logo ১৮ এপ্রিল ২০২৫
খোলা মনে বসতে হবে, ছাড়ও দিতে হবে
১২ জানুয়ারি, ২০১৫ ১২:০০:০৩
image

৬৯ এর গণআন্দোলনের সময় ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য অনুষদ থেকে মাস্টার্স পাস করেন। ১৯৭৭ সালে বিদেশ থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জন্মলগ্ন থেকেই সম্পৃক্ত হন। এর পর সুজন সম্পাদক হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম সফলভাবেই পরিচালনা করছেন তিনি। দেশে বর্তমার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকাটাইমসটোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকার নিয়েছেন বিলকিছ ইরানী।


ঢাকাটাইমস: বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে করণীয় কী?


বদিউল আলম  মজুমদার: ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একতরফা ও বিতর্কিত। কারণ  নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল না। জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যদিও নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল যে তারা সংবিধান রক্ষার জন্য নির্বাচন করছে এবং নির্বাচনের পর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করবেন। কিন্তু নির্বাচনের পর তাদের বক্তব্য পাল্টে যায়। যে কারণেই দেশে আজ এই পরিস্থিতি। বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে না থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই চলমান সমস্যার সমাধান করতে হবে।


যেহেতু বিরোধী দল বলছে তারা সংলাপ চায়, সেহেতু তাদের খোলা মন নিয়ে বসতে হবে, ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল সংলাপ সফল হবে। আমরা আশা করি উভয় দলই তাদের আন্তরিকতা প্রদর্শন করবে।


ঢাকাটাইমস: দুই দলই অনড়,মাঝখানে বলির পাঠা সাধারণ জনগণ। এর দায়ভার কাদের?


বদিউল আলম মজুমদার: এর দায় অবশ্যই রাজনীতিবিদদের, তবে সরকারকেই এর দায় বেশি নিতে হবে। কারণ সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া।


ঢাকাটাইমস:হরতাল-অবরোধে দেশ কি পিছিয়ে যাচ্ছে না?


বদিউল আলম মজুমদার: অর্থনীতিতে বিনিয়োগ থাকতে হবে। মানুষের অর্খনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ থাকতে হবে। যানবাহন চলাচল নিরাপদ থাকতে হবে। হাইওয়েগুলো সচল থাকতে হবে।সবকিছুই যদি অচল হয়ে যায়, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন রকমের সহিংসতা যদি চলতে থাকে, তাহলে তো অর্থনীতি পঙ্গুত্বের দিকেই যাবে।


হরতালে তৈরি পোশাকশিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। উৎপাদন, রপ্তানি ব্যাহত হবে। এছাড়া আবাসিক খাতেও ব্যাপক ক্ষতির আশংকা আছে।


ঢাকাটাইমস: খালেদা জিয়ার ৭ দফা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?


বদিউল আলম মজুমদার: যুক্তিসঙ্গত আর অযৌক্তিক বলাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে, উনি একটা এজেন্ডা দিয়েছেন এবং এর ভিত্তিতে আলাপ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আর এই আলাপ-আলোচনাই গুরুত্বপূর্ণ। এটা উনার এজেন্ডা ও মতামত উনি দিয়েছেন। সরকারি দল তাদের এজেন্ডা ও মতামত ঠিক করুক। যত দ্রুত সংলাপ হবে ততই মঙ্গল।


ঢাকাটাইমস: খালেদা জিয়ার ৭ দফা দাবির মধ্যে ৫ টি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট। নির্বাচন কমিশন বলছে তার দাবি রাজনৈতিক। আপনি কী মনে করেন?


বদিউল আলম মজুমদার:নির্বাচন কমিশন অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু এখন হয়ত অনেক দেরি হয়ে গেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার দায়িত্ব তাদের। এটাও সত্যি যে রাজনীতিবিদরা যদি সমঝোতায় পৌঁছে তাহলে নির্বাচন কমিশন অনেক কিছুই করতে পারে। তবে বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য কমিশনই দায়ী।


ঢাকাটাইমস: সীমানা জটিলতা নিরসন না হওয়ায় ডিসিসি নির্বাচন অনিশ্চিত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


বদিউল আলম মজুমদার: অনেকেই বলছে এটা একটি খেলা। ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)নির্বাচনকে ভন্ডুল করা, নির্বাচন যাতে না হয় তাই এরকম খেলা খেলা হচ্ছে।  নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।এটা না করে আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করছি, অনৈতিক খেলায় লিপ্ত হচ্ছি। এর পরিণতি মঙ্গলজনক নয়।


ঢাকাটাইমস: দেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আপনার কী মনে হচ্ছে?


বদিউল আলম মজুমদার: আমরা একটি জটিল অবস্থার দিকে যাচ্ছি। রাজনীতিবীদরা বিশ্বাসযোগ্যতার তলানিতে পৌঁছে গেছে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই। এমনকি একে অপরের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর আক্রমণ করছে। এগুলো নি:সন্দেহে অশনি সংকেত। যেটা কোনভাবেই ইতিবাচক নয়।


ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।


বদিউল আলম মজুমদার: আপনাকেও ধন্যবাদ।