ঢাকা: পৃথিবীর এই ব্যবস্থাপনা একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। ইসরাফিলের শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। কাগজের পৃষ্ঠার মতো সবকিছু ঠাস ঠাস করে খসে পড়বে। আকাশ ফেটে যাবে। আকাশের তারকারাজি খুলে খুলে পড়বে। সমুদ্রগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে। কবরে থাকা মানুষগুলোকে জীবিত করে তোলা হবে। এসব কিছু কিয়ামতের সময় সংঘটিত হবে।
কিয়ামত কখন হবে, তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। তবে কিয়ামত হওয়ার আগে কিছু কিছু আলামত বা চিহ্ন দেখা যাবে, যা দেখে বোঝা যাবে কিয়ামত অত্যাসন্ন। এসব আলামতকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটিকে বলা হয়েছে আলামতে সুগরা অপরটি আলামতে কোবরা।
কিয়ামত সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ জানেন না।
আল্লাহ তায়ালা নবীকে বলেন: হে নবী তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটবে। তুমি বলে দাও এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকেরই আছে। শুধু তিনিই যথাসময়ে উহা প্রকাশ করবেন;উহা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে। যা হঠাৎ করে আসবে।
একবার হযরত জিব্রাইল (আ.)নবী করিম (সা.) কে প্রশ্ন করেছিলেন কিয়ামত কখন হবে? উত্তরে নবী বলেছিলেন, এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারী অপেক্ষা বেশি অবগত নয়।(সহিহ বুখারি, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান)।
তবে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে কিছু আলামত পৃথিবীতে আসবে বলে হাদিসে জানা গেছে।
১ মহানবী (সা.) এর আগমন ও তার মৃত্যুবরণ কিয়ামতের ছোট আলামতগুলোর একটি। মহানবী (সা.)বলেন-আমি এবং কিয়ামত এক সঙ্গে প্রেরিত হয়েছি। একথা বলে নবী (সা.) হাতের শাহাদাত আঙ্গুল এবং মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন (সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: কিয়ামতের আলামত)।
মহানবী (সা.) সর্বশেষ নবী। তারপরে আর কোনো নবী আসবেন না। নবী (স.) এর দুনিয়াতে আগমনের অর্থ হলো দুনিয়ার বয়স শেষ হয়ে আসছে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী হয়ে আসছে। ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এটি অন্যতম আলামত।
২. ফকির মিসকিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাদকা ও যাকাতের টাকা নিয়ে খোঁজ করেও নেওয়ার মত কোনো লোক পাওয়া যাবেনা। নবী (সা.) বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবে না যতক্ষণ না মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। মানুষ যাকাতের মাল নিয়ে সংকটে পড়বে। যাকাতের মাল মানুষের কাছে পেশ করা হলে বলবে, আমার এগুলোর প্রয়োজন নেই। (সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল যাকাত)। কিয়ামতের এই আলামতটি একাধিক সময়ে প্রকাশিত হবে। উমার ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে তা প্রকাশিত হয়েছিল।
ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান বলেন, উমার ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে লোকেরা প্রচুর সম্পদ নিয়ে আমাদের কাছে আগমন করতো। তারা আমাদের বলতঃ তোমরা যেখানে প্রয়োজন মনে কর সেখানে এগুলো বিতরণ করে দাও। গ্রহণ করার লোক না পাওয়া যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে কেউ মাল গ্রহণ করতে রাজী হতনা। পরিশেষে মাল ফেরত নিতে বাধ্য হত। মোটকথা তার শাসনামলে যাকাত নেয়ার মত লোক ছিলনা। (ফাতহুল বারী, ১৩/৮৩)।
কিয়ামতের এই আলামতটি ইমাম মাহদীর আমলে পুনরায় প্রকাশিত হবে।
৩. হেজাজ থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবে। নবী (সা.) থেকে সহিহ হাদিস এ বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের পূর্বে হেজাজের (আরব উপদ্বীপের) জমিন থেকে একটি বড় আগুন বের হবে। এই আগুনের আলোতে সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানের উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে।
নবী (সা.) বলেন, হেজাজের ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবেনা। উক্ত অগ্নির আলোতে বুসরায় অবস্থানরত উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হবে। (বুখারি, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)।
৪. কিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের মাঝে সুদ গ্রহণ করা এবং সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।নবী (সা.)বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ কামাই করার ব্যাপারে হালাল-হারামের বিবেচনা করা হবেনা। (তাবারানী)।
এছাড়া কিয়ামতের আরও অনেক আলামত রয়েছে। সেগুলো হলো:
৫. চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়া।
৬. কোনো কারণে হাজার হাজার মুসলিমের মৃত্যু (উমার (রা.) এর সময় আমওয়াস এর প্লেগকে ধারণা করা হয়)।
৭. মদিনায় একটি বড় যুদ্ধ (ইয়াজিদের খিলাফতের সময় ৬৩ হিজরিতে আল হাররাজের যুদ্ধকে ধারণা করা হয়)।
৮. মুসলিমদের জেরুজালেম জয়।
৯. মুসলিমদের দুই পক্ষের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ।
১০. মুসলিমদের সঙ্গে লাল গাত্রবর্নের ছোট চোখওয়ালা, চুলের সেন্ডেল পরা জাতির যুদ্ধ (মঙ্গোলদের ইসলামিক রাজ্যে আক্রমণকে ধারণা করা হয়)।
১১. মুসলিম ও অমুসলিম হলদে গাত্রবর্নের জাতিদের মধ্যে শান্তিচুক্তি (মঙ্গল, চাইনিজ ইত্যাদি )
১২. ৩০ জন ভণ্ড নবীর আবির্ভাব হবে (যাদের আগমন চলছে)।
১৩. উলঙ্গ, দুঃস্থ, খালি পায়ের মেষ পালক উঁচু দালান বানানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
১৪. দাসী তার মালিকের জন্ম দেবে।
১৫. আরবের প্রতি ঘরে একটি ফিতনাহ প্রবেশ করবে।
১৬. জ্ঞানের গভীরতা নিয়ে নেয়া হবে এবং অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে।
১৭. মদ্যপান হালাল মনে করবে।
১৮. অবৈধ যৌনাচার বিস্তার লাভ করবে।
১৯. ভূমিকম্প বেড়ে যাবে।
২০. সময় অনেক দ্রুত যাবে।
২১. দুঃখ কষ্ট বেড়ে যাবে।
২২. রক্তপাত বেড়ে যাবে।
২৩. কেউ কোনো কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় ভাববে যদি সে তার পূর্বের মানুষের জায়গায় থাকতো।
২৪. মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যাবে; যারা নেতৃত্বের যোগ্য না তারা নেতৃত্ব পাবে।
২৫. মানুষ নামাজের জন্য একত্রিত হবে কিন্তু কোন ইমাম পাবে না।
২৬. গান বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাবে।
২৭. মসজিদ নিয়ে লোকেরা গর্ব করবে। লোকেরা মসজিদগুলো সুন্দর করার প্রতিযোগিতায় নামবে।
২৮. মুসলমানরা শিরকে লিপ্ত হবে।
২৯. ঘন ঘন বাজার হবে।
৩০. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে।
৩১. লোকেরা কালো রং দিয়ে চুল-দাড়ি রাঙ্গাবে।
৩২. ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে।
৩৩. মহিলাদের জন্য এমন পোশাক আবিষ্কার হবে যা পরিধান করার পরও মহিলাদেরকে উলঙ্গ মনে হবে।
৩৫. সুন্নাতী আমল সম্পর্কে গাফিলতি করবে।
৩৬. নতুন মাসের চাঁদ উঠার সময় বড় হয়ে উদিত হবে।
৩৭. মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবে।
৩৮. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবে।
৩৯. হঠাৎ মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
৪০. ভূমি ধস ও চেহারা বিকৃতির শাস্তি দেখা দেবে।
৪১. জড় পদার্থ এবং হিংস্র পশু মানুষের সঙ্গে কথা বলবে।
৪২. প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ফসল হবে না।
৪৩. পুরুষের সংখ্যা কমতে থাকবে, নারীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
৪৪. ইউফ্রেতিসে সোনা আবিষ্কার হবে, সেই সোনা লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ হবে আর তাতে অনেকে মারা যাবে।
৪৫. মুসলিমরা রোম জয় করবে।
৪৬. ইমাম মাহদী আসবে।
৪৭. দাজ্জাল বা অ্যান্টিক্রিস্ট আসবে, তার ধোঁকাবাজির সকল উপাদান নিয়ে বিশাল বিজয় পাবে। ইরানের ৭০০০০ হাজার ইহুদী তার অনুসারী হবে।
৪৮. ঈসা (আ.) দামেস্কে নেমে আসবেন এবং মাহদী এর পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বেন
৪৯. ইমাম মাহদী এর নেতৃত্বে মুসলিম (যেসব ইহুদী ও খ্রিস্টান যীশু (আ.) ফিরে আসার পর তার উপর সত্যিকারের বিশ্বাস আনবে তারাও এর অন্তর্ভুক্ত) ও ইহুদি ও অন্যান্য অমুসলিমদের বড় একটি যুদ্ধ হবে।
৫০. ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন লুদ এর প্রবেশ পথে বর্তমানে এটি ইসরাইলের একটি এয়ারপোর্ট ও মেজর মিলিটারি বেস)।
৫১. ঈসা (আ) ক্রশ ভেঙে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন। মিথ্যা খ্রিস্ট ধর্মের পতন ঘটাবেন।
৫২. ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব হবে।
৫৩. ঈসা (আ.) এর বাকি সময় অসাধারণ শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে।
৫৪. সমাজ আবার খারাপের দিকে যাওয়া শুরু করবে।
৫৫. বশরার অধিবাসীরা হিজাজের ভয়ংকর আগুন দেখতে পাবে।
৫৬. ধোঁয়া, যা পূর্ব থেতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত এক নাগাড়ে চল্লিশ দিন বিস্তৃত থাকবে।
৫৭. সূর্য পশ্চিম দিকে উঠবে।
৫৮. দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাব হবে মুসা (আ.) এর লাঠি এবং সোলায়মান (আ.) এ আংটি নিয়ে, সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, এবং ঈমানদার ও কাফেরদের চিহ্নিত করবে।
৫৯. একটি বাতাস এসে সকল বিশ্বাসীদের আত্মা নিয়ে যাবে।
৬০. পৃথিবীতে ‘আল্লাহ সেরা’ বা ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভু নেই’ বলার মত কেউ থাকবে না।
৬১. কিয়ামতের সবচেয়ে প্রধান আলামত হিসেবে ঠিক আগের দিন ইয়েমেন থেকে একটা আগুনের আবির্ভাব হবে আর মানুষদের তাদের মিলিত হবার স্থানে একত্রিত করবে।
৬২. ইস্রাফিল (আ.) এর শিঙ্গা বাজানো যার ফলে সবাই মারা যাবে।
(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/এমআর/জেবি)