logo ০৬ মে ২০২৫
সাংবাদিকদের হতাশা, ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ১৯:১৬:৩৮
image

ঢাকা: তিন বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে অনেক সাংবাদিক খুন হয়েছেন। কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। বার বার সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদঘাটন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে সরকার। এখনও করছে। খুনিদের বিচার হতেই হবে। এর বিকল্প নেই। একইসঙ্গে ঘটনার মূল রহস্য খোলাসা করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন তারা।


বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) চত্বরে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা।


ডিআরইউ সভাপতি বলেন, “আগামী ১০ মার্চের মধ্যে এ খুনিদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা না হলে ১১ মার্চ প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। সেখান থেকে কঠোর ও লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।”


কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) আওয়ামী লীগপন্থী অংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, যুগ্ম মহাসচিব সাইফুল ইসলাম তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি আব্দুল হাই শিকদার ও আলতাফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান ও কুদ্দুস আফ্রাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিআরইউ সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, ক্র্যাব সভাপতি ইশারফ হোসেন ইসা, ডিইউজের একাংশের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক, ডিআরইউ সমবায় সমিতির সভাপতি মাহমুদুর রহমান খোকন, ডিআরইউর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন নোমানী প্রমুখ।


কর্মসূচির সঞ্চালক ছিলেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন।


মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে যে আন্তরিকতার অভাব ছিল তার প্রমাণ হলো এফআইআরে ভুল তথ্য থাকা। সেখানে বাসার নম্বরটি পর্যন্ত সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি।”


তিনি বলেন, “তদন্ত সংস্থাগুলো ব্যর্থ হলে প্রথম দায়িত্ব হলো ব্যর্থতার কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা। সেটির কোনো চিত্র আমরা দেখিনি। এ হত্যার বিচারের কথা আমাদের বারবার বলতে হবে। আমরা চুপ হয়ে গেলে যারা এ বিচার চায় না তারা জায়গাটি দখল করে নেবে।”


সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “সাগর-রুনি হত্যার আন্দোলন পৃথিবীতে নজির স্থাপন করেছে। হত্যার বিচারের দাবিতে মানুষ এভাবে আন্দোলন করে না। এমনটা কোথাও নেই।”


তিনি বলেন, “এ হত্যা যতটা রহস্যজনক তার চেয়ে বেশি রহস্যজনক এ হত্যার তদন্ত নিয়ে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড। এটি খুবই ঘৃণ্য।”


আবদুল হাই শিকদার বলেন, “স্বাধীনতার পর ২৫ সাংবাদিক হত্যা মামলার একটিরও তদন্তে অগ্রগতি হয়নি। সব ভেদাভেদ ভুলে সাংবাদিকরা এক হয়ে আন্দোলন করলে এসব ঘটনার বিচার হবে।”


আলতাফ মাহমুদ বলেন, “এমন যদি হয় দেশের বিচারব্যবস্থার চেহারা, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? খুনিরা জালের মধ্যে চলে এসেছে বলা হয়েছে, তাহলে কীভাবে জাল ছিঁড়ে কোথায় পালালো তারা? প্রশাসনের তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত, কেন তারা এসব কথা বলেছেন।”


শাহেদ চৌধুরী বলেন, “সাগর-রুনির এতিম সন্তান মেঘের দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এতদিনেও তিনি মেঘের দায়িত্ব নিয়েছেন, এমন খবর নেই। এ হত্যার বিচার না হলে, প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য অন্যান্য যা করেছেন সব অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে।”


সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, “র‌্যাব ৩২ বার সময় নিয়েছে। এখনো ঘটনার কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী `বেডরুম পাহারা দিতে পারবেন না’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটির পর তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নিরাশ হয়ে গেছেন।”


ওমর ফারুক বলেন, “তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কেউ হয়তো এ ঘটনায় জড়িত। এজন্য তাদের রক্ষা করতে এভাবে এ মামলার তদন্তে কালক্ষেপন করা হচ্ছে। যত প্রভাবশালী ব্যক্তি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকুক একদিন বের হবে।”


নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান বলেন, “বিচারের আশা আমরা ছেড়ে দিয়েছি। তবুও চেষ্টা করছি এখনো। আজও (বুধবার) মানবাধিকার কমিশনে মেঘকে নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি।”


২০১২ সালের ১১ মার্চ রাজধানীর রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। সাগর সারওয়ার মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক এবং তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি এটিএনের সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন।


(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এএ/জেবি)