মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র হবে এই স্লোগান তুলে ব্রিটিশ-ভারতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলনে নামে সে সময় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী দল মুসলিম লীগ। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার আগের দিন স্বাধীনতার স্বাদ পায় এই পাকিস্তান। কিন্তু কথিত ‘মুসলমানদের’ রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায় শুরু থেকেই নাগরিকদের সে ধারণা দিতে পারেননি রাজনৈতিক নেতারা। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে গণমানুষের ইচ্ছার কোনো প্রতিফলন কখনোই ঘটেনি রাষ্ট্রটিতে। বরং ষড়যন্ত্র, ধর্মান্ধতার পাশাপাশি অভিজাত শ্রেণির একাধিপত্যের কারণে রক্তপাত এই রাষ্ট্রের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনগণের রাষ্ট্র হওয়ার বদলে সাত দশকে পাকিস্তানের পরিচিতি হয়ে উঠেছে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হিসেবে। শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক জঙ্গি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা করতে গিয়ে গোটা দেশকেই এখন ফেলে দিয়েছে ঝুঁকিতে। শক্তি অর্জন করতে করতে এখন শাসক আর সেনাবাহিনীকে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে জঙ্গিরা। আর এই গোষ্ঠী কখন কার ওপর হামলা করে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই দেশটিতে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, একান্ত বাধ্য না হলে অন্য কোনো দেশ থেকে পাকিস্তানে যেতে চায় না মানুষ। হামলার আশঙ্কায় খেলতেও যেতে চায় না কোনো দেশ সেখানে।
পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা হয়েছে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর, শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তাদের ওপর, সেনাবাহিনীর অবস্থান বা ঘাঁটিতে, বিপণিবিতানে, বাজারে, খেলার মাঠে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। গুলি করে বোমা মেরে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে জঙ্গিরা। হিংস্রতা, নৃশংসতায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা কুড়ালেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই এই জঙ্গিদের। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে হামলা করে ব্রাশফায়ার করে ১৩২ শিশুসহ ১৪১ জনকে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গেছে গোটা বিশ্ব। বিশ্ববাসীর নিন্দা আর ঘৃণা প্রকাশের পর অনুশোচনার বদলে তালেবান জঙ্গিরা স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছে এ রকম হামলা আরও হবে বরং পরেরগুলো হবে আরও হৃদয়বিদারক। অর্থাৎ রক্তঝরা পাকিস্তানে রক্তের বন্যা অব্যাহতই রাখতে চায় তালেবান জঙ্গিরা।
যেভাবে বিপদ ডেকে আনল পাকিস্তান
তালেবানসহ যে জঙ্গিদের হামলায় এখন জর্জরিত পাকিস্তান তার জন্মই হয়েছে দেশটির রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদে। আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখা আর প্রতিবেশীদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্য নিয়ে জন্ম দেওয়া এই জঙ্গিরা যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে নিজেদেরই এভাবে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলবে তা ধারণাই করতে পারেনি দেশটির কর্তাব্যক্তিরা।
ঘটনাটি ১৯৯৪ সালের। ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে উদ্যোগী পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল পিপলস পার্টি। পাকিস্তান থেকে মধ্য এশিয়ায় পণ্য রপ্তানি শুরু করেছিল অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তান। আফগানিস্তানের চমন কান্দাহার হেরাত মাজার-ই শরীফ অঞ্চল দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলতে লাগল। বিপত্তি বাধলো ট্রাক কান্দাহারের কাছে পৌঁছলে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে আটক হয় পণ্যসহ ট্রাকবহর। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বেনজির সরকারের তখন গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সহায়তা নেওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা ছিল না।
পাকিস্তান সমর্থিত গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের বাহিনী তখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল না। যে কারণে পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফগানিস্তানে কর্মরত আইএসআই কর্নেল সুলতান ইমামের সাহায্য চায়। পরে আইএসআই কান্দাহারের এক মাদরাসার শিক্ষক, সাবেক মুজাহেদিন ও সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে এক চোখ হারানো মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে কান্দাহার মাদরাসার ছাত্রদের সহায়তায় পাকিস্তানি মাল বোঝাই বহর উদ্ধার করেন। পরে মোল্লা ওমর কান্দাহারের একটি মসজিদের রক্ষিত ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) একটি জামা (কথিত) হাতে নিয়ে তা দুলিয়ে স্থানীয় মাদরাসার ছাত্রদের পুরো কান্দাহারে অরাজকতা অবসানের লড়াইয়ে ডাক দেন।
ওই দিন সূর্যাস্তের আগেই কান্দাহারের গভর্নরকে ধর্ষণের অভিযোগে তারই বাহিনীর ট্যাংকের ব্যারেলে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে পুরো কান্দাহার দখল নেয় মাদরাসার ছাত্ররা। পরের কয়েকদিন এই সংবাদ জামায়াতে উলেমা-ই ইসলাম পরিচালিত পেশোয়ারের মাদরাসা ও শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে পৌঁছতে থাকলে সীমান্তের অপর পাড়ের জাতি ভাইদের সাফল্যে উল্লসিত কয়েক হাজার পশতুন বংশোদ্ভূত মাদরাসার ছাত্র সীমান্ত পার হয়ে কান্দাহারে মোল্লা ওমরের দলে যোগ দেয়। এর মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় জঙ্গিগোষ্ঠী ‘তালেবান’।
যুদ্ধবিগ্রহ আর অস্থিতিশীলতায় ক্লান্ত জনগণ তখন শান্তির আশায় তালেবানকে স্বাগত জানিয়েছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম আফগানিস্তান থেকে তাদের প্রভাব ক্রমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট বুরহানুদ্দিন রব্বানির সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী কাবুল দখল করে তালেবান।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রসহ কয়েকটি স্থানে ২০০১ সালের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগান তালেবান বিশ্ববাসীর নজরে আসে। কারণ দেশটির ক্ষমতা দখলকারী তালেবান গোষ্ঠী তখন আল-কায়েদার তৎকালীন প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল। আল-কায়েদার নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল আফগানিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা আল-কায়েদা আফগানিস্তানে বসেই চালিয়েছিল বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। এর জেরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ধারণা করা হয়, আফগান তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমরসহ অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। সেখানে পাকিস্তান তালেবানের সহযোগিতায় হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই অব্যাহত রাখে। তালেবানের পাকিস্তান শাখার নাম তেহরিক-ই-তালেবান বা টিটিপি। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত টিটিপির নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন গোষ্ঠীটির নেতা হাকিমুল্লাহ মেহসুদ।
জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করছে। তারা ধর্ষক ও খুনিদের প্রকাশ্য জনসমাবেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাসহ শরিয়া আইনে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। আফগানিস্তানে তালেবান শাসনে মুসলিম পুরুষদের দাঁড়ি রাখা এবং নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। টেলিভিশন দেখা, গান শোনা ও সিনেমা দেখা নিষিদ্ধ করেছিল তারা। এছাড়া ১০ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি তালেবান। জন্মের পর আফগান সীমান্ত ছাড়িয়ে তালেবান ঢুকে পড়ে পাকিস্তানে। ধীরে ধীরে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে উগ্রপন্থি সংগঠনটি।
জঙ্গি হামলা যেন নিয়তি
২০০৯ সালে পাকিস্তানের সোয়াত অঞ্চলে নারী শিক্ষার পক্ষে প্রচারণা চালানোর কারণে মালালা ইউসুফজাইকে মাথায় গুলি করে জঙ্গিরা। পাকিস্তানি তালেবান তখন এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল। মালালা ইউসুফজাই পরে এই আঘাত থেকে সেরে ওঠেন এবং তার সাহসিকতার জন্য ব্যাপক আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে শান্তির জন্য শাখারভ পুরস্কার দেয়।
গত ১২ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর গুলি চালানোর জন্য অভিযুক্ত দশ তালেবান জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকেও প্রাণ দিতে হয়েছে আততায়ীর হাতে। ওই হত্যার কোনো বিচার এখনও হয়নি। উল্টো মামলার প্রধান কৌঁসুলি চৌধুরী জুলফিকার আলি বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গত বছরের ৩ মে মামলার শুনানির জন্য আদালতে যাওয়ার পথে রাজধানী ইসলামাবাদে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পেছনে তালেবানের হাত রয়েছে বলে দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তালেবানদের হাতে এ পর্যন্ত কত সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। কিন্তু গত ১৬ ডিসেম্বরের মতো গণহত্যার নজির গত একদশকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে আসা খবর ঘেঁটে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে থেমে থেমে বড় ধরনের হামলাযজ্ঞ চালিয়েছে জঙ্গিরা। তাদের হামলায় পাকিস্তানের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে।
তালেবান সমর্থকরা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের উপজাতীয় অঞ্চলে ক্ষমতাসীন আফগান সরকার, ন্যাটো সেনাবাহিনী এবং ন্যাটো পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ২ নভেম্বর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের একমাত্র সীমান্ত ক্রসিং ওয়াগাহতে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়। তালেবানের দু’টি শাখা ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। একই বছরের ৮ জুন করাচি বিমানবন্দরে পুরোনো টার্মিনালে হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। সেনাবাহিনী তালেবানের বিরুদ্ধে অপারেশন চালালে সংঘর্ষে ১২ জঙ্গিসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়। এর আগে ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাবা খান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। ওই হামলায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ জঙ্গি, দুই পুলিশ সদস্য ও তিন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। বিমানবন্দর ১৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
একই বছরের ১৬ আগস্ট পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ বিমান ঘাঁটি মিনহাজেও হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক সেনাসদস্যসহ ৮ জঙ্গি নিহত হয়। তালেবান ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। ২০১১ সালের ২২ মে পিএনএস মেহরান ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে সেনাসদস্যসহ ১৭ জন নিহত হয়। ১৬ ঘণ্টার ওই আক্রমণে করাচি নৌঘাঁটির একাংশ ধ্বংস হয়ে যায়। তালেবান ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১১ সালের মে মাসে অ্যাবোটাবাদে মার্কিন হামলায় ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে ওই হামলা চালিয়েছে তারা। ২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টারে হামলা চালায় সামরিক পোশাক পরিহিত ১০ তালেবান জঙ্গি। এতে এক ব্রিগেডিয়ার ও লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ ৬ জন সেনাসদস্য নিহত হয়।
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘পাকিস্তানের জঙ্গিবাদ এমনভাবে বাসা বেঁধেছে যে, সহজে এর মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। এটা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তালেবানরা আফগানিস্তানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকেছে। তখন মানুষ তাদের গ্রহণ করেছে। কিন্তু যখন দেখেছে তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ ততদিনে আফগান সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে উগ্রবাদী সংগঠনটি।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয় আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে তারা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর ওই অপচেষ্টা আর ধোপে টেকেনি। তবে এখনও খুব বেশি চিন্তামুক্ত থাকার সুযোগ নেই। কারণ, বাংলাদেশকে ঘিরে কয়দিন আগে আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি যেভাবে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে জঙ্গিরা বসে নেই। মাঝেমধ্যে জঙ্গিরা বিপুল অস্ত্রশস্ত্রসহ ধরাও পড়ছে।’ এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপ দেখাল তালেবান
ইসলামি মূল্যবোধের ঝাণ্ডা উড়িয়ে বেড়ানো তালেবানের জন্মই শুরু হয়েছে হত্যার মধ্য দিয়ে। যে কারণে কখনই নির্বিচারে মানুষ খুন থেকে দূরে থাকতে পারেনি জঙ্গিরা। তালেবানদের দমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযান চালিয়েছিল আফগানিস্তানে। ওই যুদ্ধে অনেক নিরীহ আফগানকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তবুও তালেবান গোষ্ঠী পুরোপুরি দমে যায়নি। এখন প্রায়ই আফগানিস্তানে অতর্কিত হামলার খবর শোনা যায়। দেশটিতে এখন ক্ষমতায় আছে নির্বাচিত সরকার। আফগানিস্তানের গণ্ডি পেরিয়ে ঢুকে পড়া তালেবানদের কারণে পাকিস্তানের মানুষের জনজীবন বরাবরই আছে আতঙ্কে। কখন কোথায় জঙ্গি হামলা হবে কেউ বলতে পারে না। যেমনটি বলতে পারেনি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলের শিশুরাও। গত ১৬ ডিসেম্বর সকালে স্কুলটিতে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে তালেবান অস্ত্রধারীরা। এতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৪১ জন। তাদের মধ্যে শিশু ১৩২। বাকি ৯ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। আহতের সংখ্যা ১২৫। ওই ঘটনায় তালেবানরা প্রমাণ দিয়েছে তাদের রূপ কতটা ভয়ংকর হতে পারে। সামরিক বাহিনীর অভিযানে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা এই গণহত্যা চালিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। প্রয়োজনে এ ধরনের আরও ভয়াবহ হামলা চালানোরও হুমকি দিয়েছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি।
পাকিস্তানে স্কুলে গণহত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বিশ্বজুড়ে। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিজ দেশে নিরাপত্তা জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পাকিস্তানকে সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শিশুদের ওপর হামলায় ভেঙে পড়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী পাকিস্তানি নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সহায়তা দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পাকিস্তানের সব দলের নেতা ও সাধারণ জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানো উচিত। শিশুর নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শিক্ষা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’ নিরস্ত্র শিশুদের ওপর হামলাকে কাপুরুষোচিত উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এ হামলাকে বিয়োগান্তক উল্লেখ করে নিজ দেশে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। সমবয়সীদের ওপর চালানো নির্মম হামলায় ব্যথিত হয়েছে ভারতের শিশু শিক্ষার্থীরা। হামলার দিনই ছত্তিশগড়, গুজরাটসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে।
পেশোয়ারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
একক নিয়ন্ত্রণ নেই তালেবানে
তালেবান এককেন্দ্রিক কোনো সংগঠন নয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানজুড়ে থাকা এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি মূলত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ হয়ে আছে। একটি হচ্ছে কান্দাহার তালেবান বা আফগান তালেবান। হাক্কানি নেটওয়ার্ক বা হাক্কানি পরিবার পরিচালিত পাখতিয়া তালেবান এবং তেহরিক-ই তালেবান বা সালাফিবাদ প্রভাবিত পাকিস্তানি তালেবান। তালেবানরা নিজেদের সুন্নি মুসলিম ও দেওবন্দি বলে দাবি করে।
তালেবানের সঙ্গে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সরকারের শান্তির প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলে আসছে। সর্বশেষ, গত বছরের জুনে কাতারে কার্যালয় খুলেছিল আফগান তালেবান। তখন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় ওই কার্যালয় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে চরম অবিশ্বাসের কারণে সে আশা আর পূরণ হয়নি। পাকিস্তানেও তালেবান বেশ শক্তিশালী ও ব্যাপক সক্রিয়। তারা উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার হুমকি দিয়ে আসছে তারা। পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় নানা সময় বহু আত্মঘাতী ও অন্যান্য হামলা চালিয়েছে বলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
সামরিক গোয়েন্দাদের মদদে জঙ্গিদের শক্তি সঞ্চয়
আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরোধিতাকারী তালেবান ও হাক্কানিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস অব ইনটেলিজেন্স (আইএসআই)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালালে হাক্কানি তালেবানরা উত্তর ওয়াজিরিস্তানের আদিবাসী এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে বসে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর এই শহরটি বেশ কয়েকবার অভিবাসনের ধাক্কায় ৫০ গুণ বেড়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথম ধাক্কায় ভারত থেকে আট মিলিয়ন মুসলমান পাকিস্তানে আসে। এর মধ্যে দুই মিলিয়ন করাচিকে বেছে নেয়। দ্বিতীয় ধাক্কায় পশতু নির্মাণ শ্রমিকরা এই শহরে আসে, যারা মূলত এই বাণিজ্যিক শহরের নির্মাণকাজে অংশ নেয়। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর তৃতীয় ধাক্কায় আরও পশতু এই শহরে আসে। চতুর্থ দফায় আসে ২০০০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের সময়, সে সময় পশতুরা সীমান্তের উভয় পাশেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে আদিবাসী এলাকাগুলোতে ইসলামি চরমপন্থার সৃষ্টি হয়।
পাকিস্তান-আফগানিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদও এক সময় পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দাদের পছন্দের তালিকায় ছিল।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা চালানো লস্কর-ই তৈয়বাকেও অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ আছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এই জঙ্গিগোষ্ঠীটিও পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে এখন সেখানে হামলা শুরু করে দিয়েছে।
কেবল পাকিস্তান নয়, এই দেশ থেকে গিয়ে ভারতেও নানা সময় হামলা করেছে জঙ্গিরা। এ নিয়ে ভারত প্রমাণ সহকারে পাকিস্তানকে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও দেশটি কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তখন। সে সময় পাকিস্তান এ পথে না গেলে আজকের এই পরিণতি ভোগ করতে হতো না বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশেও নানা সময় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের প্রমাণ পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। তালেবান, লস্করে তৈয়বা, আইএসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা বাংলাদেশে এসেও প্রশিক্ষণ দিয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। আর বাংলাদেশ থেকেও জঙ্গিরা গিয়ে ভারতে হামলার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে।
এতদিনে বোধোদয় পাকিস্তান সরকারের!
পাকিস্তানভিত্তিক নানা জঙ্গি সংগঠনগুলো যখন প্রতিবেশী দেশগুলোতে তৎপরতা চালাচ্ছিল তখন সেগুলোর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। প্রতিবেশীদের বারবার অনুরোধ উপেক্ষা করে সব কিছু অস্বীকার করে গেছে তারা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও সম্পর্ক গড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীদের সঙ্গে। কিন্তু এর যে এই পরিণতি হবে তা বুঝতে পারেনি তারা। তবে পেশোয়ারে স্কুলে হামলা এবং আরও হামলার বিষয়ে তালেবানদের হুঁশিয়ারির পর নড়েচড়ে বসেছেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে নেতারা বের করার চেষ্টা করছেন জঙ্গি নির্মূলের উপায়। সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।
রাষ্ট্রীয় আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তালেবানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো তালেবানকেই ছাড় দেওয়া হবে না। অতিদ্রুত আমাদের সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে হবে।’
নওয়াজ শরিফের হুঁশিয়ারির একদিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার দেশটির খাইবার অঞ্চলে তিরাহ উপত্যকায় সেনাবাহিনী পরিচালিত বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫৭ জন জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো। সেনাবাহিনীর এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
জঙ্গি নির্মূল অভিযানে সাফল্য নেই
গত কয়েকমাস ধরেই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। জেনারেলরা অনেক সময়ই সফলতার কথা বলেছেন, কিন্তু তারা জঙ্গিদের একেবারে নির্মূল করতে পারেননি। অভিযানের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ সংশ্লিষ্ট এলাকা ছেড়ে গেছে। পাকিস্তানে তালেবানবিরোধী অভিযানের একাধিক কারণ রয়েছে। এই জঙ্গিগোষ্ঠীটির একসময় ইচ্ছা ছিল শুধু আফগানিস্তানের সরকার উৎখাত করা এবং কাবুলের আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করা। এক্ষেত্রে তারা ইসলামাবাদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর যখন পাকিস্তান তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন জঙ্গিদের একটা অংশ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়।
পক্ষে-বিপক্ষে যে হামলা ঘটে চলেছে তা থেকে মুক্তির কোনো সহজ সমাধান নেই। ন্যাটো সেনারা যেহেতু আর কয়দিনের মধ্যে আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে, তাই পাকিস্তানের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়া উচিত, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে থাকা হিন্দু কুশ পর্বতমালা এলাকায় যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শেষ হবে না। পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকার লোকেরা যতদিন না চাকরির সুযোগ পাচ্ছে এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটছে ততদিন তালেবান তাদের দলে নতুন লোক ভিড়ানোয় সফল হয়ে যাবে।
বিশ্বব্যাপী স্কুলে আরও যত রক্তপাত
বেসলানের স্কুলে জিম্মি : ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর চেচেনপন্থি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের একটি দল রাশিয়ার নর্থ ওসেটিয়ার বেসলান শহরের এক স্কুলের শিক্ষার্থীসহ ১ হাজার ২০০ জনকে জিম্মি করে। তিন দিনের মাথায় জিম্মিকারীদের সঙ্গে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে ৩৮৬ জন মারা যায়।
বাথ স্কুলে হামলা : ১৯২৭ সালের ১৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের মিশিগান কাউন্টির বাথ স্কুলে বোমা হামলায় ৪৫ জন নিহত হয়। আহত হয় ৫৮ জন। ওই স্কুলের বোর্ডের সাবেক সদস্য অ্যানড্রু কোহে তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটান।
ভার্জিনিয়াটেক হত্যাকাণ্ড : ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ব্ল্যাকবার্গে অবস্থিত ভার্জিনিয়া টেক ক্যাম্পাসে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক হামলায় ৩২ জন নিহত হয়। আহত হয় আরও অনেকে। সিউং হুই চো নামের এক ব্যক্তি ওই হামলা চালান। পরে তিনি আত্মহত্যা করেন।
স্যান্ডি হুক হত্যাকাণ্ড : যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্যান্ডি হুক প্রাথমিক বিদ্যালয়েগুলোতে ২০ শিক্ষার্থীসহ ২৬ জন নিহত হয়। অ্যাডাম ল্যানজা (২০) নামের এক তরুণ রাইফেল দিয়ে গুলি করে প্রথমে তার মাকে এবং পরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ২০ শিক্ষার্থীসহ ২৫ জনকে হত্যা করেন। পরে তিনিও আত্মহত্যা করেন।
মা’লট হত্যাকাণ্ড : ১৯৭৪ সালের ১৫ মে ইসরাইলের ‘স্বাধীনতা দিবসে’ গালিলি অঞ্চলের ম্যা’লটে ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (ডিএফএলপি) সদস্যরা হামলা চালিয়ে ২২ স্কুলছাত্রসহ ২৬ জনকে হত্যা করে।
ডানব্লেন হত্যাকাণ্ড : ১৯৯৬ সালের ১৩ মার্চ টমাস হ্যামিলটন নামের এক ব্যক্তি দুটি নাইন এমএম পিস্তল ও দুটি রিভলবার নিয়ে স্কটল্যান্ডের ছোট শহর ডানব্লেনে অবস্থিত ডানব্লেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে ১৬টি শিশু শিক্ষার্থী ও এক শিক্ষককে গুলি করে হত্যা করেন।
কলাম্বাইন স্কুল হত্যাকাণ্ড : ১৯৯৯ সালের ২০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের লিটলটন শহরের কলাম্বাইন হাইস্কুলে এক শিক্ষক ও ১২ শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করে দুই ছাত্র। পরে তারা আত্মহত্যা করে। ওই হামলায় ২৪ জন আহত হয়। (সাপ্তাহিক এই সময়ের সৌজন্যে)
(ঢাকাটাইমস/২২ডিসেম্বর/এফএইচ/এমএটি)