বিভাগীয় মামলার তদন্তে আলাদা কর্তৃপক্ষ হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০২:১৩:৫৮

ঢাকা: সরকারের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভাগীয় মামলা নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ করবে সরকার। বর্তমানে এসব মামলার তদন্ত করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগেরই কর্মকর্তারা। এর ফলে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার কোনোটিই সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলার তদন্ত কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর কর্তৃক পরিচালনার বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তে একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালনা করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্ভাব্যতা যাচাই করে এ-সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সচিব সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
সচিব সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর হাজার হাজার বিভাগীয় মামলা হয়। এসব মামলার খুব কমই যথাসময়ে নিষ্পত্তি হয়। আর নিষ্পত্তি হলেও তাতে গলদ থেকে যায়। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা একই বিভাগের অন্য কর্মকর্তা তদন্ত করায় তা নিরপেক্ষ হয় না। বেশির ভাগ বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তি হয় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে। অথচ এসব মামলায় কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগও থাকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত অর্থবছরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ, বিজিবি, আনসার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন অধিদপ্তরে তিন হাজার ২৮২টি বিভাগীয় মামলা হয়। এর মধ্যে এক হাজারের বেশি মামলাই অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তরে একই সময়ে দুই হাজার ৪০৯টি অডিট আপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। এসব অডিট আপত্তির সঙ্গে পাঁচ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার অনিয়ম জড়িত। এসব আপত্তির মধ্যে মাত্র ৫৪৩টির নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি থাকা আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তি না হলে একসময় এসব অডিট আপত্তি থেকেও বিভাগীয় মামলা হবে। এই যদি হয় একটি মন্ত্রণালয়ের চিত্র, তাহলে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'বিভাগীয় মামলা দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তি হয়, তাতে দুর্নীতির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।'
গত সচিব সভায় বিভাগীয় মামলা তদন্তের জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠনের পাশাপাশি আরো ২৮টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের অন্যতম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলসংক্রান্ত। উপযুক্ত তথ্য ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অর্থ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে মন্ত্রণালয় থেকে যখন কোনো ব্যক্তির জন্য আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয় তখন সম্পূর্ণ তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীর অসুস্থতার ধরন, অসুস্থ থাকাকালে গৃহীত চিকিৎসার বিবরণ, হাসপাতালের নাম, চিকিৎসা ব্যয়ের বিবরণ- আবেদনে এসব বিষয়ের স্পষ্ট তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিলের অর্থ ব্যবহারের প্রস্তাবে টাকার অঙ্ক উল্লেখ না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সহায়তা হিসেবে কাকে কত টাকা দেওয়া হবে সেটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারের ওপর ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হরদম বিদেশ ভ্রমণ করেন। এসব ভ্রমণে নীতিমালা মানা হয় না। নীতিমালায় তরুণ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট কাজে বিদেশ পাঠানোর নীতি থাকলেও তরুণদের বিদেশে পাঠানো হয় না। জুনিয়র কর্মকর্তার জায়গায় বিদেশ সফরে চলে যান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সিনিয়র কর্মকর্তা বিদেশে গেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো লাভ হয় না। কারণ সিনিয়র কর্মকর্তারা দ্রুত অবসরে চলে যান।
গত সচিব সভায় বিদেশে প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংস্থা বা প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিবছর সংসদে অনেক আইন প্রণয়ন করা হয়। এসব আইনের খসড়া করেন আমলারা। এসব বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় আইনে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। গত বছর সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইন কার্যকর করতে পারছে না সরকার। আইনে নিরাপদ কর্তৃপক্ষ গঠনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আইন প্রণয়ন কার্যক্রম সুপরিকল্পিত, সমন্বিত ও ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে 'সময় নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা' প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক বা গণশুনানির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
চাকরির বাজারে মন্দা চলছে। পর্যাপ্ত পদ থাকার পরও সরকারি পদ পূরণ হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষর্থীদের বেকার থাকতে হচ্ছে। একটি পদ সৃজন করতে সময় লাগছে এক হাজার ৬০০ দিনের বেশি। আর পদ পূরণ করতে দুই হাজার ৬০০ দিন সময় লাগছে। এ অবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ছাড়পত্রের অনুরোধ পাওয়ার সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ সরকারি পদ শূন্য রয়েছে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চাকরির শুরুতে কমপক্ষে পাঁচ বছর মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া শেরে বাংলানগরে সচিবালয় স্থানান্তর, নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ সৃষ্টি, ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা নিরসনের বিষয়েও একাধিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/৩অক্টোবর/এমএম)