logo ২১ মে ২০২৫
দুই মাসে ডিএসইতে গড় লেনদেন ৭৩৮ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১২ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০৫:২৭
image

২০১১ সালের পর এবারই প্রথম দুই মাস ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন গড়ে সাতশ’ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। ৩ আগস্ট থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৩৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর আগে একটানা এরচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ২০১০ এর ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর বাজার ধসের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে লেনদেনের পরিমাণ। বর্তমানে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। গত দুই মাসে ওঠানামার মধ্য দিয়ে সূচক বেড়েছে ৭৩৩ পয়েন্ট। এদিকে ঈদ- উল- আজহা ও দুর্গা পূজার ছুটির পর আজ রবিবার থেকে শেয়ারবাজারের লেনদেন পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে।


 


বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ এর পর থেকে ছয় বা সাত মাস পর পর লেনদেন কয়েকদিন ভালো হলেও তা স্থায়ী হয়নি। সূচকেও দেখা গেছে একই প্রবণতা। তবে এবার বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে লেনদেন ভালো হচ্ছে। সূচকেও দেখা যাচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার হয়েছে। অনেকেই বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের ভিড়। ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় বাজার ইতিবাচক থাকলে সামনে বিনিয়োগ আরও বাড়তে পারে। তাছাড়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বাড়তে পারে।


 


বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে একটানা সূচক বাড়তে থাকবে এমনটা ভাবা কখনোই ঠিক নয়। তাই দর সংশোধন হলেও বিনিয়োগকারীদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ দর সংশোধন বাজারের জন্য ইতিবাচক। অন্যথায় বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে।


 


এদিকে দেশে শিল্প বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুব ভালো নেই। এজন্য ব্যাংকে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তারল্য পড়ে আছে। তাই আমানত নিরুত্সাহিত করতে আমানতের সুদ হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই বিনিয়োগের জন্য শেয়ারবাজারকে বেছে নিচ্ছেন। তাই বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে এখন কারসাজির কারণে বাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর কৃত্রিমভাবে বাড়লে বা কমলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাবেন। তাই কেউ যেন কারসাজি করতে না পারে সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নজর দিতে হবে।


 


বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে কিছু কিছু শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অস্বাভাবিকভাবে দর বৃদ্ধির ফলে শেয়ারগুলোর দাম সর্বোচ্চতে অবস্থান করছে। কিছু কিছু কোম্পানির পিই রেশিও (দাম-আয় অনুপাত) ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলেও কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ছে। এতে ওই কোম্পানিগুলো ঘিরে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে কিছু ভালো শেয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে তলানীতেই পড়ে আছে। এ ধরনের প্রবণতা বাজারের জন্য ইতিবাচক নয়।


 


তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১০ এর ধস পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে গড়ে এক হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। আগস্ট মাস থেকেই কমতে থাকে লেনদেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের মার্চ পযন্ত লেনদেন হয়েছে তিনশ’ থেকে চারশ’ কোটি টাকার মধ্যে। এরপর ২০ দিন লেনদেনের পরিমাণ ভালো ছিল।


 


সেসময় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে গড়ে সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকার মতো। আবার শুরু হয় লেনদেন খরা। এরপর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ১৫ দিন লেনদেন হয় ছয়শ’ কোটি টাকার উপরে। এরপর ২০১৩ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে লেনদেন খরা। এভাবে ছয় মাস পর পর কিছুটা লেনদেন বাড়লেও তা বিশ দিনের বেশি স্থায়ী হতে পারেনি। তবে এবার টানা দুই মাস ধরে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে গড়ে সাতশ’ কোটি টাকার বেশি।


 


গেল মাসে বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি ও সূচক বাড়ার পেছনে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ একটি বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৭৫২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। আগস্ট মাসে তা ছিল ৩১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার। অর্থাত্ সেপ্টেম্বরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার বেশি লেনদেন করেছেন। যা শতাংশের হিসাবে ১৩৭ শতাংশ।


 


আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস্ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদ হার কমে যাওয়ায় অনেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আসছেন। ফলে বাজারের লেনদেন বাড়ছে। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে উত্সাহী হচ্ছেন। এতে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এবং আস্থার সঙ্কট তৈরি না হলে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা ফিরে আসবে।


 


তবে বাজারে বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সুযোগে কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার অতিরিক্ত পরিমাণে বাড়ছে। এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে। তাহলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।


 


(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/এমএটি)