logo ০৬ মে ২০২৫
তিন বছরেও অজানা সাগর-রুনি হত্যারহস্য
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০৫:৪৮
image

ঢাকা: আজ বুধবার ১১ ফেব্রুয়ারি তিন বছর পূর্ণ হলো সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের। বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য তিন বছরেও রয়ে গেছে অজানা। কোটি টাকা খরচ করে তদন্ত সংস্থা পাল্টিয়েও উদঘাটন করা যায়নি এই হত্যার মোটিভ। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তেও ভাটা পড়েছে বারবার। এতে ক্ষুব্ধ সাগর-রুনির পরিবার এবং সাংবাদিকরা। এই হত্যার বিচার আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।


সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত করছে র‌্যাব। কিন্তু তদন্তে খুব একটা অগ্রগতি নেই। র‌্যাবের কাছে এখন পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডে পৃথক দুইটি ডিএনএ নমুনা ছাড়া কিছুই মিলেনি। র‌্যাব দাবি করেছে, ঘাতক যারাই হোক তাদের সঙ্গে ওই দুই ডিএনএ নমুনার মিল থাকবে। কিন্তু দেশের অপরাধী চক্রের ডিএনএ নমুনার ডাটাবেজ না থাকায় ওই দুই ডিএনএ নমুনা দিয়ে সন্দেহভাজন ঘাতকদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।


র‌্যাব এখন সাগরের ব্যবহৃত দুইটি ল্যাপটপের সন্ধান করছে। খুনের দিন তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ দুইটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। র‌্যাব ধারণা করছে, ঘাতকরা ওই দুইটি ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। র‌্যাব এই দুই ল্যাপটপ উদ্ধারের জন্য মাঠে কাজ করছে।


তদন্ত সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রতি মাসে একবার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত আদালতে ৩২টি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন দেয়া হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি। তবে প্রতিটি প্রতিবেদনের ভাষাই এক। তাতে রহস্য উদঘাটনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বলা হয়েছে।


এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ তিন বছর পার হয়ে গেলেও খুনিদের শনাক্ত করতে না পারায় ক্ষোভ আর হতাশা ব্যক্ত করেছেন পরিবারের সদস্যরা। মামলার বাদী ও নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, “তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তাদের কিছু জানানও না।”


সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে এখনও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন সাংবাদিকরা। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ডিআরইউ চত্বরে মানববন্ধন হবে। এ কর্মসূচিতে সাগর-রুনি পরিবারের সদস্য ও গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।


২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই বাসা থেকে পুলিশ তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে। ওই দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের ঘোষণা দেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়মিত ক্রাইম কনফারেন্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, 'তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিগগিরই এর রহস্য উন্মোচন করা হবে।'


আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের বছরের ২৬ এপ্রিল হত্যার ৭৫ দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টের মাধ্যমে র‌্যাব শনাক্ত করতে চেয়েছিল সাগর-রুনিকে হত্যার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি-না। তবে লাশ পচন ধরায় ওই প্রতিবেদনে এমন আলামত পাওয়া যায়নি।


থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) তদন্তে ব্যর্থতার পর আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র‌্যাব। ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দুই শতাধিক ব্যক্তিকে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাতজন বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন। তারা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাঈদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও এনামুল। তাদের প্রথম পাঁচজনই রাজধানীর মহাখালীতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নিতাই হত্যা মামলার আসামি। তাদের কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেননি।


(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/জেবি)