logo ১৪ মে ২০২৫
মন্ত্রী-সচিবরা দেশের বাইরে সচিবালয় ফাঁকা
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাটাইমস
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ১১:১৫:৪৯
image


ঢাকা: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে গেছেন, তাঁর  সফরসঙ্গী সংখ্যা ১৮২। ১৮২ জনের মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিব আছেন ১৮ জন। এ ছাড়া আরও অন্তত ১৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এখন দেশের বাইরে থাকায় সচিবালয় এখন দৃশ্যত ফাঁকা । আজও যাচ্ছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী  মোস্তাফিজার রহমান।

মন্ত্রী ও সচিবদের একসঙ্গে বিদেশে যাওয়া বারণ। অথচ এ মুহূর্তে অন্তত ১০টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব দেশের বাইরে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-উপদেষ্টার সংখ্যা ৩৬। এঁদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন বিদেশ ভ্রমণে রয়েছেন। শীর্ষ ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে ওই সব মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে একজন সচিব জানান, অনেক সময় আয়োজক প্রতিষ্ঠানও বিদেশে যাওয়ার খরচ দেয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের টাকাই খরচ হয়। এই খরচ একেক দেশের জন্য একেক রকম।

২০১১ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রী-সচিবসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা জারি হয়। এতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব বা ভারপ্রাপ্ত সচিবদের একত্রে বিদেশ ভ্রমণ সাধারণভাবে পরিহার করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদির বার্ষিক সভা, দাতা গোষ্ঠীর সভা হলে অত্যন্ত সীমিত ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবরা একই সঙ্গে বিদেশে আছেন, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে বিদেশ সফর অপরিহার্য ছিল না। বিদেশে অবস্থান করা মন্ত্রী-সচিবদের কেউ কেউ পর্যটন মেলা, চুক্তি সই, জাহাজ পরিদর্শনসহ বিভিন্ন কাজে গেছেন। এগুলো অপরিহার্যতার সংজ্ঞায় পড়ে না।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের শৈথিল্য ছাড়া আর কিছু নয়। এর ফলে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক কাজের গতি নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেকের লক্ষ্য থাকে বেড়ানো। আর মানুষকে দেখানো হচ্ছে।

১০ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী-সচিব ফাকা : ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর মন্ত্রণালয়ের সচিব ফায়জুর রহমান চৌধুরী গেছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আছেন জাপানে, সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরীও তাঁর সঙ্গে। ২৬ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে তাঁরা দুজনই ২৮ সেপ্টেম্বর হজের জন্য সৌদি আরবে যাবেন। ফিরবেন মধ্য অক্টোবরের দিকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। সঙ্গী তাঁর মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নিয়াজউদ্দিন মিঞা। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন ও সচিব মো. নজিবুর রহমানও যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও সচিব মো. শহীদুল হকও যুক্তরাষ্ট্রে। মন্ত্রী দেশে থাকলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মালয়েশিয়া এবং সচিব শেলীনা আফরোজা জেনেভা ও লন্ডনে গেছেন।

ধর্মসচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান আজ বুধবার এবং মন্ত্রী মতিউর রহমান পরশু শুক্রবার সৌদি আরবে যাবেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আজ ভারতে যাবেন। একই মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস  দিল্লি গেছেন।

পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চীনে আছেন, প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আছেন নেদারল্যান্ডসে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘ সময় বিদেশে থেকে গত সোমবার দেশে ফিরেছেন। এ মন্ত্রণালয়ের সচিব মনজুর হোসেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির একটি অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।

এ ছাড়া শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদেশ সফরে আছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আজকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা। মন্ত্রী পদমর্যাদার দুই উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও মশিউর রহমানও যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।

বিদেশে থাকা সচিব: এ মুহূর্তে বিদেশে অবস্থান করা মোট ১৬ জন সচিবের মধ্যে মন্ত্রীর সঙ্গে বা আলাদাভাবে গেছেন ১০ সচিব। তাঁদের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ ও মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদার। এ ছাড়া বস্ত্র ও পাটসচিব ফণীভূষণ চৌধুরী, নৌপরিবহণ সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার আছেন বিদেশে।

এদিকে মন্ত্রী ও সচিব না থাকায় মন্ত্রণালয়গুলোর অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে গা ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অনেকেই অফিস করছেননা। কেউ বা এলেও অল্প সময় থেকে চলে গেছেন। এসব মন্ত্রণালয়ে দালালদের তেমন ভিড় নাই। সচিবালয় ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

 সচিবালয়ে ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। মন্ত্রী-সচিবেরা বিদেশ আছেন, কয়েক দিন পর অনেকেই হজে যাচ্ছেন। ধর্মমন্ত্রী ছাড়াও দুই মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু হজে যাচ্ছেন। ঈদুল আজহার আগে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকেই এলাকায় যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে বেশ আগে ভাগেই।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকলে এমনিতেই একধরনের শিথিল অবস্থা তৈরি হয়। ২ অক্টোবর লন্ডন হয়ে তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। এর পরপরই ঈদ। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঈদের আগেই ঈদ শুরু হয়েছে।

এবিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ বিষয় তাঁর কোনো বক্তব্য নেই।

ঢাকাটাইসমস/২৪সেপ্টেম্বর/এইচআর/ এআর/ ঘ.)