logo ০১ মে ২০২৫
নির্ভীক সাংবাদিক মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০১ জুন, ২০১৫ ০০:৩৬:১৮
image

ঢাকা: গণমুখী সাংবাদিকতার পথিকৃত্ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৯ সালের এই দিনে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ক্ষণজন্মা এই সাংবাদিক।


বাংলাদেশে সাংবাদিকতার জগতে মানিক মিয়া এক প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। বাংলাদেশে (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) তাঁর হাত ধরেই সাংবাদিকতা এক নতুন মোড় নিয়েছিল। তথাকথিত নিরপেক্ষতা নাকি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিই সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য– এই বাস্তবতায় তিনি তথাকথিত নিরপেক্ষতার বদলে মানুষের মুক্তির পক্ষেই নিজেকে, সাংবাদিকতাকে নিয়োজিত করেছিলেন। কোন মতবাদ প্রচারণা নয় সাংবাদিকতার একমাত্র ও প্রধান লক্ষ্য যে গণমানুষের মুক্তির জন্য নিয়োজিত থাকা, ন্যায়ের প্রশ্নে অবিচল থাকা– এই কথা তিনি সারাজীবনের কাজ দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করে জীবনব্যাপী তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।


দৈনিক ইত্তেফাকের অঙ্গসজ্জায় আজ আমূল পরিবর্তন এসেছে, হয়ে উঠেছে আধুনিক। সাধু ভাষার বদলে চলিত ভাষাকে গ্রহণ করা হয়েছে সময়ের দাবি মেটাতে। কিন্তু সম্পাদকীয় নীতি আজো মানিক মিয়ার প্রদর্শিত পথেই পরিচালিত হচ্ছে। গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন এবং বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে ইত্তেফাকের অবস্থান প্রতিষ্ঠার পর থেকে একই রয়েছে।


নীতির প্রশ্নে, বাংলার মানুষের অধিকারের বিষয়ে মানিক মিয়া কখনো আপস করেননি। দৈনিক ইত্তেফাক ছিল তাঁর সেই সংগ্রামী জীবনের প্রধান হাতিয়ার। দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, প্রবাদপ্রতিম এই ব্যক্তিত্ব দেশের সাংবাদিকতাকে একটানে বদলে দিয়েছিলেন। মানুষের প্রত্যাশা, বেদনাকে জোরালোভাবে তুলে ধরার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তাঁর।


শুধু সাংবাদিক কিংবা রাজনীতির পথ প্রদর্শকই নন, মানুষ হিসাবেই তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার সংস্পর্শে যিনি একবার এসেছেন তিনি তাঁর সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তেমনি তাঁর সহানুভূতিশীল হূদয় ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ আজো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘আমার মানিক ভাই’ শিরোনামে এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘... আমার ব্যক্তিগত জীবনে মানিক ভাই’র প্রভাব যে কত গভীর, তা ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়। ১৯৪৩ সাল থেকে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। সে পরিচয়ের পর থেকে সারাটা জীবন আমরা দু’ভাই একসাথে জনগণের অধিকার অর্জনের সংগ্রাম করেছি। ... একটা বিষয়ে আমরা উভয়ই একমত ছিলাম এবং তা হল, বাংলার  স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ভিন্ন বাঙালির মুক্তি নেই, এ বিষয়ে আমাদের মাঝে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ ছিল না। আর ছিল না বলেই নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও দু’জন দু’ফ্রন্টে থেকে কাজ করেছি। আমি কাজ করেছি মাঠে-ময়দানে আর মানিক ভাই তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর সাহায্যে।’


তিনি যেমন বাংলা সাংবাদিকতা জগতে পথ প্রদর্শক, তেমনই রাজনীতিতেও। রাজনৈতিক জগতে তিনি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য। ঘনিষ্ঠ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল মানিক মিয়ার।


মানিক মিয়া প্রচলিত অর্থে শুধুমাত্র একজন সাংবাদিক ছিলেন না। বরং সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের মুক্তির পথ রচনার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর আপসহীন মনোভাবের কারণে প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানি শাসকরা বারবার তাঁর কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের ওপর বারবার নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে দৈনিক ইত্তেফাক এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে আপসহীনভাবে তিনি সত্য প্রকাশ করেছেন। একসময়ে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের সামরিক শাসক দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। সে সময়ে সরকারের সঙ্গে আপস করলে তিনি ইত্তেফাক প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি এবং তাঁর চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাংবাদিক শ্রেণী জনমানুষের সংবাদপত্রের প্রতি যে বিশ্বাস তাঁর সঙ্গে আপস করেননি। তিন বছর পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ রেখেছিলেন। সামরিক জান্তা ও স্বৈরাচারী শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নির্ভীক সাংবাদিকতার যে উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।


(ঢাকাটাইমস/১মে/এমএম)