বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তিনি। প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ও ইসলামিক ডেভলাপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিএনপির চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে কাজ করছেন বিএনপির এই নেতা। সিলেটের এই কৃতি সন্তান জাতীয় রাজনীতিতে নিরলস ভূমিকা রাখছেন। ১৬ নভেম্বর ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে সিলেট সার্কিট হাউসে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম’র সাথে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন আমাদের সিলেট প্রতিনিধি সাইফুর তালুকদার।
ঢাকা টাইমস : বিএনপি দীর্ঘ দিন থেকে বলছে সরকার পতনের চূড়ান্ত অন্দোলন হবে। কিন্তু বার বার সময় নির্ধারণের পরও বিএনপি আন্দোলনে যাচ্ছেনা। আদৌ কি সরকার পতনের চূড়ান্ত কোন আন্দোলন হবে? যদি হয়ে থাকে তবে কবে হবে?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : দেখেন দিন তারিখ নির্ধারণ করে আন্দোলন হয়না। আন্দোলন মানে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা নয়। আন্দোলন হবে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে। সময় নির্ধারণ করে নয়, ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করতে হবে। আর এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার নিশ্চিত করা। এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। গত ৫ জানুয়ারি সংবিধানের দোহাই দিয়ে একটি নাটকের মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাইছে। আপনারা দেখেছেন ১৫৪টি আসনে নির্বাচনই হয়নি। এর মানে এই নয় যে, এসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোন লোক নেই। জনগন এসব আসনে নির্বাচন নামক নাটককে বয়কট করেছে। আর যেসব আসনে কথিত নির্বাচন হয়েছে সেখানে কারা প্রার্থী ছিল? হয়তো আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, নয়তো গৃহপালিত বিরোধীদল জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল। তাই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চূড়ান্ত আন্দোলন করতে হবে। এবং শীঘ্রই বেগম খালেদা জিয়া এই আন্দোলনের ডাক দেবেন।
ঢাকাটাইমস : নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম.ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার বিষয়টি দিন দিন চাপা পড়ে যাচ্ছে। দলও ভুলতে বসেছে এই নেতাকে। এই বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : ইলিয়াস আলী শুধু আমাদের দলেরই নেতা নন তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। একজন জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে হারিয়ে যেতে পারেনা। সরকারকেই ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই ইস্যুটি নিয়ে আন্দোলন করা অত্যান্ত জরুরি। এর প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।
ঢাকা টাইমস : বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করছে। কিন্তু সরকার এটাকে পাত্তা দিচ্ছেনা। সরকারের বক্তব্য হচ্ছে ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে। এবং তা হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধিনেই। এ অবস্থায় দেশে আদৌ কি কোন মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে? আপনার কি মনে হয়?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : অবশ্যই মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে হবে। জনগনের সাথে প্রবঞ্চনা করে দেশ চলতে পারেনা। জনগনকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে দেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ ৭ই নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবসেও সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার। সরকার বাকশালের দিকে এগুচ্ছে। তাই জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে। এই ক্ষোভের বিষ্ফোরণ অবশ্যই হবে। আর এ সময় মধ্যবর্তী নির্বাচন ছাড়া কোন পথ থাকবেনা।
ঢাকাটাইমস: জামায়াতের সিনিয়র সকল নেতা এখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। জামায়াতও যুদ্ধাপরাধীর দল হিসেব চিহৃত হয়েছে। বেশ কয়েকজন নেতাকে সাজাও দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু বিএনপি এই ইস্যুতে নিরব কেন? এমতাবস্থায় জামায়াতের সাথে জোট রাখা কি অপরিহার্য?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : বিএনপি পরিষ্কারভাবে বলেছে জামায়াতের সাথে বিএনপির নির্বাচনী সমঝোতা রয়েছে, আদর্শিকভাবে জামায়াতের সাথে বিএনপির কোন সমঝোতা নেই। আর নির্বাচনী সমঝোতা যে কারো সাথে থাকতে পারে। ’৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথেও জামায়াতের জোট ছিল। তাই দলগত ভাবে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে যা ঘটছে তা নিয়ে বিএনপি কোন মন্তব্য করবেনা। জোট হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বানের মাধ্যমে দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার জন্য। এই দাবিতে যারাই জোটে আসবে সবাইকে স্বাগত জানাবে বিএনপি। এখানে কোন দল মূখ্য বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে সবার লক্ষ্য এক হওয়া।
ঢাকা টাইমস : সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গৌছকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। এই মুহূর্তে মেয়ররা গ্রেপ্তার হলে দল কি করবে?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : এই চার্জশিটটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও হাস্যকর। কিবরিয়া সাহেবের মৃত্যু নিঃসন্দেহে অত্যান্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক মৃত্যু। কিন্তু এ মৃত্যুকে নিয়ে নোংড়া রাজনীতি করা হয়েছে। একজন সম্মানি মানুষের মৃত্যু নিয়ে এরকম রাজনীতি করা উচিৎ নয়। এখন দেশের বিচার ব্যাবস্থার উপর মানুষের আস্থা নেই। সরকারের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে সরকার টিকে থাকতে পারেনা। এসরকারও পারবেনা। তাই এই সরকারকে অচিরেই বিদায় নিতে হবে।
ঢাকা টাইমস : সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক চলছে। দলের একটি বড় অংশ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। দলের একজন ভাইস-চেয়ারম্যানও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : দেখেন কোন্দাল বা গ্রুপিং আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুবই অপছন্দ করি। এখন এসব বাদ দিয়ে দলের আদর্শিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দলের প্রতিটি কর্মীকে এক এক জন নেতার ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রত্যেকেই নেতা, কেউ কারো চেয়ে ছোট নয় এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ঢাকা টাইমস : সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদ নিয়ে দলের দুই নেতা সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও প্যানেল মেয়র (১) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। বিষয়টি সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে কিভাবে দেখছেন?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : সবগুলো গ্রুপিং ও কোন্দালই ক্ষতিকর। কোন্দল থাকলে জনগনের সমর্থন পাওয়া যাবেনা। তাই এখন এসব কোন্দল পরিহার করে দল ও দেশের স্বার্থে শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ঢাকা টাইমস : সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন, বর্তমানে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন না। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ তিনি সরকারি দলের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে খুশি করার কাজে ব্যস্ত। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। আর আমি এসব পছন্দ করিনা। যদি তিনি সরকারি দলের সাথে আতাত করে থাকেন তাহলে তিনি এই মামলার আসামি হলেন কেন। তবে অতীতে যে যাই করেছেন এখন সব কিছু পেছনে ফেলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই অবৈধ সরকার পতন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ঢাকা টাইমস : বিএনপির সাংগঠনিক পরিকল্পনা কি?
ইনাম আহমদ চৌধুরী : বর্তমানে বিএনপির দল গঠনে একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। ক্ষমতায় থাকলে দল গঠন করা সম্ভব হয় না। তাই এখন দলের দুর্দিনেই দলকে গোছাতে হবে। আর আদর্শ ও ত্যাগের ভিত্তিতে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। তবেই আন্দেলন সফল হবে।
ঢাকা টাইমস : দেশ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ইনাম আহমদ চৌধুরী : আমাদের প্রত্যেককে দেশপ্রেমিক হওয়া উচিৎ। দেশের প্রতি বিরক্তিভাব ত্যাগ করা উচিৎ। দেশপ্রেমকে জলাঞ্জলি দেয়া যাবেনা। দেশের স্বার্থ সবার উর্ধ্বে। তাই দলমত নির্বিশেষে একটি সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ঢাকা টাইমস : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ইনাম আহমদ চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ। আর সাথে সাথে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সকল পাঠককেও ধন্যবাদ।