ঢাকা:পদায়নযোগ্য কর্মকর্তার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে প্রশাসনযন্ত্রে। একারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ প্রশাসনের অন্যতম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে পরিবর্তন আনতে পারছে না।
এ সংকটের ফলে অনেক ইউএনও-কেই একই কর্মস্থলে তিন থেকে চার বছর, কোন কোন ক্ষেত্রে আরো বেশি সময় থাকতে হচ্ছে।
অনেক ইউএনও'র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এবং স্থানীয় সাংসদ বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বদলির সুপারিশ থাকা সত্বেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এদের প্রত্যাহার করতে পারছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সরিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা অন্য কোন পদে পদায়ন করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবু নাসের চৌধুরীও প্রশাসনের নিম্নস্তরে কর্মকর্তার সংকটের কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, নতুন নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলেও ইউএনও পদে পদায়নের জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে তাদের নুন্যতম ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে। এ সময় বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করে তাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পরবর্তীতে তাদের ইউএনও পদে পদায়ন করা হবে।
বর্তমানে মাঠ প্রশাসনের ইউএনও পদগুলোতে রয়েছে বিসিএস ২৪ ও ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এই দুই ব্যাচে ৫৪১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। ইউএনও পদের জন্য প্রয়োজন ৪৮৭ জন কর্মকর্তা। কিন্তু অনেক কর্মকর্তাই ইউএনও পদে দায়িত্ব পালন করতে চান না। তাই এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের ৪৮৭ টি উপজেলায় সব ক'টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে রদবদল করেন। ওই সময় নিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেককেই পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে অন্য পদে অথবা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন করা হয়েছে।
তবে যারা বর্তমানে ইউএনও পদে রয়েছেন, তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৫০ জন নুন্যতম দুই বছর ধরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে কর্মরত। এদের মধ্যে অন্তত: ২০০ জন তিন বছরের বেশি এবং ৪০ জন চার বছরের বেশি সময় ধরে ইউএনও হিসেবে একাধিক উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। পাঁচ বছর মেয়াদ পুর্ণ করেছেন এমন কর্মকর্তাও রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যারা পাঁচ বছরের বেশি সময় ইউএনও বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে মাঠ প্রশাসনে রয়েছেন, তাদের উপ-সচিব পদে পদোন্নতির সময় হয়ে গেছে। এদের নাম ইতোমধ্যে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে (এসএসবি) আলোচনাও হয়েছে।
কিন্তু নিচের দিকে জুনিয়র কর্মকর্তার অভাব থাকায় তাদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। একইসঙ্গে অভিযোগ অথবা প্রত্যাহারে জন্য ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে, এমন ইউএনওদেরও প্রত্যাহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
কামাল আবু নাসের চৌধুরী জানান, ২৭তম ব্যাচের ২৫০ জন কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ আগামী নভেম্বর মাসে ছয় বছর পুর্ণ হতে যাচ্ছে। এসব কর্মকর্তাকে ইউএনও পদে পদায়ন করা যাবে। এতে অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে এডিসি পদে অথবা প্রত্যাহার করে অন্য কোন পদে পদায়ন করা যাবে। যা বিরাজমান এই সংকটের সাময়িক সমাধান করবে।
পরবর্তীতে অন্য ব্যাচের কর্মকর্তারাও ওই পদের জন্য যোগ্য হয়ে উঠলে এ সমস্যা আর থাকবে না বলে জানান ওই সিনিয়র সচিব।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ২ জুলাই কাজে যোগ দেন ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারে রয়েছেন ৩৪২ জন।পরের বছর ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট কাজে যোগ দেন ২৫তম ব্যাচের ১৯৯ জন কর্মকর্তা।
২৭তম ব্যাচের ২৭৯ কর্মকর্তা কাজে দেন ২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবর। প্রশিক্ষণ শেষে কাজে যোগ দেওয়া এসব কর্মকর্তা আগামী ছয় মাসের মধ্যেই ইউএনও পদে পদায়নের জন্য যোগ্য হয়ে উঠবেন।
মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল চৌধুরী বলেন, ১৮তম থেকে ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই পদোন্নতির যোগ্য হয়ে উঠেছেন। ২১তম ব্যাচও বর্তমানে পদোন্নতির বিবেচনায় আসার অপেক্ষায় রয়েছে। এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
নিচের দিকের পদগুলো পূরণের কর্মকর্তা পেলেই এসব কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়া হবে। এতে এ কয়েকটি ব্যাচের পদোন্নতিজটও খুলবে, জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/এইচআর/এআর/ ঘ.)