিটা, সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, তিন কিলোমিটার জেলা সড়ক ও ৬ কিলোমিটার উপজেলা ও গ্রামীণ সড়ক বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এবার নদী ভাঙনের সমস্যা অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি হবে বলেই মনে করছে সংস্থাটি। চলতি বছর ছয় হাজার হেক্টর জমি আছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

প্রতিষ্ঠানটির উপ-নির্বাহী পরিচালক মমিনুল হক সরকার এই সময়কে বলেন, নদী শাসন আর ভাঙন রোধে যে বাঁধগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ। আর এবার পানিতে ঘূর্ণি বেশি হওয়ায় নদী তীরে প্রচ-ভাবে আঘাত হানবে।

তবে সত্তরের দশকে নদী ভাঙনের যে প্রকোপ ছিল তা অনেকটাই কমেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর যমুনা নদীতে বিলীন হতো ৫ হাজার হেক্টর ভূমি এলাকা। কিন্তু  এখন কমে দুই হাজার হেক্টরে নেমেছে। পদ্মায় ’৯০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১২ হেক্টর করে ভাঙন হলেও এখন তা এক হাজার দুইশ হেক্টরে নেমেছে।

নদী ভাঙনের কারণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ একটি পলি গঠিত বদ্বীপ হওয়ায় এখানকার ভূমি নদীর পানির ধাক্কায় বা সামান্য তোড়ে অতি সহজেই ভেঙে     যায়। বর্ষাকালে বা বন্যার সময় নদীতে পানি বাড়লে বর্ধিত পানির চাপে নদীর পাড়ে ভাঙন হয়ে থাকে। যেখানে যেখানে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে, সেখানে সৃষ্ট বাঁকে নদী ভাঙন হয়। নদী অনেক শাখায় বিভক্ত হয়ে গেলে মধ্যস্থিত চরের পাড়ে ভাঙন হয়।

সিইজিআইএসএসের উপ-নির্বাহী পরিচালক মমিনুল হক সরকার বলেন, নদীর পাড়ে নিচের দিকে অবস্থিত নরম পলি মাটি পানির ধাক্কায় গলে যাওয়ার ফলে নিচের দিকে ফাটল সৃষ্টি হয় এবং ওপরের শক্ত মাটি প্রথমে ধসে যায় ও পরে ভেঙে পড়ে। এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি বৃদ্ধির সময় পাড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় এবং পাড় ভাঙতে থাকে। নদীতে নতুন চর সৃষ্টি বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক কারণে নদীর স্বাভাবিক গতিপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে ভাঙন হয়ে থাকে।

আছে মানবসৃষ্ট কারণ

ভাঙনে মানবসৃষ্ট কারণের মধ্যে আছে নদীর মাঝখানে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদীর পাড় বা জমি খানিকটা ছেড়ে দিয়ে অথবা নদীর পাড় থেকে অনেকটা ভেতরে গিয়ে ভাঙন প্রতিরোধমূলক বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের কারণে নদী ভাঙন হয়ে থাকে। অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও বাঁধ নির্মাণ করে মৌসুমি বর্ষার পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে নদীতে পানির চাপ বাড়ে এবং ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে।

শহর রক্ষার উদ্দেশে নদীর এক পাড়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অপর পাড়ে ভাঙন হয়। নদীর উৎস মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হঠাৎ অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে নদীর পাড়ে আকস্মিক ভাঙন হয়ে থাকে।

সøুইস গেট নির্মাণ করে পানি নিয়ন্ত্রণের নামে পানি আটকে দেওয়ার ফলে পানির চাপ বৃদ্ধির কারণে নদীর পাড়ে ভাঙন হয়ে থাকে। চর-ভূমির গাছ ও কাশবন নিধনের ফলে চরের পাশ দিয়ে ভাঙন হয়। অযৌক্তিক ড্রেজিং বা নদী খনন ও বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলেও নদী ভাঙন হয়ে থাকে।

নদী ভাঙনের প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী ভাঙনের সুদূরপ্রসারি ফলাফল সমাজ জীবনের ওপর পড়ছে। এর ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অভাবের তাড়নায় কিংবা অন্যের চাপের মুখে অবশিষ্ট জমিজমা, গবাদিপশু এবং মূল্যবান সামগ্রী হাতছাড়া করে ফেলে। অনেক পরিবার অতি মাত্রায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে পতিত হচ্ছে। খাবার পানি ও পয়ঃপরিচ্ছন্নতার তীব্র সংকট দেখা দেয়। নারীদের ব্যক্তিগত বা দৈহিক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয় এবং নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। বহুসংখ্যক লোক কর্মসংস্থান লাভের বা বেঁচে থাকার আশায় এলাকা ত্যাগ করে শহর বা অন্য কোনো স্থানে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়ে চলে যায়। বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের মাঝে ভিক্ষাবৃত্তির প্রসার ঘটে। লেখাপড়া বাধাপ্রাপ্ত হওয়া এবং স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বহু ছেলেমেয়ে একবার স্কুল ছেড়ে গেলে আর ফিরে আসতে পারে না।

শত শত বা হাজার হাজার মানুষ বাঁধ বা শহরের বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুরা বাঁধ বা বস্তির জীবনে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়। দারিদ্র্য ব্যাপকভাবে পুষ্টিহীনতার প্রসার ঘটায়। শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সামাজিক অবস্থানের চরম অবনতি ঘটে। বিবাহ বিচ্ছেদ, স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক পরিবার পরিজন ত্যাগ, বহু বিবাহ ইত্যাদি নেতিবাচক ঘটনা বৃদ্ধি পায়। পরিবারের সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহমর্মিতা শিথিল হয়ে পড়ে। নদীতে ভেঙে যাওয়া জমি জেগে উঠলে তা দখলের প্রতিযোগিতায় লড়াই, সন্ত্রাস এবং মামলা-মোকদ্দমা বৃদ্ধি পায়।

সবচেয়ে ভয়ংকর যমুনা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে যমুনার ভাঙনে। আবার সবচেয়ে বেশি মানুষের আশ্রয় যমুনার জেগে ওঠা চরে। দেশে যত নদীর চর রয়েছে এর বেশিরভাগই যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকায়। যমুনা তীরবর্তী এলাকায় চরের জমির পরিমাণ এক লাখ হেক্টর। এছাড়া পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকায় চরের জমির পরিমাণ ৭৫ হাজার হেক্টর। তাদের মতে চরে জীবন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা গেলে এসব মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে। তেমনি শহরের বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। বিশেষ করে চরে বসবাসকারী অস্থানীয় এই লোকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।

বাংলাদেশে ছোটোবড় মিলিয়ে ২৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী আছে। এর মধ্যে প্রধান নদীগুলো হলো গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা। এ চারটি নদীই সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হচ্ছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ নদী যমুনা। এছাড়া মেঘনা, পদ্মা, তিস্তা, ধরলা, আত্রাই, পুরনো ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা, খোয়াই, সুরমা, মনু, জুরী, সাঙ্গু, ধলাই, গোমতী, মাতামুহুরী, মধুমতী, সন্ধ্যা, বিশখালী ইত্যাদি নদী ভাঙনপ্রবণ। দেশের এসব নদীর প্রায় ১৩০ স্থানে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যভাবে নদী ভাঙনের ঘটনা ঘটছে। যমুনার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে সিরাজগঞ্জ, গঙ্গায় কুষ্টিয়া, পদ্মায় শরীয়তপুর এবং নিম্ন প্রবাহিত মেঘনার শিকার হচ্ছে বরিশাল জেলা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর পাড় গঠনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ যমুনা নদী। সিইজিআইএসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যমুনার করাল গ্রাসের শিকার হয়েছে দেশের ৯০ হাজার ৩৬৭ হেক্টর এলাকা। ১৬ হাজার ৪৩৮ হেক্টর এলাকায় ভাঙনের পরিবৃদ্ধি হয়েছে।

শুধু সিরাজগঞ্জে এ সময়ের মধ্যে যমুনায় বিলীন হয়েছে ২২ হাজার ৭৮৪ হেক্টর এলাকা। কৃষিজমি, বসতবাড়ি, কাঁচাপাকা অবকাঠামো ও স্থাপনা নদীর গর্ভে প্রতি বছর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বহু এলাকা নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যমুনায় বিলীন হয়েছে কুড়িগ্রামে ১৮ হাজার ৪৭৯ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হাজার ৩৪৮ হেক্টর, জামালপুরে ১০ হাজার ৬০৮ হেক্টর, বগুড়ায় ১০ হাজার ৯৩৮ হেক্টর, টাঙ্গাইলে ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর এবং মানিকগঞ্জে ৬ হাজার ৩৩৫ হেক্টর ভূমি। শুধু ২০১২ ও ২০১৩ সালে যমুনা নদীর এসব এলাকায় ভাঙনের শিকার হয়েছে ৩ হাজার ৭৩৪ হেক্টর এলাকা।

গঙ্গা নদীর ভাঙন

পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভেতর দিয়ে প্রবেশের পর আরিচার কাছে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নদী গঙ্গা হিসেবে পরিচিত। যমুনার ন্যায় এ নদীও যথেষ্ট ভাঙনপ্রবণ। প্রতি বছর এ নদীর ভাঙনের করাল গ্রাসের শিকার হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, পাবনা ও রাজবাড়ী জেলা। ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত গঙ্গা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে ২৯ হাজার ৮৪১ হেক্টর এলাকা। এ সময়ের মধ্যে ভাঙনের ব্যাপ্তি হয়েছে ২৫ হাজার ৯ হেক্টর এলাকা। তবে ভাঙনের সবচেয়ে বেশি শিকার কুষ্টিয়া জেলা। সিইজিআইএসএসের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে কুষ্টিয়ার ১১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর এলাকা। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪ হাজার ৬৯৩ হেক্টর, রাজশাহীতে এক হাজার ৬৭০ হেক্টর, নাটোরে দুই হাজার ৪৫ হেক্টর, পাবনায় দুই হাজার ২০৩ হেক্টর এবং রাজবাড়ীর কাছে ভাঙনের শিকার হয়েছে সাত হাজার ৩৭৩ হেক্টর ভূমি। ২০১২ ও ২০১৩ সালে এসব এলাকায় নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে এক হাজার ৯০৮ হেক্টর এলাকা।

এ ছাড়া গঙ্গা নদীর ভাঙনে ২০১৩ সালে এক হাজার ৩২৭ হেক্টর ভূমি, ৫২ হেক্টর বসতি এলাকা, ৫১৫ মিটার উপজেলা সড়ক ও নদী রক্ষা বাঁধের ৬৬০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

পদ্মা নদীর ভাঙন

পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, আরিচা হতে গঙ্গা ও যমুনার মিলিত ¯্রােত পদ্মা নদী হিসেবে পরিচিত, যা চাঁদপুরের কাছে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য ১০০ কিলোমিটার। এ নদীও ভাঙনপ্রবণ হিসেবে পরিচিত। সিইজিআইএসএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে ৩৩ হাজার ২২৯ হেক্টর ভূমি এলাকা। ভাঙনের ব্যাপ্তি হয়েছে ১১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর এলাকা। এ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে মানিকগঞ্জে ছয় হাজার ৮৩০ হেক্টর, রাজবাড়ীতে ৪৭৩ হেক্টর, ফরিদপুরে সাত হাজার ৭৮০ হেক্টর, ঢাকায় দুই হাজার ৪৬০ হেক্টর, মুন্সিগঞ্জে পাঁচ হাজার ৯৫৮ হেক্টর, মাদারীপুরে এক হাজার ৩০৮ হেক্টর। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ভেঙেছে শরীয়তপুরে, আট হাজার ৪২০ হেক্টর এলাকা।

২০১৩ সালে এ নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে ৫১২ হেক্টর ভূমি এলাকা, বসতি এলাকায় ৯৬ হেক্টর, জেলা সড়ক ৫৫১ মিটার এবং নদী রক্ষা বাঁধের এক হাজার ৬৯৬ মিটার।

নিম্ন প্রবাহিত মেঘনায় ভাঙন

পদ্মা এবং মেঘনার মিলিত ¯্রােত নিম্ন প্রবাহিত মেঘনা নদী হিসেবে পরিচিত। এ নদীটি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলেছে। সিইজিআইএসএসের সমীক্ষার হিসাব অনুযায়ী, নিম্ন প্রবাহিত মেঘনার সবচেয়ে বেশি ভাঙনকবলিত এলাকা বরিশাল। এ সংস্থার হিসাব মতে, ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এ নদীতে ভাঙনের শিকার হয়েছে ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর ভূমি এলাকা। এ ছাড়া ভাঙনের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে ২২ হাজার ২৬৫ হেক্টর এলাকায়। এ নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে বরিশাল জেলা। এ পর্যন্ত এ জেলায় ৮ হাজার ৯৫৩ হেক্টর, ভোলায় চার হাজার ১১২ হেক্টর, চাঁদপুরে ৭ হাজার ৬০৮ হেক্টর, লক্ষ্মীপুরে ৩ হাজার ৫৯৫ হেক্টর এবং শরীয়তপুরে এক হাজার ৫৫৩ হেক্টর ভূমি ভাঙনের শিকার হয়েছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে এ নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে মোট সাত হাজার ৫০৬ হেক্টর ভূমি এলাকা। এছাড়া ২০১৩ সালে এ নদীর বসতি এলাকায় ভাঙনের শিকার হয়েছে ৮৫৮ হেক্টর এলাকা, জেলা সড়ক ৭৪১ মিটার, উপজেলা সড়ক ৪৫০ মিটার এবং গ্রামীণ রাস্তা ৮ হাজার ২১৫ মিটার এলাকা।

(ঢাকাটাইমস/ ০৩ আগস্ট/ টিএ/ এআর/ ঘ.)