logo ২০ মে ২০২৫
শেয়ারবাজারে নো ডিভিডেন্ড প্রতারণা
হৃদয় মিজান, ঢাকা টাইমস
২৮ অক্টোবর, ২০১৪ ১৯:০৩:৩৪
image


ঢাকা: পুঁজিবাজারে কারসাজির আরেক নাম ‘‘নো ডিভিডেন্ড’’ (কোনো লভ্যাংশ নয়)। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি মুনাফা না দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘‘নো ডিভিডেন্ড’’ ঘোষণা করে। ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আর এ প্রতারণা করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকরা। কোম্পানিগুলোর কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তারা এ সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্স, মোজাফ্ফর স্পিনিং, বিকন ফার্মা লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘‘নো ডিভিডেন্ট’’ ঘোষণা করে। এছাড়া  সোমবার মেঘনা কনডেন্স মিল্ক ও মেঘনা পিইটি বিনিয়োগকারিদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মঙ্গলবার ইমাম বটনস ও জুট স্পিনার্স কোম্পানি দুইটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। এর আগেও জুট স্পিনার্স কোনো লাভ্যাংশ দেয়নি। অনেক কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ট ঘোষণা করতে চায় না। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া। কোম্পানির উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমে ‘‘নো ডিভিডেন্ড’’ ঘোষণা করবে। পর পর তিন বার নো ডিভিডেন্ট ঘোষণার মাধ্যমে কোম্পানিটি চলে জেড ক্যাটাগরিতে। তার পর শেয়ারের দর কমতে থাকবে।

শেয়ারের দাম কমে আসলে পরিচালকরা কম দামের শেয়ারগুলো নামে বেনামে কিনে রাখবেন। একবছর বা দুইবছর পর শতভাগ ডিভিডেন্ট ঘোষণা করবে। তখন শেয়ারের দর বাড়তে থাকবে। আর এ সুযোগে পরিচালকদের হাতে থাকা কম দামের শেয়ারগুলো বিক্রি করে বিশাল অংকের মুনাফা তুলে নিবেন।

এসব খেলা বন্ধ করার জন্য আইপিও মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ট দেয়া বাধ্যতামূলক করার দাবি বিনিয়োগকারীদের। এর পাশাপাশি ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট এবং বাই ব্যাক আইন পাশ করার দাবি জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর- রশিদ চৌধুরী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএসইসি তাদের আইপিও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। আইপওতে আসার জন্য আবেদন করা কোম্পানিটি ভাল কি মন্দ সে বিষয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। একটা দুর্বল কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে আসার পর দেখা যায় তার লাভ কমে যাচ্ছে। শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। কোনো ডিভিডেন্ট দিতে পারে না। তখন কোম্পানিটি চলে যায় জেড ক্যাটাগরিতে। তখন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ নিয়ে পড়েন বিপাকে। এজন্য বিএসইসিকে দায়ী করেন তিনি। এসব গেম বন্ধ করতে দ্রুত ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট এবং বাই ব্যাক আইন পাশ করার দাবি জানান। তাহলে কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা বাড়বে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সুদ দিতে পারে তাহলে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ট দিতে পারবে।

এছাড়াও কোম্পানিগুলো বাজারে আসার আগে মুনাফা বেশি দেখিয়ে আইপিওতে আসে এবং মূলধন তুলে নেয়। বাজারে তালিকাভূক্তির পর দেখা যায় কোম্পানি লোকসানে আছে বা লোকসান হয়েছে। এই ইস্যুতে বিনিয়োগকারিদের জন্য নো ডিভিডেন্ট ঘোষণা করে। আর এটি বিনিয়োগকারিদের ঠকানোর সহজ পথ।

সাম্প্রতি সু-হ্নদ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জন্য নো ডিভিডেন্ট ঘোষণা করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা প্রথমে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে একবছর পর শতভাগ ডিভিডেন্ট ঘোষণা করবে। কোম্পানিগুলোর কোনো জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এ সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোনো ভূমিকা পালন করছে না বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আইন অনুযায়ী কোম্পানির কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়। কোম্পানির কি আছে না আছে সেটা দেখার কাজ বিএসইসি’র নয়। আর কোন কোম্পানি লভ্যাংশ দিল কি দিল না তা এসইসি দেখার বিষয় নয়। কোম্পানি লাভ করল কি করল না তা কোম্পানির ব্যাপার।

 (ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/আরএম/এমএম)